কলকাতা: পুজোয় বাংলায় একসঙ্গে একাধিক ছবি মুক্তি, এই প্রথা নতুন নয়। প্রায় প্রত্যেক প্রযোজকই মনে করেন, পুজোর সময় বাঙালি প্যান্ডেল হপিংয়ের পাশাপাশি, প্রেক্ষাগৃহমুখী ও হয় দেদার। সেই কারণেই পুজোর সময়টাকে লক্ষ্য করে ছবি তৈরি করেন অনেকেই। এবার পুজোর ছবিটাও নতুন নয়। এবার পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে একগুচ্ছ নতুন বাংলা ছবি। এর মধ্যে যেমন রয়েছে দেব (Dev)-এর 'রঘু ডাকাত', তেমনই রয়েছে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার 'রক্তবীজ ২', প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের 'দেবী চৌধুরাণী' এবং অনীক দত্তের নতুন ছবি, 'যত কাণ্ড কলকাতাতেই'। আর এই ছবির তালিকায় দুটি ছবির মধ্যে 'কমন ফ্যাক্টর' যিনি, তিনি আবির চট্টোপাধ্যায় (Abir Chatterjee)। আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে সমস্যা। 

অনীক দত্ত (Anik Dutta) পরিচালিত ও ফিরদৌসল হাসান প্রযোজিত সিনেমা 'যত কাণ্ড কলকাতাতেই'-এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে 'রক্তবীজ ২'-এর ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। অভিযোগ, আবির নাকি চুক্তির কারণে কেবলমাত্র ১টি ছবিরই প্রচার করছেন, সেটি 'রক্তবীজ ২'। বারে বারে প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে আবিরকে অনুরোধ করা হলেও, 'যত কাণ্ড কলকাতায়' ছবিটি নিয়ে কোনোরকম প্রচার করছেন না আবির। 

এই বিষয়ে, কী মত পরিচালক অনীক দত্তের? এবিপি লাইভ বাংলা (ABP Live Bangla)-র কাছে মুখ খুলে অনীক বললেন, 'আবিরের সঙ্গে এই ছবিটির শ্যুটিং শেষ হয়ে গিয়েছিল গত বছর। ও যখন এই ছবিটিতে চুক্তিবদ্ধ হয়, সেই সময়ে অন্য কোনও ছবি নিয়ে চুক্তির কথা আমাদের জানায়নি। গত বছর পুজোতেই মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল, 'যত কাণ্ড কলকাতায়'। কিন্তু ২০২৪-এর পুজোয় মুক্তি পেয়েছিল আবিরের 'রক্তবীজ'। ওর অনুরোধেই সেই সময়ে 'যত কাণ্ড কলকাতায়'-এর মুক্তি পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার পুজোতেও সেই একই ঘটনা। বারে বারে তো ছবির মুক্তি পিছনো যায় না! সেই মতোই এবার পুজোয় 'যত কাণ্ড কলকাতায়' মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রচারের জন্য আবিরের সঙ্গে প্রযোজকের কথা হলে, সম্ভবত আবির প্রথমে নিমরাজি হয়। পরবর্তীকালে জানায় যে সে চুক্তিবদ্ধ উইন্ডোজ-এর সঙ্গে। 'রক্তবীজ ২' ছাড়া অন্য কোনও ছবির প্রচার সে করতে পারবে না। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতেও সেই ছবির ক্লিপিংস শেয়ার করতে পারবে না! ছবির প্রিমিয়ারে আসবে কি না... তা নিয়েও দ্বন্দ্ব রয়েছে।'

এতে কী ছবির ওপর কোনও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পরিচালক? অনীক বলছেন, 'কে ছবির প্রচার করছেন, তা নিয়ে দর্শক ভাবেন বলে আমি মনে করি না। আমার যে ছবির বিন্দুমাত্র প্রচার হয়নি, সেই ছবি ও দর্শক হল ভরিয়ে দেখেছেন। আবির ছবির প্রচার করলেই দর্শক হলমুখী হবে এই তত্ত্বে আমি বিশ্বাসী নই। তবে প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে পরিচালকই নিজের ছবির প্রচার করে থাকেন। মানুষকে আগে তো জানাতে হবে যে এই ধরণের একটা ছবি আসছে.. তারপরে মানুষ স্বাদ অনুযায়ী ছবি বেছে নেবেন। তবে আমার মনে হয়, আবিরের না থাকা 'নেগেটিভ পাবলিসিটি'-ও তৈরি করতে পারে। দর্শক ভাবতে পারেন, কেন প্রচারে নেই মুখ্যচরিত্র!'

আবিরকে প্রচারে চেয়ে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি বৈঠকে বসবেন অনীক? পরিচালক বলছেন, 'নাহ.. আমাদের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। শিবু যদি কোনও আলোচনায় বসতে চায়, তাহলে আমরা রাজি। এই বিষয়টা নিয়ে আদালতেও যাবে না, কারণ তাতে আবিরই সমস্যায় পড়তে পারে। প্রধান চরিত্রে এক অভিনেতা অভিনয় করলেও, দুটো ছবি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের। মানুষ ইচ্ছামতো ছবিই বেছে নেবেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে একজন অভিনেতাকে দিয়ে এইভাবে চুক্তি করিয়ে নেওয়া ছেলেমানুষি। ইগো। নায়ককে চুক্তিবদ্ধ করতে পারে, দর্শকদের সঙ্গে তো আর চুক্তি চলে না। মানুষের যে ছবিটি দেখতে ইচ্ছে হবে, সেটি মানুষ দেখবেনই।'