কলকাতা: আগেই প্রকাশ্যে এসেছে ছবির লুক। তখন থেকেই আলোচনা শুরু। নিমেষে ভাইরাল হয়ে যায় পরিচালক অনীক দত্তর (Anik Dutta) 'অপরাজিত' (Aparajito) ছবির সত্যজিৎ রায় ওরফে জিতু কমল (Jeetu Kamal)। এবার প্রকাশ্যে এল সেই ছবির 'লোগো' (Logo)। আর তাতেও চমক রয়েছে বটে।


'লোগো' নিয়ে শব্দজব্দ


'কুছ তো লোগ কহেঙ্গে / লোগো কা কাম হ্যায় কেহনা...' জনপ্রিয় হিন্দি গানের ততধিক বিখ্যাত দুই লাইন। এখান থেকেই কথার খেলার ছলে লোগো শব্দটিকে ইংরেজি 'Logo' শব্দে রূপান্তরিত করে নেওয়ার চেষ্টায় সাজানো হয়েছে 'Logo কা কাম হ্যায় কেহনা' বাক্যবন্ধটি। যার একটা স্বাধীন অথচ গুরুত্বপূর্ণ মানে তৈরি হয়। ঠিকই তো! 'Logo'-র কাজই তো হল কিছু না কিছু বলা। তা সে কোনও পণ্য হোক বা সংস্থা... আর এক্ষেত্রে একটা ছবি। 


অর্থাৎ 'Logo' প্রাথমিক ভাবে একটা প্রতিনিধি এবং তার প্রধান কাজ হল সে যার প্রতিনিধিত্ব করছে তার সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করে দেওয়া। 


'লোগো'র বিবর্তনের ইতিকথা


পরিচালকের কথায়, 'আমার প্রথম ছবি থেকেই ছবি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে এই 'Logo' বা 'Publicity design'-এর প্রতি আমার আগ্রহ ও উৎসাহ বজায় থেকেছে এবং এই কাজটা করে আমি সৃজনশীলতার দিক থেকেও খুব আনন্দ পেয়েছি। আমি যন্ত্র ব্যবহারে খুব পারদর্শী নই বলে প্রাথমিকভাবে আমার চিন্তা ভাবনাটাকে পেনসিলে খসড়া করে নিয়ে তারপর গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাহায্য নিই কাজটাকে শেষ করার জন্যে।' 


বহু চর্চিত 'অপরাজিত' ছবিটির ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তবে এই ছবির জন্য কোনও কিছু সৃষ্টির আনন্দ ও উদ্দীপনা দ্বিগুণ হয়ে যায় পরিচালকের কারণ 'অপরাজিত' ছবিটি সত্যজিৎ রায়ের জীবনের প্রথম ছবি 'পথের পাঁচালী' তৈরির নেপথ্য কাহিনির আধারে তৈরি। পরিচালক আরও বলেন, 'সত্যজিৎবাবু সেই ছবি তৈরির সময়ে তাঁর অনমনীয় জেদকে সম্বল করে যে অজস্র প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, অপরাজিত থেকে তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেছিলেন, তা এ ছবির মূল প্রতিপাদ্য। 'অপরাজিত' নামটি তারই সূচক। বলা বাহুল্য 'পথের পাঁচালী' শুধু বাংলা বা ভারতীয় সিনেমা নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্রের দিশারি হয়ে উঠেছিল। আমাদের ছবিতে বাস্তব চরিত্রদের নাম ও ঘটনার বিবরণ খানিক পালটে নিয়েছি। তাই এখানে মূল চরিত্রের নাম অপরাজিত রায় আর তিনি যে ছবিটি করছেন তার নাম 'পথের পদাবলী'। 


আরও পড়ুন: Arpita Chatterjee Exclusive: '১৯৯৯ সাল, অপু ছিল আমার প্রথম হিরো'


