তোর্ষা ভট্টাচার্য্য, কলকাতা: রহস্যের পরে হাসির মোড়কে নতুন গল্প বলার দায়িত্ব। আর তাই.. বক্স অফিসে এবার পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Dhrubo Banerjee)-র বাজি 'বগলা মামা-যুগ যুগ জিও' (Bogla Mama Jug Jug Jiyo)। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের (Kharaj Mukherjee)-র কাঁধে এই ছবির নামভূমিকার দায়িত্ব। অন্যান্য ভূমিকায় রয়েছেন, ঋদ্ধি সেন, দিতিপ্রিয়া রায়, কৌশিক সেন, রেশমি সেন, বিশ্বনাথ বসু, রজতাভ দত্ত ও অন্যান্যরা। বোলপুরে শ্যুটিং, বিভিন্ন বয়সের অভিনেতা অভিনেত্রী.. শ্যুটিং সেটের গল্প এবিপি লাইভকে (ABP Live) শোনালেন পরিচালক। 


কেন এবার হাস্যকৌতুক ছবি গল্প পছন্দ করেছিলেন ধ্রুব? পরিচালক বলছেন, 'বাঞ্চারামেরা বাগান, দাদার কীর্তি.. এই ধরনের ছবির পরে এমন নির্ভেজাল হাসির ছবি খুব কম তৈরি হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি সেই নির্ভেজাল কমেডিকে আবার বড়পর্দায় ফিরিয়ে আনতে। করোনা পরিস্থিতির পরে মানুষের জীবনে চাপ বেড়েছে, প্রাণ খোলা হাসির সুযোগ বড় কম। আমি চেষ্টা করেছি সেই সময়টাকে আবার পর্দায় ফিরিয়ে আনতে।'


ছবির মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন খরাজ.. তবে তিনি তো তথাকথিত নায়ক নন। ধ্রুব বলছেন, 'বাংলার কমেডি ছবি কোনোদিন তারকা-নির্ভর ছিল না। অভিনেতা নির্ভর ছিল।খরাজদা লুক-ব্যবহার সবই যেন বগলামামার এক্কেবারে বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা। এই ছবিটাকে আমরা একটা বিশেষ সময়কে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাঙালি যে নিজস্বতা নিয়ে বেঁচে এসেছে.. সেটাকেই ছবিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে আমাদের বগলামামা কেবল হাসায় না.. তিনি রক্তমাংসের মানুষ। তিনি হাসেন, কাঁদেন আবেগপ্রবণ হন... সবকিছুই।'


ছবি বানানো সময় সবসময়েই ছোটদের কথা মাথায় রাখেন ধ্রুব? সম্মতি জানিয়ে ধ্রুব বলেন, 'অবশ্যই। আমাদের তো নতুন দর্শক তৈরি করতে হবে। এই ছবি আট থেকে আশি সবার জন্যই। একসময় ছোটরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, বাংলা ছবি তাদের জন্য নয়। আমার মনে হয় বড়দের ছবি-ওয়েব সিরিজের জন্য ওটিটি রয়েছে। বড়পর্দার ছবি সবসময় সবার কথা মাথায় রেখে বানানো উচিত বলে আমার মনে হয়।'


শ্যুটিংয়ে বিভিন্ন বয়সের অভিনেতারাই ছিলেন শ্যুটিংয়ে। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? ধ্রুব বলছেন, 'বোলপুরের ৫০ ডিগ্রি গরমে শ্যুটিং হয়েছে আমাদের। কিন্তু ২৪ দিনের একটা পিকনিক ছিল যেন। শ্যুটিংয়ের আগে একমাসের ওয়ার্কশপও করেছি আমরা। শ্যুটিংয়ের মধ্যে একদিন হঠাৎ শিলাবৃষ্টি.. আমাদের ক্যাম্প ভেঙে গেল.. সমস্ত কস্টিউম কাদার নিচে। অবাক হয়ে দেখেছিলাম, অভিনেতা অভিনেত্রী থেকে শুরু করে অন্যান্য কলাকুশলীরা.. সবাই হাত লাগিয়ে সমস্ত কিছু ঠিক করে ফেলল। কয়েক ঘণ্টা পরে আমরা শ্যুটিং করছে এমনভাবে যেন কিছুই হয়নি। শ্যুটিং শেষের দিন সবার চোখ ছলছল করছিল.. যেন ওরা স্কুলের বন্ধু।'


খরাজ মুখোপাধ্যায়কে ঘিরেই এই ছবি.. কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে পর্দার বগলামামাকে? পরিচালক বলছেন, 'খরাজদাকে পাগলের মতো খাটিয়েছি। তবে গোটা টিমে এত এনার্জি ছিল যে সবাই প্রাণ ঢেলে কাজ করেছেন। খরাজদার জন্য বডি ডাবল ছিল সবসময়, তবে উনি সেটা প্রায় ব্যবহারই করেননি। আসলে সবাই একসঙ্গে ভাল কাজ করলে সেটা পর্দাতেও দেখা যায়। আমি ছবি বানাই এটা ভেবে, ১০ বছর পরে মানুষ এই ছবিটা দেখবে তো? আমার কাছে ছবি গ্রহণযোগ্যতার মূল মাপকাঠি এটাই।'


একের পর এক ছবি করছেন ধ্রুব ও সবটাই এসভিএফের সঙ্গে। অন্য প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কী কাজ করবেন না ধ্রুব? পরিচালক বলছেন, 'শ্রীকান্তদা জানত এটা একটা ঝুঁকির ছবি। কিন্তু উনি আমায় বলেছিলেন, ছবি পরিকল্পনা করার সময় যেন বাজেটের কথা আমি না ভাবি। আমি যেভাবে ছবি বানাতে চেয়েছি সবসময় সেটার জন্য সমর্থন পেয়েছি এসভিএফের থেকে। এখন এসভিফের বাইরে গিয়ে কাজ করলে তো আর সম্পর্কের মূল্যই থাকবে না। বগলামামা নিয়েও আমার ফ্রাঞ্চাইজি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আমি নিজেকে কোনও জঁরে বাঁধতে চাই না। কমার্শিয়াল ছবির নিজের ধারা আনার চেষ্টা করছি।'


আরও পড়ুন: Kanchan-Sreemoyee:সেটে যাওয়ার ব্যস্ততা নেই... ব্যক্তিগত সময় কীভাবে কাটাচ্ছেন কাঞ্চন-শ্রীময়ী?