কলকাতা: নেশা করতে করতে শেষ করে ফেলেছিলেন নিজের টাকা, মায়ের গয়না, বাবার সঞ্চয়। এরপর হাত পড়েছিল বাইরের জিনিসে। 'অ্যালুমিনিয়াম,কাঁসার জিনিস তখন সোনার মতোই দামি। যে কোনও গাড়ির লক খুলতে সময় লাগত ঠিক তিন মিনিট । একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।' এই গল্প কোনও ছবির চিত্রনাট্য নয়। বড়পর্দা থেকে ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতার জীবনের ঘোর বাস্তব। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (Anindya Chatterjee)। মিষ্টি হাসি আর মিশুক স্বভাবের এই অভিনেতা পিছন ফিরে দেখলেই ভেসে ওঠে একটা অন্ধকার অতীত। শুধুই অন্ধকার? নাকি অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার এক জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি?
সামাজিক মাধ্যমে লম্বা একটা পোস্ট দিয়ে নিজের লড়াইয়ের কথা লিখছেন অনিন্দ্য। এই লড়াই নিজের সঙ্গে নিজের। এই লড়াই মাদকের নেশা থেকে মুক্ত হওয়ার। অনিন্দ্য লিখছেন, 'আমার কাছে এখনও জলের মতো স্পষ্ট ২০০৮ সালে আজকের এই দিনটা । আর দেখতে পাই বলেই হয়তো আজকে লিখছি । ব্যাঙ্কসাল কোর্টে হাজিরা দিয়ে আমাকে রিহ্যাবে ফিরতেই হতো । ৯টার বনগাঁ লোকাল আর সাথে ছিল শেষবারের মতন নেশা করবো বলে একটু ব্রাউন সুগার, পাতি বাংলায় কয়েকটা পাতা আর একটা সিরিঞ্জ, একটু তুলো। হাবড়া স্টেশনে নেমে একটু এগোলেই সেই রিহ্যাব যেখান থেকে আমার ভালো থাকার লড়াই শুরু হয়েছিল । তার আগে প্রায় ২৮ বা ২৯ টা ডিটক্স আর রিহ্যাব হয়ে গেছে । যেদিন ছাড়া পেতাম সেদিনকেই রিলাপস, এরম একটা প্যাটার্ন ছিল । ৬/৭ বছর ধরে অনবরত ঘুরতে থাকা একটা বৃত্ত । নয় বাইরে নেশা করছি নয় তালা চাবির ভিতরে ভালো আছি । তালা চাবির বাইরে বেরোলেই আবার নেশা । না নিজে বিশ্বাস করতাম যে আমি কোনোদিন ভালো হতে পারবো না আমাকে কেউ বিশ্বাস করতো যে আমি কোনোদিন নেশা ছেড়ে দেবো । উত্তর কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারের আর কতই বা ক্ষমতা ? বাড়ির সব কিছুই মোটামুটি ততদিনে প্রায় শেষ । সে মায়ের সোনার গয়না হোক বা বাবার সঞ্চয় । এরপরে বাইরের লটরবহর তো আছেই । লোহা, অ্যালুমিনিয়াম,কাঁসার জিনিস তখন আমার কাছে সোনার মতনই দামী । যে কোনো গাড়ির লক খুলতে লাগতো ঠিক তিন মিনিট । একটা নোকিয়ার মোবাইল মানে ক্যাশ ২/৩ হাজার । সেটাই অনেক তখন আমার কাছে । এরম একটা সময় আমি আমি বুঝতে পারছিলাম এভাবে যদি চলতে থাকে আমি ২৮ বছর অবধিও টানতে পারবো না আর চোখের সামনে চারটে ইউজিং পার্টনার কে পরপর মরতে দেখে একটু ভয়ও পেয়েছিলাম । এতটাই বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলাম যে আমার সেই রিহ্যাবে যাওয়া আর সেখানে আবার কয়েকমাস চার দেওয়ালের মধ্যে থাকা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না। যদি থাকতো তাহলে আরো কয়েকদিন টানতে পারতাম । কিন্তু পারিনি ।