তোর্ষা ভট্টাচার্য্য, কলকাতা: পার্ক স্ট্রিটের বার্কমাইয়ার হোস্টেল চত্বরে গেট ঠেলে পা রাখতেই চোখে পড়ল গাড়ির সারি। সেই সমস্ত পেরিয়ে, উঠোন পর্যন্ত এসেও তেমন কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ল না। একটা বিশাল হলঘরের একদিকে তৈরি করা হয়েছে কোর্টরুম। পরিচালকের খোঁজ করতেই একজন সহকারী ওপরে উঠে যেতে বললেন। পুরনো দিনের সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতেই বদলে গেল ছবিটা। দোতলার একটি ঘরকে চলছে হাসপাতালের শ্যুটিংয়ের দৃশ্য। শট বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক আর অন্যান্যদের সঙ্গে মন দিয়ে তা শুনে নিচ্ছেন 'কেমিস্ট্রি মাসি'। ক্লান্তি নেই, বিরক্তি নেই... ফ্যান বন্ধ করে একের পর এক শট নেওয়া চলছে। ১০ বছর পরে, তাঁকে অভিনয়ে ফেরালেন সৌরভ চক্রবর্তী (Sourav Chakraborty)... মনিটরে চোখ রেখে পরিচালক নির্দেশ দিলেন... 'দেবশ্রীদি, শটে যাব এবার.. অ্যাকশন'
জোরকদমে চলছে ওয়েব সিরিজ 'কেমিস্ট্রি মাসি'-র শ্যুটিং। মুখ্যভূমিকায় দেবশ্রী রায় (Debashree Roy)। একসময় রাজনীতির সৌজন্যে অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন তিনি। গত ১০ বছরে ছোটপর্দার একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন কেবল। আর কাজ ফিরিয়ে দিয়েছেন অজস্র। কিন্তু সুরচিতার চরিত্র শুনে তাঁর মনে হয়েছিল, ওয়েব সিরিজে পা রাখার জন্য এটাই বোধহয় সেরা চরিত্র। দুটো শটের মাঝখানে একটু জিরিয়ে নেওয়ার সময়। সেই ফাঁকে সেটেই এবিপি লাইভ (ABP Live) খোঁজ নিল দেবশ্রীর শ্যুটিং-পাঁচালির।
পর্দায় কেমিস্ট্রি পড়ালেও, ছোটবেলার নাকি রসায়ন একেবারেই পছন্দ ছিল না দেবশ্রীর! অভিনেত্রী বলছেন, 'সৌরভ যখন এই চরিত্রটা অফার করে, একটু ভয়ই পেয়েছিলাম। রসায়নের শিক্ষিকা মানে তো সাবলীল হতে হবে। তবে সৌরভ আর ঈশিতা বলেছিল, আমায় ছাড়া নাকি কাজটাই করবে না। শ্যুটিং প্রায় শেষ হয়ে এল। চেষ্টা করছি সুরচিতার চরিত্রটাকে ফুটিয়ে তোলার। সৌরভ ভীষণ সিরিয়াসলি কাজ করে। একটা সময় রাজনীতির জন্য অভিনয়ে একটা বিরতি নিয়েছিলাম। এখন মনে হয়, ক্যামেরার সামনেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি খুঁজে পাই। এটাই আসল আমি। গত ১০ বছরে প্রচুর কাজকে না বলেছি। তবে 'কেমিস্ট্রি মাসি'-র অফার ফেরাতে পারলাম না।'
সিরিজে দেবশ্রীর স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন শঙ্কর চক্রবর্তী। ছেলের ভূমিকায় রয়েছেন সপ্তর্ষী মৌলিক, মেয়ের ভূমিকায় ঋত্বিকা চক্রবর্তী। এদিন শ্যুটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন তাঁরাও। একাধিক দৃশ্যের শ্যুটিং নিয়ে চূড়ান্ত ব্যস্ত পরিচালক নিজেও। প্রত্যেকটা প্ল্যাকার্ড ঠিক জায়গায় আছে তো.. ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল বদলে গেল না তো দ্বিতীয় শটে.. গাড়িটা কী ঠিক জায়গায় এসে দাঁড়াল... সৌরভের নজর সমস্ত দিকে। তবে এত ব্যস্ততাতেও তাঁর ঠোঁটে লেগে রয়েছে পরিচিত হাসি। ওটাই বোধহয় কাজের তৃপ্তি।