কলকাতা: লকডাউনে দীর্ঘদিন লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন শোনেননি। বাড়িতেই কাটিয়েছেন সময়। থেকেছেন স্বামী অর্জুনের থেকে দূরে। অবশেষে আবার ক্যামেরার সামনে পাওলি। গৃহবন্দি দশা ভাঙলেন পোর্টফোলিও শুট দিয়েই। চেনা পরিবেশ, চেনা টিম, তাও খুঁটিনাটি সতর্কতা নিয়েই কাজ সারলেন পাওলি। 'কত ছবি, ওয়েবসিরিজের শুটিং আউটডোর লোকেশনে হবে বলে আটকে আছে, কাজ তো শুরু করতেই হবে, এটাই তো নতুন নরম্যাল', বললেন পাওলি। এই শ্যুটি পাওলির থিম মোনোক্রম। মেক-আপ থেকে লুক, পোশাক পরিকল্পনা, সবই মেকআপ আর্টিস্ট অনিরুদ্ধ চাকলাদারের।






ভৌতিক আমেজ, রহস্যের হাতছানি... সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ওয়েবসিরিজ 'বুলবুল'। এখানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিনোদিনীর ভূমিকায় দেখা গেছে পাওলিকে। এর আগে 'কালী'তেও সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরকম আরও অনেক নতুন নতুন চমক আটকে আছে করোনা পরিস্থিতির জন্য। কেমন কাটল লকডাউন? কঠিন সময়ে ছবির ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন? আশেপাশের ঘটনা নিয়ে কী মন খারাপ পাওলির? কী বার্তা দিলেন তিনি?

-করোনা আবহে বড় বাজেটের ছবি মুক্তি পাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে? কেমন লাগছে? ওটিটি-ই কি তবে বড়পর্দার বিকল্প হয়ে উঠবে?


সেটা মনে হয় হবে না। ৭০ mm স্ক্রিনের জাদুটাই আলাদা। একটা ছবি যখন দর্শক পাশাপাশি বসে দেখেন, আমরা হল ভিজিট করি, দেখি দর্শক ভরা হল...তাঁদের আবেগ, উচ্ছ্বাস, হাততালি...এর শিহরণটাই আলাদা। সাঁঝবাতির সময় হলে গিয়ে দেখলাম তো, মানুষের উচ্ছ্বাস। ওটার আনন্দই আলাদা।
আবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে দেশে-বিদেশে এত মানুষ ছবি বা সিরিজ দেখতে পারেন, তাঁদের সময় মতো, সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানান, সেটাও অন্যরকম পরিতৃপ্তি। 'বুলবুল' যেমন একসঙ্গে ১৯০ টা দেশে দেখা যাচ্ছে। কলকাতার একটা গল্প, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। এই 'রিচ' তো থিয়েটার রিলিজ দিতে পারে না।
তাই দুটি মাধ্যমের আলাদা চার্ম আছে, দুটো মাধ্যমের সহাবস্থানেই চলচ্চিত্রের লাভ। একে অন্যের বিকল্প নয়। আমি আশাবাদী হল খুলবেই।

-তবে ওয়েব-প্ল্যাটফর্মে কনটেন্টের স্বাধীনতা তো বেশি...

ওটিটি নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। এত মানুষ কাজ করছেন, পাচ্ছেন, ভিন্ন ধারার গল্প আসছে। ক্রিয়েটিভ মানুষ হিসেবে আমি চাই এই নতুন নতুন অ্যাভিনিউ গুলো খুলে যাক। প্রত্যেক পরিচালক নতুন ধারার ভাবনা তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। ভাল কাজ করার প্রতিযোগিতা বাড়ছে। ভাল কাজ করলে প্রশংসা করবেনই দর্শক, সে যে প্ল্যাটফর্মই হোক না কেন। ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ক্রিয়েটিভ ফ্রিডমটা অনেক বেশি বলেই ভাল ভাল কাজ বেরিয়ে আসবে।

-ওটিটি-তে তো অনেক সাহসী কাজ হচ্ছে। মনে হয়, আপনার কোনও ছবি, অতীতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ করলে, অনেক সমালোচনা এড়াতে পারত?

আমি কী হলে, কী হতে পারত, ভাবি না খুব একটা। এরকম কোনও আফশোসও হয় না। সমালোচনা তো দর্শক বিশেষ হবেই। সবসময়ই হবে। আমরা তো দর্শকের জন্যই ছবি তৈরি করি। তাঁরা তাঁদের মতো করে প্রতিক্রিয়া জানান।

- মুম্বইতে ছবি করবেন না?