সত্যজিৎ রায়ের বহুমুখী প্রতিভার বিচ্ছুরণ অগণিত ক্ষেত্রে দেখা গেছে যার মধ্যে Logo, poster বা publicity design, calligraphy, illustration অন্যতম। সত্যজিৎ রায় নিজে তাঁর designing করতেন তা সে বই হোক বা সিনেমা। মূল বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেন এমনই যে লোগোটি দেখলেই মূল ভাবনা সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা তৈরি হয়। অনীক দত্তের কথায়, 'আমরা সত্যজিৎ রায়ের এই ধারাটা বজায় রেখেই একটা নিজেদের মত কিছু করতে চাইছিলাম যা একার্থে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ কিন্তু অন্ধ অনুকরণ নয়। অনেক খুঁজে 'কাপুরুষ-মহাপুরুষ' ছবির টাইটেল কার্ড থেকে আমি একটা আদল খুঁজে পেলাম যা আমার ছবির লোগো তৈরির জন্য খুব প্রাসঙ্গিক মনে হল। 'অপরাজিত' নামটা লেখা তো হল; এবার মূল প্রশ্ন এটা এরকম সরলীকৃতই থাকবে নাকি উনি যেমন করে বিভিন্ন উপকরণ-অলঙ্করণ ব্যবহার করতেন, সেই পথেই আমরা এগোনোর চেষ্টা করব। বছর খানেক আগে এই ছবিটির ঘোষণার সময়ে আমি অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে যেটুকু করতে পেরেছিলাম তাতে 'জ'-এ 'ই'-কারের যে অর্ধচন্দ্রাকার টান রয়েছে সেখানে ট্রেনের ধোঁয়া ব্যবহার করেছিলাম। কারণ 'পথের পাঁচালী' ছবির অন্যতম স্মরণীয় অংশগুলোর মধ্যে হল অপু-দুর্গার ট্রেন দেখতে যাওয়া। এবারে নতুন করে লোগোটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হল আরও কিছু উপকরণও ব্যবহার করা যায় আর তা যেন মূল লোগোর সঙ্গে আরেকটু সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে। ধোঁয়া ওড়ানো ট্রেন, ভাই-বোনের কাশবন দিয়ে ছুটে যাওয়া। তাছাড়াও আমাদের ছবির একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল, একটা ছবির শ্যুটিং অর্থাৎ উপাদান প্রচুর কিন্তু আমি চাইছিলাম তার ব্যবহার হবে খুব সূক্ষ্মভাবে। এই সময়ে শিল্পী সমীর আইচের ছেলে রাজের সঙ্গে কথা হল। সে নিজেও একজন গ্রাফিক শিল্পী। রাজের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা ট্রেনের ধোঁয়াকে 'ই' তো রাখলামই সঙ্গে ট্রেনের কামরাগুলো হল মাত্রা। ভাই-বোন চলে এল 'অ' এর অলঙ্করণের অংশ হয়ে আর শেষকালে মিচেল ক্যামেরা যা দিয়ে 'পথের পাঁচালী' শ্যুট হয়েছিল সেই ক্যামেরার আভাস মিলল 'প' এর ফাঁকা জায়গায়। তবে পুরোটাই খুব সম্পৃক্তভাবে একেবারেই জোর করে চাপিয়ে দেওয়া বা আলাদা করে নিম্নরেখ করা নয়। 


এর সঙ্গে ছবির ইংরেজি টাইটেল রাখা হয় 'The Undefeated'। আসল 'অপরাজিত'-র ইংরেজি নাম ছিল 'The Unvanquished'। এই ইংরেজি নামের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে 'Ray Roman Font' যা সত্যজিৎ রায়ের নিজের তৈরি করা। অনীক দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, 'এ সব কিছুই সম্ভব হয়েছে শ্রী সন্দীপ রায়ের অপরিসীম সহযোগিতা, অনুমতি ও অকৃত্তিম উৎসাহের জন্য।'


লোগো প্রকাশ্যে আসার পরে ফার্স্ট লুকের মতোই প্রশংসিত হয়েছে। এবার পর্দায় এই ছবির পারফর্ম্যান্স দেখতে উৎসাহী দর্শক দিন গুনছেন।