কলকাতা: রুপোলি পর্দা থেকে বেরিয়ে বিনোদন এখন বন্দি মোবাইল বা ল্যাপটপে। করোনা আবহে বন্ধ রাজ্য সহ গোটা দেশের সমস্ত সিনেমাহল। মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে একাধিক ছবির। বড় পর্দায় রঙিন হয়ে ওঠার অপেক্ষায় সাদা-কালো ছবি 'অভিযাত্রিক' ও। কিন্তু কবে অপুর বেশে অর্জুন চক্রবর্তীকে দেখতে পাবেন দর্শকরা? উত্তরটা জানেন না খোদ অর্জুনও।


এই প্রথম বাবার (সব্যসাচী চক্রবর্তী) সঙ্গে বড় পর্দায় কাজ, শুরু থেকেই উচ্ছ্বসিত ছিলেন অর্জুন। এবিপি লাইভকে বললেন, 'এই ছবিতে একটা অদ্ভুত জিনিস হয়েছে। বাবা আমার বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এটা সচরাচর হয় না। বাবা যদিও অনেক আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন এই ছবিটার সঙ্গে। আমার কাছে অপুর চরিত্রের অফারটা অনেক পরে অফার আসে। সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যাই। বাবার সঙ্গে বড় পর্দায় কাজ করা আমার কাছে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতই।'


অর্জুন থেকে অপু হয়ে ওঠার প্রস্তুতিটা কেমন ছিল? অর্জুন বলছেন, 'আমরা প্রচুর ওয়ার্কশপ করেছিলাম। চরিত্রটার সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে সেটা বেশ কাজে লেগেছিল। আর লুক বদলে ফেলেছিলাম। সত্যজিৎ রায় আর অপুর কিংবদন্তিকে বয়ে নিয়ে যাওয়া নেহাত সহজ কাজ নয়। তার ওপর এটা একটা পিরিওডিক্যাল ফিল্ম। কথাবার্তা, চালচলন সবই পুরনো দিনের মত। আমার লুক বদলে ফেলতে হয়েছিল। তবে শুভ্রজিৎদা (শুভ্রজিৎ মিত্র) চেয়েছিলেন আমি অভিনয়টা নিজের মত করি, সৌমিত্রজ্যেঠুর নকল নয়। সেভাবেই চেষ্টা করেছি। যখন সেটে যেতাম, ওই মেক আপ, পোশাক সব মিলিয়ে একটা পরিবেশ তৈরি হত। মনে হত ওই সময়ই পৌঁছে গিয়েছি।'


অপু অর্জুন, আর অপর্ণা? দিতিপ্রিয়া রায়। অর্জুন বলছেন, 'দিতিপ্রিয়া বয়সে অনেকটা ছোট হলেও অভিনয়ের জগতে বেশ অভিজ্ঞ। খুব ভালো কাজ করেছে ও। সেইসঙ্গে অবশ্যই ছোট্ট আয়ুষ্মানের নাম বলতে হয়। কাজল হিসাবে ওকেও দারুণ মানিয়েছিল।'


'অভিযাত্রিক' ছবির সেটে একাধিকবার পরিকল্পনা হয়েছে ছবিটা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে দেখানোর। অর্জুন বলছেন, 'ছবিটা তৈরি হয়ে পড়েছিল এমনটা নয়। যখন কাজ চলছে সেই সময়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন সৌমিত্রজ্যেঠু। পরিকল্পনা ছিল ছবিটি তৈরি শেষ হলেই ওনাকে দেখাব। একবার কথা হয়েছিল আমরা কয়েকজন মিলে একটা আলাদাভাবে স্ক্রিনিং করব কেবল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্যই। উনি যদি একবার দেখে বলতেন, বেশ ভালো হয়েছে, সেটাই অনেক বড় পাওয়া হত। এই আফশোসটা থেকে যাবে চিরকাল।'


ছেলের সঙ্গে প্রথমবার বড় পর্দার কাজ নিয়ে আগ্রহী সব্যসাচীও। তবে ছবির মুক্তি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে নারাজ তিনি। বললেন, 'বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি যথেষ্ট খারাপ। আমি ও আমার স্ত্রী সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেছি। শ্যুটিং বন্ধ রয়েছে আপাতত। এই অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে অভিযাত্রিকের মত ছবির মুক্তি অপ্রয়োজনীয়। এটা একেবারে অন্য ধরনের একটা কাজ।'


একই সুর অর্জুনের গলাতেও। বললেন. 'এর আগে ছবিটা ১৮টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে। সেখানে দর্শকদের থেকে প্রশংসাও পেয়েছি। হাউজফুল ছিল শো-গুলিও। তবে সর্বসাধারণের জন্য সিনেমাহলে অভিযাত্রিক কবে মুক্তি পাবে জানি না। পরিস্থিতির কারনে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বন্ধ। আগে সবাই ভ্যাকসিন পাক, সুস্থ হোক। সেটাই সবচেয়ে জরুরি। আর, অভিযাত্রিক দর্শকদের অপেক্ষায় থাকবে।'