কলকাতা: রাজস্থান বললেই যেন বাঙালির মনে ভেসে ওঠে সত্যজিৎ রায়, বালির ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া উটে সওয়ার ফেলুদা, লালমোহনবাবু, সার্কিট হাউজ আর সোনার কেল্লা। সাধারণ মানুষ হোন বা অভিনেতা, রাজস্থানের এই নস্ট্যালজিয়ার কাছে বোধহয় সবাই সমান কাবু। আর তাই, প্রথমবার মরুভূমিতে পা রেখে পর্দার একেনবাবু ওরফে অনির্বাণ চক্রবর্তীরও (Anirban Chakrabarti)-র ও মনে পড়েছিল সেইসমস্ত কথাই। আর তারপর.. নতুনত্ব খাবার থেকে শুরু করে উটের পিঠে ছোটা, মরুভূমিতে মাঝরাতে শ্যুটিং... তাঁকে দু হাত ভরে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা দিয়েছে রাজস্থানও। 'রুদ্ধশ্বাস রাজস্থান'-এর সেই সমস্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি এবিপি লাইভে (ABP Live)-এ উপুড় করে দিলেন অভিনেতা অনির্বাণ। 


গতবছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে পয়লা বৈশাখে মুক্তি পেয়েছিল একেনবাবুর প্রথম ছবি। সেইদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, একেনের পরবর্তী গল্পকে নিয়ে যাওয়া হবে রাজস্থানে। পাহাড়ের পরে মরুভূমি। অনির্বাণ বলছেন, 'একেনের পরবর্তী ছবি নিয়ে আমার কোনও অনিশ্চয়তা ছিল না। পরিচালক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ (SVF) প্রথম ছবি মুক্তির দিনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরের ছবি তৈরির। আর তাই, প্রস্তুতির জন্য বেশ অনেকটা সময় পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি শ্যুটিংয়ের পরে বাকি পোস্ট প্রোডাকশনের কাজটার জন্যও অনেকটা সময় ছিল। ফলে যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবেই কাজটি করা সম্ভব হয়েছে। নববর্ষে মুক্তি পাবে এই ছবি।'


এরপরে শ্যুটিংয়ের গল্প। তবে শুরুতেই একটু বিপত্তিতে পড়েছিল 'টিম একেন'। অনির্বাণ বলছেন। আমাদের জয়পুর যাওয়ার বিমান ছিল ভায়া দিল্লি হয়ে। দিল্লিতে ৩ ঘণ্টা লে ওভার থাকার কথা। জানুয়ারি মাস তখন। ফ্লাইট দেরি করে করে ৩ ঘণ্টার লে ওভার বেড়ে দাঁড়াও সাড়ে ৯ ঘণ্টারও বেশি। সারাদিন দিল্লি বিমানবন্দরে বসে। মধ্যরাত্রে গিয়ে পৌঁছলাম জয়পুর। পরেরদিন সকাল হতেই শ্যুটিং। সবার ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম প্রথমদিনেই।'


জানুয়ারি মাস, মরুভূমিতে তীব্র ঠাণ্ডা হওয়ার কথা। সেই কথা মাথায় রেখেই প্রচুর শীতের পোশাক নিয়ে গিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। তারমধ্যেই শুরু হল শ্যুটিং। অনির্বাণ বলছেন, 'শ্যুটিংয়ের একটা অংশ ছিল, উটের পিঠে উঠে ছোটা। টানা ৩ দিন ধরে ওই শ্যুটিংটা চলেছে। সাধারণত পর্যটক হলে উট ধীরে ধীরে হাঁটে বালির ওপর দিয়ে। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে আমাদের উটের পিঠে চড়ে ছুটতে হল। পায়ে, কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা। রোজ পেনকিলার খেয়ে শ্যুটিং করতে হত। যতক্ষণ আলো থাকছে উটের পিঠে উঠে ছুটতে হচ্ছে, আর সন্ধে হলে রাতের দৃশ্য। সারাদিনের শ্যুটিংটা বেশ কষ্টকরই হয়ে উঠত মাঝেমাঝে। কিন্তু ইউনিটের সবাই এত ভাল, পরিচালক নিজে এত প্রাণবন্ত মানুষ, সবাই মজা করতেন... কাজটি ঠিক হয়েই যেত।'


আর এই রাত্রে মরুভূমিতে শ্যুটিং করে ফেরার সময়ের একটা অভিজ্ঞতা বোধহয় কখনও ভুল হবে না অনির্বাণের। অভিনেতা বলছেন, 'দিনটা ছিল পূর্ণিমা। রাতে শ্যুটিং করে ফিরছি সবাই। ধূ ধূ মরুভূমির মধ্যে তখন কেবলই দিগন্ত জোড়া শূন্যতা। চাঁদের আলোয় যেন মরুভূমি ভাসছে। আমরা বললাম গাড়ির হেডলাইটটা নিভিয়ে দিতে। আকাশ জ্বলজ্বল করছে হাজার হাজার তারা। তার মধ্যে দিয়ে গাড়ি করে যাওয়ার সেই অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।'


আরও পড়ুন: Priyanka Chopra: সঞ্চালককে তথ্য দিতে গিয়ে 'RRR' নিয়ে মস্ত ভুল, প্রিয়ঙ্কার ওপর চটলেন নেটিজেনরা!