পাকিস্তান। সোশ্যাল মিডিয়া। সিঙ্গল পেরেন্টহুড। অন্তরঙ্গ হৃতিক রোশন। সামনে স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিজিৎ চক্রবর্তী


পত্রিকা: এত বাঙালি-বাঙালি করছেন। অথচ কলকাতায় এলেন এত কম সময়ে, তাও আবার ‘কাবিল’ মুক্তির এত পরে!

হৃতিক: এই শহরে আমার প্রথম নাচের শো করেছিলাম আমি। তা’ও আবার আমার দিদিমার ইচ্ছে রাখতে।

পত্রিকা: আচ্ছা!

হৃতিক: বাঙালিদের খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। বাঙালি যেমন কাঁচালঙ্কারও ভক্ত, আবার তেমনই রসগোল্লারও (প্রচণ্ড হাসি। হাসতে হাসতে রেকর্ডারটা নিজেই কাছে টেনে নিলেন)।

পত্রিকা: শাহরুখের আগেই তা হলে পাকিস্তান পৌঁছে গেলেন?

হৃতিক (হা হা হা): এটা সত্যিই খুব ভাল খবর। ফিলিং গ্রেট। প্রত্যেক অভিনেতাই চায়, বেশি বেশি লোক যেন তার কাজ দেখে। তাই পাকিস্তানে আমার হিন্দি ছবি রিলিজের খবর সবার কাছেই খুব আনন্দের।

পত্রিকা: কিন্তু ভারতে একই দিনে ‘রইস’ আর ‘কাবিল’-এর মুক্তি কি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ভাল হল?

হৃতিক: হল না-ই তো! এ নিয়ে কথা বলতে তো শাহরুখের বাড়িও গিয়েছিলাম আমরা। ইন্ডাস্ট্রির কম করে একশো কোটি টাকা ক্ষতি হল।

পত্রিকা: অনেকে বলছেন আপনি ভাল নাচেন বলে, ‘কাবিল’-এ অহেতুক নাচ এসেছে...

হৃতিক: তাই! আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। ‘কাবিল’‌-এ কিন্তু একটাও ডান্স নাম্বার নেই। সব ক’টাই ছবির প্রয়োজনে এসেছে। নাচ মানে গোটাটাই এক্সপ্রেশন। অভিব্যক্তি। ‘কাবিল’‌য়ে দেখবেন নাচতে নাচতে আমি সুড়সুড়ি দিচ্ছি, আর ইয়ামি খিলখিল করে হেসে উঠছে। ওটা কিন্তু স্ক্রিপ্টে ছিল না। ওটা স্পন্টেনিয়াস। আর দর্শকও সেটাই চায়।

পত্রিকা: দর্শকের কাছে কিন্তু হৃতিক মানেই ‘বেস্ট ডান্সার’!

হৃতিক: সতেরো বছর ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে দেখেছি, লোকে

অভিনেতাদের গায়ে ‘লেবেল’ সেঁটে দেয়! অভিনেতারাও সেই ছাপটা নিজেদের গায়ে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।

পত্রিকা: এত চেষ্টার পরেও কিন্তু আপনার ফিল্মোগ্রাফিতে ফ্লপ নেহাত কম নয়...

হৃতিক: আরে, ফ্লপটাও আমার দারুণ লাগে। (হেসে) সত্যিটাকে মেনে নেওয়ার ইচ্ছা যদি থাকে, তা হলে ফ্লপের চেয়ে ভাল কিছু তো হতে পারে না। ভুল তো একটা ইন্ডিকেশন, যেটা সপাটে মুখে থাপ্পড় মেরে বলে দেয়, আরে! ভুল পথে যাচ্ছিস। ফ্লপ হল একজন অভিনেতার কাছে বেড়ে ওঠার অ্যাকসেস পয়েন্ট। ব্যর্থ হলেই লোকে সামনে তাকায়। সাফল্যের সময় তো পিছনে ফিরে তাকায়, আর বলে, উফ অনেক করে ফেলেছি।

পত্রিকা: পিছনে তাকাতে গিয়ে কি মনে হয়, সুপার হিরোর চেয়ে হৃতিক এখন সুপার ফাদার…

হৃতিক (থামিয়ে দিয়ে): দেখুন, যে কোনও বাচ্চার কাছে তাদের বাবারা হল সুপারহিরো। আর বাবাদের উচিত বাচ্চাকে সুপারহিরো বানানো।

পত্রিকা: মানে!

হৃতিক: আমি আসলে আমার ছেলেদের বাচ্চা হিসেবে দেখি না। আলাদা মানুষ হিসেবে দেখি। ওদের বড় হওয়া দেখতে দেখতে মনে হয়, লাইফ ইজ রিয়্যালি ইন্টারেস্টিং!  সিঙ্গল পেরেন্টহুড এনজয় করছি। হিরো-ফিরো নয়। আমার ছেলেরাও আমায় হিরো হিসেবে দেখে না।

পত্রিকা: ছেলেদের নিয়ে একসঙ্গে নিজের ছবি দেখেন?

হৃতিক: দেখি। তবে জোর করি না। আর ওরাও আমার কোনও ছবি ভাল না লাগলে মুখের ওপর বলে দেয়, ধুর্! একেবারে ফালতু সিনেমা। এই অনেস্টিটা বাচ্চাদের মধ্যেই থাকে। বড় হলে এই সত্তাটা মরে যায়। বাবা-মায়ের এখানে খেয়াল রাখা উচিত, বোঝানো উচিত বাচ্চাদের যে, জীবনে সবাইকে খুশি করে চলতে পারবে না।

পত্রিকা: কিন্তু সময়টা তো পাল্টে গেছে। সোশাল মিডিয়ার চাপে সম্পর্কের সংজ্ঞাও তো বদলে গেছে।

হৃতিক:   না, সম্পর্ক কিন্তু আজও একই আছে। দেখুন, কেউ যদি সোশ্যাল মিডিয়াকে নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে, তা হলে চাপ আছে। ক’টা লাইকস পড়ল, কে কমেন্ট করল — এতে অ্যাডিক্টেড হয়ে গেলে মুশকিল।

এবং ইয়ামি

পত্রিকা: আপনারও তো ‘বং কানেকশন’...

ইয়ামি (হেসে): সে আর বলতে! আমার প্রথম কমার্শিয়ালের শ্যুট করেছিল অনুরাগ (বসু)। আর প্রথম বলিউড ব্রেক (‘ভিকি ডোনর’)  সুজিত সরকারের পরিচালনায়। এই তো ‘কাবিল’‌য়ের  প্রচারে ভবানীপুর কলেজে গিয়েছিলাম। সবার এক্সাইটমেন্ট দেখে মনে হল, আই অ্যাম অ্যাট হোম।

পত্রিকা: বলিউডের সেরা ডান্সারের সঙ্গে নাচার আগে নার্ভাস লাগেনি?

ইয়ামি: ভীষণ। কিন্তু হৃতিক এত সাপোর্টিভ যে, কী বলব! ওর কথা একবার বলতে শুরু করলে আমায় কিন্তু আর থামাতে পারবেন না।