করব তো। অনেক কিছু নিয়ে কথা চলছে। ছবি, ওয়েব-ছবি, সিরিজ। কিন্তু এখনও সেগুলো নিয়ে কথা বলার সময় আসেনি। আস্তে আস্তে জানাব।

-  ইদানীংকালে ইনসাইডার-আউটসাইডার বিতর্কে সরগরম ইন্ডাস্ট্রি। আপনি তো এত বছর আগে মুম্বইতে কাজ করেছেন বিক্রম ভট্টের সঙ্গে। কখনও বহিরাগত বলে অন্যরকম ট্রিটমেন্ট পেয়েছেন?

এই ব্যাপারে একেক জনের একেকরকম অভিজ্ঞতা। আমি তো বিক্রম ভট্টের ফোন পেয়েই কাজ করতে গেছি। আবার বুলবুল-এর ক্ষেত্রেও তাই। আগেই আমি চরিত্রের জন্য নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলাম। কাজ খুঁজতে গেলে কী অভিজ্ঞতা হত বলে মুশকিল। তবে, আমার সঙ্গে যাঁদের আলাপ হয়েছে বলিউডে, তাঁরা প্রত্যেকেই বাংলা ছবি, সংষ্কৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট খোঁজখবর রাখেন ও শ্রদ্ধাও করেন বাংলার শিল্পীদের।

-  তাহলে স্বজনপোষণ বা আউটসাইডার ডিবেটে পাওলির মত কোনদিকে?

আমি এই বিষয়টা মানি না। যেটা বুঝি তা হল, ভাল শিল্পীরা ঠিক কাজ পাবেনই। কেউ রুখতে পারবে না।

-  পাওলির তাহলে কোনও আক্ষেপ নেই? কোনওদিন রিজেকশন আসেনি?


বহুবার প্রত্যাখ্যান এসেছে। কিন্তু প্রত্যাখ্যান নিয়ে অবসাদে ভুগলে তো কাজ না করে রোজ বাড়ি বসে কাঁদতাম।

- এখন তো আপনি প্রথমসারির অভিনেত্রী। তাই বলছেন...

তা কেন, এখনও অনেকসময় ঠিক যেমন চরিত্র করতে চাইছি, তেমনটা হয়ত পাচ্ছি না। কিংবা অনেক কাজ কথা হয়েও ম্যাচিয়র করে না। সেগুলো নিয়ে দুঃখ হলেও, ওই ঘণ্টাখানেকের জন্য। তারপর মনে রাখি না। বরং যে কাজ হাতে আছে, তাকেই দারুণ ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। নেগেটিভগুলোকেই পজিটিভ করে দেখতে শিখিয়েছে জীবন।

- কে এমন কী বলেছিল, যা ভেঙে পড়ার মতো ছিল...

কত কী, সব তো বলা যায় না। অভিনয়, স্কিন টোন। গায়ের রং নিয়ে তো কত নিষ্ঠুর কথাবার্তা শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস ছিল আজ অথবা কাল বা ৫ বছর পর হলেও মানসিকতার পরিবর্তন হবেই। আগে যো বিষয়টা ছিল, এরকম দেখতে হলে তাহলে মেনস্ট্র্রিম ছবির নায়িকা হতে পারবে, নইলে সমান্তরাল ছবিতে কাজ করতে হবে। এই সীমারেখাটা আর নেই।



- তাহলে ১০ বছর আগের পাওলি আর আগের পাওলির মধ্যে কী কী পরিবর্তন এসেছ?

অনেককিছু। এখন আমি অনেক ঠান্ডা মাথার মানুষ। ব্যক্তিগত জীবনে খুব ইমোশনাল ছিলাম। সহজেই রেগে যেতাম। মন খারাপ হত। সেটা অনেক কমে গেছে। এখন হুট করে রেগে যাই না। নিজের নেগেটিভ পয়েন্টগুলোও অ্যাকসেপ্ট করতে পারি। আর লকডাউন আমাকে অনেক কমপোজড করেছে।

- কর্মায় বিশ্বাসী?

অবশ্যই। তবে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে। তারপরেরটা তো আমার হাতে নেই। কারওরই হাতে নেই। তাই নিয়ে আক্ষেপ করে কী লাভ?



- অনেক ধরনের চরিত্রে তো অভিনয় করলে। কোন ধরনের চরিত্র এখন খুব করতে ইচ্ছে করে?

রোম্যান্টিক কমেডিতে অভিনয় করার ইচ্ছে। কিন্তু তেমন স্ক্রিপ্ট নিয়ে কেউ আসেননি এখনও।

-লকডাউন পাওলিকে নতুন কী কী দিল?

অনেকটা ঘুমের সময়। রান্না করার সময়। পরিবারের সঙ্গে ভাল করে কাটানো বেশকিছু মুহূর্ত।