দেহরাদূণ: নির্মাণকার্য চলাকালীন ভেঙে পড়ে নির্মীয়মান সুড়ঙ্গ। ভোররাতে দুর্ঘটনা ঘটলে ভিতরেই আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। তার পর ১২ দিন হতে চলল, উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে জাতীয় সড়কের উপর নির্মীয়মান ওই সুড়ঙ্গে এখনও উদ্ধারকার্য চলছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা। কিন্তু ধ্বংসাবশেষ থেকে শ্রমিকদের বের করে আনতে এত সময় লাগছে কেন, তা ব্যাখ্যা করলেন বিশেষজ্ঞরা। (Uttarakhand Tunnel Rescue Operations)


ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে সিল্কয়ারা এবং ডন্ডালগাঁওকে সংযুক্ত করতে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ চলছিল সেখানে। সেই কাজ চলাকালীনই গত ১২ নভেম্বর ভোরে ওই নির্মীয়মান সুড়ঙ্গটির প্রবেশ পথ থেকে ১৫০ মিটার দীর্ঘ অংশ ভেঙে পড়ে। বুধবার রাতে উদ্ধারকার্য গতি পায়। বৃহস্পতিবারই তা সম্পন্ন হতে পারে বলে আশাবাদী উদ্ধারকারীরা। (Uttarakhand Tunnel Collapse)


উদ্ধারকার্যে এত সময় লাগার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভৌগলিক ভাবে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে পড়ে উত্তরাখণ্ড। পাহাড় ফুঁড়ে তৈরি ওই সুড়ঙ্গে উদ্ধারকার্য চালানো তাই যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। পান থেকে চুন খসলেই ধসে পড়তে পারে পাহাড়ের অংশবিশেষ। সমতলে গ্যাস কাটার বা ড্রিল মেশিন দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে যেমন উদ্ধারকার্য চালান হয়। পার্বত্য এলাকায় সুড়ঙ্গের ভিতর তা কার্যত অসম্ভব।


আরও পড়ুন: Uttarakhand Tunnel Collapse: মাত্র কয়েক মিটারের ব্যবধান, উত্তরাখণ্ডে সুড়ঙ্গে প্রবেশ উদ্ধারকারীদের, শ্রমিকদের বেরিয়ে আসার অপেক্ষা


বরং ড্রিল মেশিন চালাতে গিয়ে কয়েক দিন আগে সুড়ঙ্গের ছাদে ফাটল ধরে, তা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাতে আটকে পড়া শ্রমিকদের জীবিত অবস্থায় ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হতো।  ফলে তীব্র শব্দে ফাটল ধরার সঙ্গে সঙ্গেই ড্রিল চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাহাড় ভেদ করে উল্লম্ব ভাবে গর্ত খোঁড়া শুরু হলেও, সেখান দিয়ে শ্রমিকদের বের করে আনার অত্যন্ত কঠিন কাজ।


সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের উদ্ধার করে আনার কাজটি মূলত প্রযুক্তিনির্ভর। সকলকে নিরাপদে বের করে আনতে তাই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে ৮০০ মিলিমিটার ব্যাসযুক্ত একটি স্টিলের পাইপ ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, যাতে ওই পাইপের মধ্যে দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন আটকে পড়া শ্রমিকরা।


কিন্তু সেই কাজেও যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে। ১২ দিন ধরে ওই সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা। মূলত জল আর ড্রাফ্রুটস খেয়েই বেঁচে রয়েছেন তাঁরা। পরে সরু পাইপ দিয়ে গরম খিচুড়ি পাঠানো হলেও, পর্যাপ্ত পুষ্টি যায়নি তাঁদের শরীরে। তাই পাইপের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে তাঁরা আদৌ বেরিয়ে আসতে পারবেন কিনা, আদৌ তাঁদের শরীরে সেই শক্তি রয়েছে কিনা, তা নিয়েও ধন্দ দেখা দেয়। সেই কারণেই উদ্ধারকারীরা ভিতরে ঢুকে এক এক করে শ্রমিকদের বাইরে পাঠাবেন বলে ঠিক হয়েছে। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাঁকে স্ট্রেচারে শুইয়ে বের করে আনার ব্যবস্থাও করেছেন উদ্ধারকারীরা।


৮০০ মিলিমিটার ব্যাসের ওই পাইপ সুড়ঙ্গের ভিতরে ঢোকাতে, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ৯০০ মিলিমিটার ব্যাসযুক্ত গর্তও খুঁড়তে হচ্ছে। বুধবার রাত পর্যন্ত সেই গর্ত খোঁজার কাজ ৬৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছিল। ধ্বংসস্তূপের ৫৭ মিটার ভিতরে আটকে পড়েছেন শ্রমিকরা। বুধবার রাত পর্যন্ত ৩৯ মিটার খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল আরও ১৮ মিটার।  শুধু গর্ত খুঁড়লেই হল না। গর্ত খুঁড়ে হয়ত পাইপ ঢুকিয়েও দেওয়া হল। কিন্তু বেরনোর সময় হুড়মুড়িয়ে তার উপর ভেঙে পড়তে পারে সুড়ঙ্গের ছাদ। সেই বিপদ আঁচ করে গর্তের চারিদিকে বেড়া দেওয়ার মতো করে মজবুত কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে সুড়ঙ্গের ছাদ হুড়মুড়িয়ে পড়লেও, ওই কাঠামোয় বাধা পায় পাথরের চাঙর। তাতে পাইপ চেপ্টে গিয়ে চাপা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না শ্রমিকদের।


এই গোটা পরিকল্পনায় বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উড়িয়ে আনা হয়েছে ইতিমধ্যেই। উদ্ধারকার্যের পরিকল্পনা থেকে পরিস্থিতির তদারকি, দায়িত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক এবং ভারতীয় সেনার ইঞ্জিনিয়াররা। মেপে মেপে পা ফেলছেন তাঁরা। তাতেই উদ্ধারকার্যে এত সময় লাগছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।