পৃথা দাশগুপ্ত, কলকাতা: তার একটা চোখ নীলচে পাথরের। মৃত্যুর মত শীতল সে চোখের চাউনি। সেই চাউনির মতই নৃশংস তার চরিত্র। খুন করতে তার হাত কাঁপে না। এমনই কুখ্যাত গ্যাংস্টার 'বচ্চন পান্ডে' (Bachchhan Paandey)। চম্বল দস্যু মান সিং, নবাব সিংদের মতোই উত্তরপ্রদেশের বাগওয়ার আমজনতা ত্রস্ত হয়ে থাকে তার নামে। এহেন বচ্চন পাণ্ডেকে নিয়ে মায়রা একটি সিনেমা বানাতে চায় । অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বচ্চনের কাছে পৌঁছেও যায় সে। মায়রার সঙ্গে যায় তার বন্ধু বিষ্ণুও। মায়রার অনেক অনুরোধে বচ্চন পাণ্ডে রাজি হয় তাঁর নিজের বায়োপিকে অভিনয় করার জন্য। এরপরই কাহিনি গড়াতে থাকে নিজের গতিতে।


'বচ্চন পাণ্ডে'র গল্প-


অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘বচ্চন পাণ্ডে’-র কাহিনি এই প্রেক্ষাপটেই আবর্তিত হয়েছে। অক্ষয়ের বিপরীতে মায়রার চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৃতী শ্যানন। মায়রার বন্ধু বিষ্ণুর ভূমিকায় রয়েছেন আরশাদ ওয়ার্সি। প্রযোজক বর্মাজির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অশ্বিন মুশরন।  আর বচ্চন পাণ্ডের অভিনয়ের শিক্ষকের ভূমিকায় পাওয়া গিয়েছে পঙ্কজ ত্রিপাঠীকে। এক রাজনৈতিক নেতার ভূমিকায় রয়েছেন মোহন আগাশে। বচ্চন পান্ডের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সীমা বিশ্বাস। এছাড়াও বচ্চন পাণ্ডের সঙ্গী কান্দির ভূমিকায় রয়েছেন সহর্ষ কুমার শুক্ল, পেণ্ডুলামের ভূমিকায় অভিমন্যু সিংহ, আর বাফারিয়া চাচার ভূমিকায় সঞ্জয় মিশ্র। বচ্চনের আরেক সঙ্গী ভার্জিনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রতীক বব্বর।


তামিল রিমেক-


২০১৪-য় মুক্তি পেয়েছিল তামিল ছবি 'জিগরঠান্ডা'। সেই ছবিরই অফিশিয়াল হিন্দি-রিমেক বচ্চন পাণ্ডে। কিন্তু এই ছবির কাহিনির সূত্রপাত হয়েছে ২০০৮ সালে । ২০০৮-এ মুক্তি পেয়েছিল অক্ষয় কুমার, করিনা কপূর, সেফ আলি খান অভিনীত 'টশন'। সেই ছবিতে অক্ষয় কুমারের চরিত্রের নাম ছিল বচ্চন পাণ্ডে। এই ছবিতে অক্ষয়ের সেই পুরোনো চরিত্রকেই একটা অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক ফারহাদ শামজি। 


আরও পড়ুন - Tiger Shroff Upcoming Film: ইদের দিন ছবি মুক্তি নিয়ে কী বলছেন টাইগার শ্রফ?


ছবির প্রেক্ষাপট-


'বচ্চন পাণ্ডে'-র কাহিনি শুরু হয় একটি গ্রামের প্রেক্ষাপটে। সেখানে কোনও আইনের শাসন নেই, দিনের আলোতেই চলে গুন্ডারাজ। এরই মাঝে অপরাধ দুনিয়ার মুকুটহীন সম্রাট বচ্চন পাণ্ডের রাজত্ব। বচ্চন পাণ্ডের নাগাল পেতে বন্ধু বিষ্ণুকে নায়ক হবার টোপ দেয় মায়রা। নিজের জীবন নিয়ে ছবি তৈরি হবে শুনে প্রথমেই বেঁকে বসে বচ্চন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে রাজি করানো গেলেও অভিনয় করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয় সে। অগত্যা শুরু হয় অভিনয়ের ওয়ার্কশপ। বচ্চনকে অভিনয় শেখানের দায়িত্ব নেন ভবেশ ভোপলো। অক্ষয় আর কৃতীর পাশাপাশি এই ছবিতে জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজও রয়েছেন। তবে অতিথি শিল্পী হিসেবে। তাঁর চরিত্রের নাম সোফি। সোফির কাহিনি দেখানো হয়েছে ফ্লাশব্যাকে। সোফি ছিল বচ্চন পান্ডের প্রেমিকা। কিন্তু তাঁদের প্রেম পরিণতি পায়নি এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে। আর সেই ষড়যন্ত্রই প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে বচ্চন পাণ্ডের বুকে। 


বলাই যায়, বচ্চন পাণ্ডের কাহিনিতে কোনও নতুনত্ব নেই। এমন বলিউডি মশলা-মুড়ি এর আগে বহুবার খেয়েছেন দর্শক। আর এই ছবির মশলায় তেমন ঝাঁঝও নেই। কাহিনি অনাবশ্যক দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় চিত্রনাট্যের ঝিমুনির জন্যই ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে বাধ্য। বচ্চন পান্ডে আর মায়রার চরিত্র দু’টি বাদ দিয়ে আর কোনও চরিত্রের যেন কোনও গুরুত্বই নেই। ভবেশ ভোপলোর চরিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠীকে ব্যবহারই করতে পারেননি পরিচালক। কাহিনির মাঝে হারিয়ে গিয়েছে আরশাদ ওয়ার্সি, সঞ্জয় মিশ্র, প্রতীক বব্বরের চরিত্রগুলিও। আড়াই ঘন্টার ছবিতে বিশ্বাসঘাতকতা, প্রেম, বন্ধুত্ব সবই ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। তবে সবই বুড়ি ছোঁয়ার মত অসম্পূর্ণ। অ্যাকশনের ধুমধাড়াক্কাও আহামরি কিছু নয়। সব মিলে ‘বচ্চন পাণ্ডে’ একেবারেই জগাখিচুড়ি একটা কাহিনি। সেই খিচুড়িতে চালে-ডালে বন্ধুত্ব হয়নি একেবারেই। আধ-সেদ্ধ অবস্থাতাতেই নামিয়ে পরিবেশন করে দায় সেরেছেন পরিচালক। 


এবিপি আনন্দ