কলকাতা: ২০১৩-র এক বৃষ্টিভেজা সকালে আচমকাই জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন পরিচালক। পড়ে রইল তাঁর লাইটস-ক্যামেরা-অ্যাকশান, অভিনয়, চিত্রনাট্য, পরিচালনা। ৮ বছর আগে আজকের দিনেই মৃত্যু হয়েছিল ঋতুপর্ণ ঘোষের। এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও সতীর্থদের মনে এখনও উজ্জ্বল ঋতুপর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সঙ্গে ছবি শেয়ার করে কলম ধরলেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।


একই ফ্রেমে ঋতুপর্ণ আর অর্পিতা। পুরনো সেই ছবি শেয়ার করে নায়িকা লিখছেন, 'আজ ৮ বছর হয়ে গেল তুমি নেই। না আছো, শুধু তোমার শরীরটুকু নেই! অনেক কাজ বাকি রয়ে গেল তোমার। সেইগুলো সময় মত কোনও এক জন্মে আবার একসঙ্গে করা যাবে! ভালো থেকো, তোমায় সব সময় মনে পড়ে!'



আজ সকালে প্রিয় বন্ধুর স্মৃতি উস্কে পুরনো কথা লিখেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। পুরনো ছবি শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রসেনজিৎ লেখেন, '৮ বছর হয়ে গিয়েছে, তোর কোনও মেসেজ নেই, বকাঝকা নেই, সাক্ষাৎ হয় না, ঝগড়া হয় না, নতুন নতুন গল্প নিয়ে আলোচনা হয় না। কিন্তু তুই আছিস - আমাদের মনে, আমাদের কথাবার্তায়, তুই চির বর্তমান। এই সময়টায় তোর থাকা খুব দরকার ছিল রে। ভালো থাকিস ঋতু।'


ঋতুপর্ণ ঘোষের প্রথম ছবি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প 'হীরের আংটি'। আর শেষ ছবি, 'চিত্রাঙ্গদা'। এই মাঝের সময়টা নিজেকে নিয়ে খেলা করেছেন ঋতুপর্ণ। ভেঙেছেন, গড়েছেন। আর দর্শকদের উপহার দিয়ে গিয়েছেন 'নৌকাডুবি', 'বাড়িওয়ালি' 'তিতলি', 'দহন', 'উৎসব', ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, 'চোখের বালি'-র মত একের পর এক অন্য স্বাদের ছবি। চিরাচরিত ধারায় কখনও চলতে চাননি তিনি। তাঁর ছবিতে উঠে এসেছে সম্পর্কের গুঢ় সমীকরণ, স্থান পেয়েছে লিঙ্গবৈষম্য, সমকামিতার মত বিষয়গুলি। অনেক শিল্পীই বলেছেন, ঋতুপর্ণ ঘোষের মত করে নারী চরিত্রকে হয়তো কেউই বুঝে উঠতে পারেননি। 


শুধু অভিনয় নয়, 'চিত্রাঙ্গদা' ও 'মেমোরিজ ইন মার্চ' ছবিতে অভিনয়ও করেছেন ঋতুপর্ণ। পরিচালকের অভিনয়ের ধারা মনে ধরেছিল দর্শকদের। তাঁর ছবির গল্প কখনও সরলরেখায় চলেনি। মনের বিভিন্ন অবেগ-অনুভূতিকে নিজের ধাঁচে ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে থেমে যায় ঋতুরাজের সেই গল্প বলা। ৩০ মে চলে যাওয়ার সময় ঋতুপর্ণ পিছনে ফেলে যান একগুচ্ছ চিরকালীন মন ভালো করা ছবি।