তোর্ষা ভট্টাচার্য্য়, কলকাতা: 'বউ হারালে বউ পাওয়া যায়, মা হারালে মা পাওয়া যায় না...'। এই সংলাপ মনে করলেই বাংলায় যে অভিনেতার কথা মনে পড়ে, তিনি চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী (Chiranjeet)। বর্ষীয়ান এই অভিনেতাকে যদি কেবল রুপোলি পর্দা আর রাজনীতির গন্ডিতে বেঁধে ফেলা যায়, তাহলে বোধহয় সবটা চেনা হয়ে ওঠে না তাঁর ব্যক্তিত্বকে। চিরঞ্জিতের উল্টোপিঠে রয়েছেন দীপক। যাঁর ব্যক্তিত্বে জড়িয়ে রয়েছে চিত্রশিল্প, স্থাপত্য, বিজ্ঞান টলিউড নিয়ে আবেক, অনুভূতি আরও কত কী... এবিপি লাইভ শুনল, দীপকের মনের কথা।
বর্তমানে টলিউডে গল্প বলার ধারা বদলেছে, আঙ্গিক বদলেছে। সবটাই সামনে থেকে দেখেছেন চিরঞ্জিৎ। এই পরিবর্তন নিয়ে তাঁর কী মত? চিরঞ্জিৎ বলছেন, 'এখন আর কমার্শিয়াল ছবি হচ্ছে না। হলে মানুষ তা দেখতেন। একসময় সাড়ে সাতশো হাউজ় ছিল, সিনেমাহল.. সেটা বন্ধ হতে হতে ৪০টা হয়ে গিয়েছে। মানুষ দেখলে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। এর অর্থ, আমরা এমন কিছু জিনিস সেইসব দোকানে দিয়েছি, যা ওদের জিনিস নয়। কেউ কেনেনি। প্রায় বছর ২০ এই পরিস্থিতি গিয়েছে। তার আগে কমার্শিয়াল ছবি হত। আমার বেশ কিছু ছবি ভীষণ চলেছে তবে সেগুলো সব বদনামের ছবি। 'বেদের মেয়ে জোৎস্না' বদনাম কুড়িয়েছিল অথচ সেই ছবিটাই এত হিট! ১টাকা ৪৫ পয়সা টিকিটের সময় ওই ছবি ১১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল।'
'বেদের মেয়ে জোৎস্না' কতটা বদলে দিয়েছিল চিরঞ্জিৎকে? অভিনেতা বলছেন, 'ওই ছবিটা আমায় সুপারস্টার করে দিল। প্রচুর কাজ পেলাম। তবে আমি আরও ভাল ছবি করতে চাইছিলাম। সেই জন্যই মানিকদার সঙ্গে কাজ করতাম। তবে সেই সময়ে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচানোর দায়িত্বটা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ল। সেই কাজটাকেও অবশ্য উপভোগ করেছি আমি। 'বেদের মেয়ে জোৎস্না'-র সংলাপ বললে মানুষ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়তেন আবার 'বাড়িওয়ালি'-র সংলাপ বললে কেউ বুঝতেই পারতেন না। তারা আসলে জানেনই না ওটা কোনও সিনেমা। শহরে 'চতুষ্কোণ' হিট করল, কিন্তু মফঃস্বলে এই ছবির নামটাই কেউ শুনল না। তবে বর্তমানে আবার মফঃস্বলের জন্য ছবি হচ্ছে। একসময়ে অঞ্জন চৌধুরী, স্বপন সাহাকে নর্দমান কীট বলা হত, আমাকে জঘন্য অভিনেতা বলা হত... সেই জায়গাটা বর্তমানে বদলেছে। তার কারণ ক্রমাগত ছবি ফ্লপ হয়েছে একটা সময়ে। মুম্বইতে অভিনেতা অভিনেত্রীদের Remuneration বেড়েছে, কিন্তু এখানে সেই ব্যবসা কই! তবে এর কারণটা ভীষণ গোলমেলে। সিনেমা হল থেকে টাকা আর আসে না। একটা সময়ে বাংলা ছবির মান উন্নত করতে গিয়ে বলা হল, বাংলা ছবির দর্শক বদলে গিয়েছে। বলে যে স্বাদের ছবিগুলো তৈরি করা হল.. সেগুলো একেবারেই চলল না। একটা সময়ে শুধু দর্শককে ভুল ভেবে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। গদর ২, পাঠান, জওয়ান প্রমাণ করল, ২০ বছর আগে দর্শক যেমন ছবি পছন্দ করতেন, এখনও তেমনই করেন। এখন ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, মিঠুনের মতো শিল্পীকে ফিরিয়ে আনার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর কারণ, দর্শকের কাছে এখনও এঁদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এর পরে খুব ভাল ছবি হলেও অভিনেতা অভিনেত্রীদের ততটা ভালভাবে দর্শক চিনছেন না।'
দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার: