কলকাতা: 'চিন্তা তো হচ্ছেই, আশঙ্কাও হচ্ছে। তাও... ভয়কে প্রশ্রয় দিলে কোনওদিনই কাজে এগোতে পারব না।'


এবিপি আনন্দ-র সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানালেন অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। সম্প্রতি ভারতে করোনার প্রতিষেধকের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়ে এইমসে আবেদন করেছেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।

তাঁর ইচ্ছের কথা ফেসবুকে প্রকাশ করেছিলেন মাতৃদিবসে, কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই। মনে মনে ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়। ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হওয়া যতটা গর্বের, ততটাই ঝুঁকির। সেই কথা বলে পাছে কেউ তাঁর মনোবল নড়িয়ে দেয়, এই ভেবেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আলোচনা করেননি চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। একটি আর্টিকল পড়ে একেবারে ই-মেল করে ফেলেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে।

করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হোক তাঁর শরীরে, এমনটাই ইচ্ছে চূর্ণীর। যদিও এখন সংস্থার তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি।

-এইরকম একটা আবেদন করে ফেললেন। আগে ফ্যামিলি ফিজিশিয়নের পরামর্শ নিয়েছিলেন?

না। এখনও না। এমনিতে শরীরে বড়সড় কোনও অসুখ নেই বলেই জানি। যে বয়স সীমার কথা বলা হয়েছে, অর্থাৎ ১৮ থেকে ৫৫ , তার মধ্যেই আমার বয়স। তাই দেশের প্রথম সারির চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা রেখেই আবেদনটা করে ফেললাম। আবেদন গ্রহণ করলে ওরা নিশ্চয়ই যাবতীয় পরীক্ষা করেই নেবে।

-ভয় করল না?

এমনটা নয় যে, আমার ভয় করেনি। চিন্তা নিশ্চয়ই আছে। একটা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ মানে, এর ভালো-মন্দ দুই দিকই হতে পারে। কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। এখন হয়ত কিছু হল না, পরে তো হতেই পারে। তাই যদি আমাকে প্রতিষেধকটি দেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘদিনই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তা থেকেই যাবে। তাও কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে।

-এমন ভাবনা এল কীভাবে?

মনে আছে, তখন করোনার দাপট বাড়তে শুরু করেছে। লকডাউন ঘোষণা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম। কৌশিক বলল, শুটিং শুরু হতে হতে আরও ১-২ মাস লেগে যাবে। আমি বলেছিলাম, না এই সমস্যাটা এত সহজে মেটার নয়। ভারতের যা জনঘনত্ব, তাতে একবার করোনার প্রকোপ বাড়লে তা রুখে দেওয়া সম্ভবই হবে না। ভ্যাকসিনই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান। তারপর অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন ট্রায়াল শুরু করল যখন, তখন একজন মহিলার অভিজ্ঞতার কথা পড়ে ছিলাম। তখনই মনে হয়, আমিও তো এইটুকু করতেই পারি। এত ডাক্তার, নার্স সারাদিন বিপদ ভুলে লড়াই করছে, তাহলে আমি নই কেন।

- পরিবারের লোকেরা কী বলছেন?

উজান আমার এই উদ্যোগকে ফেসবুকে সাধুবাদ জানালেও, মন থেকে শঙ্কা মুক্ত নয়। তারপর ওকে বুঝিয়ে বলার পর ও বলল, আমিও তাহলে ভলান্টিয়ার হতে চাই। আমি বলেছি, একই পরিবারের সবাই মিলে তো এই ঝুঁকিটা নেওয়া ঠিক হবে না। আর হঠকারি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া কাজের কথা নয়। তার থেকে এটাই মনে করো, আমি এই পরিবারের তরফে এবং বাংলার চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে না হয়, এই কাজটা করছি, ধরে নাও।
তাছাড়া আমি যে মা হয়েছি, এই রকম একটা পৃথিবী সন্তানকে দিয়ে যাব বলে তো নয়! তাই একটা দায়িত্ব তো থেকেই যায়।

-করোনা পরিস্থিতিতে ছবির কাজের কী অবস্থা?

কৌশিক বা উজানের কোনও শ্যুটিং চলছিল না, কিন্তু আমার ডাবিং বাকি ছিল। এখন তো সম্ভব নয়। ওই একই মাইক্রোফোন বা ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার করতে তবে একাধিক লোককে। সেটা এই মুহূর্তে তো সম্ভব নয়। কিন্তু গোটা ইন্ডাস্ট্রিটা মারাত্মক অসুবিধেয় পড়েছে। কারণ সিনেমার শ্যুটিংয়ে মাস্ক বা সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং অক্ষরে অক্ষরে পালন করা খুবই কঠিন।

-ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুরা কী বললেন ?

সেভাবে কেউ কোনও মন্তব্য করেননি। ফোন করেছিলেন দুই একজন। তবে সেভাবে কেউ উৎসাহব্যাঞ্জক বা নেতিবাচক কথা বলেননি। বোধ হয় দ্বিধা থেকেই ফোন করতে পারছেন না। কারণ ভ্যাকসিনে ভলান্টিয়ার হওয়ার ঝুঁকির বিষয়টি তো সকলেই জানেন।