কলকাতা: টেলিভিশনের পর্দায় তিনি ডঃ ঝিনুক সেন। কিন্তু পর্দা ছাপিয়ে ঝিনুকের চরিত্র মিশে গিয়েছে প্রমিতা চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে। জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'এখানে আকাশ নীল'- এ অভিনয় করছেন তিনি। দর্শকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন। অথচ কিছুদিন আগে এই ঝিনুকের চরিত্র নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন প্রমিতা। কেমন করে কাটিয়ে উঠলেন সেই পরিস্থিতি? লকডাউনে কেমন চলছে শ্যুটিং আর প্রেম? এবিপি আনন্দকে জানালেন অভিনেত্রী।



লকডাউনে সুরক্ষাবিধি মেনে ফের শুরু হয়েছে 'এখানে আকাশ নীল' ধারাবাহিকের শ্যুটিং। নিয়মিত সেটে যাচ্ছেন প্রমিতা। আপাতত পর্দায় ছোট্ট ওলি আর টিউলিপ হাসপাতালে চিকিৎসার কাজ নিয়েই ব্যস্ত ঝিনুক। কিন্তু কিছুদিন আগেই ধারাবাহিকের গল্প আবর্তিত হয়েছিল ঝিনুক ও উজানের বিয়ে নিয়ে। সম্প্রচারিত হয়েছিল, উজানের সঙ্গে ঝিনুকের বিয়ের কারণেই সরে যেতে হয় নায়িকা হিয়াকে।



এবং এরপরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত আক্রমনের শিকার হন প্রমিতা! সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক মন্তব্যে জেরবার হয়ে লালবাজার সাইবার সেলে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রোলড হয়ে ঠিক কী মনে হয়েছিল? এবিপি আনন্দকে প্রমিতা বললেন, ' প্রথমে মানসিকভাবে খুব বিব্রত লাগত। যখনই ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম খুলতাম ট্রোলিং চোখে পড়ত। আমার মা-বাবারও ব্যাপারটা ভালো লাগেনি। তারপরেই আমি পুলিশে অভিযোগ জানাই।'



লকডাউনে নিজের বাড়ি পুরুলিয়াতে ছিলেন প্রেমিক রুদ্রজিৎ মুখোপাধ্যায়। 'সাত ভাই চম্পা' ধারাবাহিক চলাকালীনই প্রেমের শুরু প্রমিতা আর রুদ্রজিতের। কোভিড পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন দেখা না হলেও প্রমিতার এই কঠিন সময় সবসময় তাঁর পাশেই ছিলেন রুদ্রজিৎ। প্রমিতা বলছেন, 'রুদ্রজিৎ আমায় খুব সাপোর্ট করেছে। সাইবার সেলে কমপ্লেন করা থেকে শুরু করে সকলের সঙ্গে কথা বলা, সবসময় পাশে থেকেছে ও। আর কোনও কিছু নিয়ে বিব্রত থাকলে তা পেরিয়ে যাওয়ার মতো মনের জোর দেয় নিজের মানুষরাই। আর আমার মা-বাবা তো সঙ্গে ছিলেন সবসময়ই।'







রুদ্রজিতের কথা উঠতেই উচ্ছ্বসিত প্রমিতা। ধারাবাহিক ছেড়ে ঢুকে পড়লেন ব্যক্তিগত জীবনের আলোচনায়। বললেন, 'আজকে ১ মাস পরে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে রুদ্রজিৎ। আগে তো সেটেই রোজ দেখা হত। এখন প্রেমটা সেই পুরনো দিনের মতো হয়ে গিয়েছে। দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। গতবার ৫ মাস পরে দেখা হয়েছিল। আজ একমাস পর বাড়িতে এসেছে ও।' প্রমিতা যোগ করলেন, ট্রোলিং-এর সময়ে রুদ্রজিৎকেও অনেক বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়েছিল। কিন্তু তাতে আমাদের মধ্যে বন্ডিংয়ের ঘাটতি হয়নি কোনওদিন।'

  আজ একমাস পরে একসঙ্গে রুদ্রজিৎ প্রমিতা

লকডাউনে কেমন আছে 'এখানে আকাশ নীল'-এর অন্দরমহল? প্রমিতা বলছেন, 'বারবার স্যানিটাইজ করা হচ্ছে সেট। প্রয়োজন ছাড়া সেটে বেশি কলাকুশলী থাকছেন না। মেক আপ রুম ব্যবহার করাতেও নতুন নিয়ম হয়েছে। আমি যে মেক আপ রুমটা ব্যবহার করি সেটা বেশ বড়। আমি ছাড়া সেখানে কখনও অদিতি, কখনও অ্যানিদি থাকছে। মেক-আপ আর্টিস্টরাও নিয়ম মেনে কাজ করছেন। আমি সবসময়ই নিজের কিট ব্যবহার করতাম। এখন সেটা সবাই করছে। আর স্যানিটাইজার ব্যবহার তো অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।'



ধারাবাহিকে চিকিৎসকের চরিত্রে অভিনয় করছেন প্রমিতা। করোনা পরিস্থিতিতে তাই মাঝেমধ্যেই মাস্ক পরে পর্দায় হাজির হচ্ছেন তিনি। ঠিক কতটা কঠিন মুখ ঢেকে অভিনয়? প্রমিতা বলছেন, 'আমার বেশ মজা লাগে। তবে কিছু সময় একটু বেশি এফর্ট দিতে হয়। চোখের অভিব্যক্তি বেশি করে ফুটিয়ে তুলতে হয়। জোরে কথা বলতে হয়।'



বারবার অভিনয়ের চরিত্রের জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন অভিনেত্রীরা। প্রমিতা বলছেন, 'আমরা দর্শকদের জন্যই কাজ করি। তাঁদের জন্যই তো আমাদের এই জনপ্রিয়তা। আমরা সবসময় অভিনয়ের ফিডব্যাক চাই। আমিও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু পর্দার বাইরে আমরা অন্য মানুষ। অন্যান্য সব পেশার মতো আমরাও আমাদের কাজটাই করি। তাই পর্দার চরিত্রকে বিচার করে আমাদের ব্যক্তিগত আক্রমণ করা উচিত নয়।'