কলকাতা: ২০০৮ সালে প্রথম একসঙ্গে কাজ। তারপর আবার দেখা ২০১৪ সালে। অন্য ছবির জন্য। পাওলি দামকে ৬ বছর পর দেখে পরিচালকের প্রথম কথা ছিল, 'পাওলি তুমি এত পরিষ্কার হয়ে গেলে কবে!' মাদারির চরিত্রের সঙ্গে খাপ খাচ্ছিল না গায়ের রঙ। তাই পুরুলিয়ার চড়া রোদে পাওলিকে গায়ের রঙ পোড়াতে বলেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত।


একসঙ্গে একাধিক ছবিতে কাজ, অনেক মুহূর্ত। পরিচালকের প্রয়াণের খবর অনেক কথাই মনে পড়ছে পাওলির। এবিপি লাইভকে অভিনেত্রী বললেন, 'বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মত আন্তর্জাতিক মানের একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করাটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতই। ওনার সম্পর্কে একটাই শব্দ বলা যায়। পারফেকশানিস্ট। চরিত্র, অভিনয়, লুক, সব বিষয়েই বেশ খুঁতখুঁতে ছিলেন। উনি অভিনয় করিয়ে নিতে জানতেন। যাঁরা অভিনেতা নয় তাঁদের দিয়েও কি অদ্ভুতভাবে কাজ করিয়ে নিতে পারতেন।'


'ধৌলি' আর 'চোলি কে পিছে'-র হাত ধরেই পাওলির সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়েছিল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের। সেটাই একসঙ্গে প্রথম কাজ। অভিনেত্রী বলছেন, 'প্রথম দুটো কাজ করার পর একটু যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। তারপর আবার দেখা হয় টোপ ছবিটার জন্য। সেটে প্রথমেই আমায় দেখে উনি বলেছিলেন, 'পাওলি তুমি এত পরিষ্কার হয়ে গেলে কবে!' প্রথমে কথাটা খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু ছবিতে আমার চরিত্রটা ছিল মাদারির। সে সারাদিন রোদে ঘোরে, রাস্তায় থাকে। মেক-আপ করে ওই গায়ের রঙ তৈরি করা যাবে না। আমার পুরুলিয়ার রোদে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। তাতে গায়ের রঙ পুড়ল। তারপর শুরু হল অভিনয়। এমনই ছিলেন উনি। সত্যিটাকে ক্যামেরায় তুলে ধরতেন।'

 

শুধু চরিত্র বা গল্প নয়, সেট আলো সব বিষয়েই খুব খুঁতখুতে ছিলেন পরিচালক। পাওলি বলছেন, 'পুরুলিয়া খুব পছন্দের যায়গা ছিল ওঁর। রুক্ষতার মধ্যে অদ্ভূত সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তুলতে পারতেন। একবার একটা তাঁবুর মধ্যে শ্যুটিং ছিল। ক্যামেরা, আলো তৈরি। আমরাও মেক-আপ করে, রিহার্সাল করে বসে আছি। উনি হঠাৎ শ্যুটিং বন্ধ করে দিলেন। বললেন , তাঁবু পছন্দ হয়নি। পরেরদিন তাঁবু বদল করে তবে আবার চালু হল শ্যুটিং। আমার দেখা সমস্ত পরিচালকের মধ্যে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছিলেন সবচেয়ে সূক্ষ অনুভূতির মানুষ।'

 

ক্যামেরার পিছনে আবার অন্য মানুষ ছিলেন বুদ্ধদেব। শেখাতে ভালোবাসতেন, শিখতেও। পাওলি বলছেন, 'উনি প্রশ্ন করা খুব পছন্দ করতেন। শ্যুটিং-এ দেখতাম কত অদ্ভুতভাবে ট্রলি সেট করছেন। আমি সেগুলো নিয়ে ওনাকে প্রশ্ন করতাম। জানবার জন্যই। তাতে খুব খুশি হতেন উনি। বুঝিয়ে দিতেম সবটা। আবার গোটা ইউনিটটাকে একটা বাড়ির মত করে নিতে পারতেন। আমি শ্যুটিং-এ হালকা খাবার পছন্দ করি। জানার পরেরদিনই উনি এসে রাঁধুনিকে বলে দিলেন, পাওলি আর আমার জন্য হালকা রান্না করবে একসঙ্গে।'

 

শেষ দেখা দিল্লি চলচ্চিত্র উৎসবে। পাওলি বলছেন, 'করোনা পরিস্থিতির জন্য কতদিন দেখা হয়নি। উনি এভাবে চলে যাবেন ভাবিনি। দিল্লিতেও অনুষ্ঠানের পর কত গল্প করেছিলাম বসে। একটা যুগের শেষ হয়ে যাচ্ছে। সব মানুষগুলো কেমন হারিয়ে যাচ্ছে। কবে যে সব স্বাভাবিক হবে..'