কলকাতা: ছেলেবেলাটা কেটেছে খুবই রক্ষণশীলতার মধ্যে দিয়ে। একান্নবর্তী পরিবারে বাবা-কাকার কড়া শাসনে বেড়ে ওঠা। তার মধ্যেও ছোটবেলার পুজোর অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিয়েছেন অভিনেত্রী অদ্রিজা রায়। এবিপি লাইভকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন এমনই কিছু ছেলেবেলার গল্প। 


অদ্রিজা বড় হয়েছেন দক্ষিণেশ্বরে। তবে তাঁর আদিবাড়ি শোভাবাজার রাজবাড়ির একেবারে কাছেই। 'ছোটবেলায় দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী কাটাতাম আর অষ্টমী, নবমী, দশমী কাটত শোভাবাজারের বাড়িতে।' একান্নবর্তী পরিবারের সন্তান হওয়ার ফলে পুজোয় প্রচুর নতুন জামা হত। ফলে সকাল-বিকেল নতুন নতুন জামা পরে বেরনো ছিল মাস্ট, জানাচ্ছেন তিনি। 


অদ্রিজার কথায়, 'আমার পরিবার একটু কনসার্ভেটিভ। ফলে গোটা ছেলেবেলাই পরিবারের সকলের সঙ্গে পাড়ার পুজোতেই কেটেছে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে বেরনোর অনুমতি একেবারেই ছিল না। ক্লাস নাইন-টেনের পর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে বেরোতে পারতাম। তাও ডেডলাইন ছিল রাত সাড়ে ন'টা। ওই সময়ের মধ্যে পাড়ায় চলে আসতেই হত, সে আমি যেখানেই থাকি না কেন।'


'ছোটবেলায় পুজোর সময়ে ফুচকা খাওয়ার প্রতিযোগিতা করতাম। ওটার একটা আলাদা আনন্দ ছিল। তাছাড়া মেলার প্রতি আমার একটা অন্যরকম টান আছে চিরকাল। প্রত্যেক বছর 'সিঁথির মোড়ের মেলা'য় আমি নিয়ম করে যেতাম। এমনকী গত বছর করোনার জন্য হয়ে ওঠেনি, কিন্তু তার আগের বছর পর্যন্তও গেছি। মেলায় গিয়ে ফুচকা, ভেলপুরি এসব খাওয়া তো ছিলই, আর সঙ্গে রাইডস। দোলনা চড়তে আমি প্রচণ্ড ভালবাসি,' হাসতে হাসতে বলেন অভিনেত্রী।


ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ হয়ে ওঠার পর পুজো অন্যরকম কাটে এখন ঠিকই। তবে ছোটবেলায় বেশ কড়া নিয়মেই কাটিয়েছেন অদ্রিজা। তাঁর কথায়, 'বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সেভাবে কখনওই পুজো কাটাতে পারিনি। কাকা-কাকিমার কাছেই বড় হয়েছি। তাঁরা সারারাত ধরে ঠাকুর দেখা একেবারেই পছন্দ করতেন না। কিন্তু মা-বাবার কাছে এলে সারারাত ধরে ঠাকুর দেখা হত, ওটাই আসল মজার জিনিস ছিল। নবমীর রাতে, পুজোর শেষ দিনে, বাবার বন্ধুদের পরিবারের সঙ্গে দল বেঁধে বের হতাম।'


কড়া শাসন ভাঙতে গিয়ে বিপদেও পড়েছেন অনেক সময়ে। নিজেই শোনালেন নবম শ্রেণির কীর্তি, 'বাড়ি থেকে বলে দিয়েছিল দশম শ্রেণির বোর্ডস পরীক্ষা হয়ে গেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যেতে পারি। আমাদের স্কুলে পঞ্চমীর দিন স্কুল ইউনিফর্মের বদলে রঙিন পোশাক পরে যাওয়া যেত। নবম শ্রেণির পঞ্চমীর দিন বাড়িতে বলেছিলাম দুপুর ২টোয় ছুটি হবে। আসলে ১২টায় ছুটি ছিল সেদিন। স্কুল থেকে বেরিয়ে কাছেই নতুন একটা কফির দোকান খুলেছিল, বন্ধুরা মিলে সেখানে গিয়েছিলাম। একা একা অটো করে কফিশপে গিয়ে পুজোর সময় কফি খাওয়া, তখন ওটাই বিলাসিতা আমাদের কাছে। এরপর রাস্তা পেরিয়ে সামনের সুপারমার্কেটে যাই। প্রথমবার বন্ধুরা মিলে বেরিয়েছি, উৎসাহ প্রচুর। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই দেখি আমার কাকা। আমার তখন ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা। আমি নিশ্চিত কাকা দেখতে পেলেই মার খেতে খেতে বাড়ি ফিরতে হবে। শেষ পর্যন্ত ম্যানেক্যুইনের পিছনে লুকিয়ে সে যাত্রা রক্ষা পেয়েছিলাম। কীভাবে যে সেদিন বাড়ি ফিরেছি আমিই জানি।' পরে অবশ্য এই কাণ্ড গল্প করেছেন বাড়িতে। এছাড়া রাতে বাড়ির বাইরে থাকারও অনুমতি ছিল না। তাই লুকিয়ে ছাদের পাঁচিল টপকে বেরিয়েছিলেন বন্ধুদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে। সেইবারেও কাকার হাতে ধরা পড়তে পড়তে যা হোক করে বেঁচে যান অদ্রিজা। এখন হাসতে হাসতে গল্প করলেও সেই সময়ে বেশ ভয় পেয়েছিলেন তিনি। খানিক অ্যাডভেঞ্চারও বটে! এখন একা থাকার জন্য সেই লুকিয়ে বেরনোরও আর প্রয়োজন পড়ে না, আর বড় হয়ে যাওয়ায় সব বাড়িতে জানিয়েই করা যায়। ফলে ওই সমস্ত মজার মুহূর্ত বেশ মিস করেন তিনি। 


আরও পড়ুন: Durga Puja 2021 Special: 'বাবাকে বললাম, লোকাল প্রেম পুজোর পর দশমীতেই বিসর্জন হয়ে গেছে' ছোটবেলার স্মৃতিতে ডুব অপরাজিতার


এছাড়া পুজোর সময়ে পাড়ার প্যান্ডলে যাওয়ার অন্য একটা টানও ছিল তাঁর। 'খানিক বড় হওয়ার পর বুঝতে পারতাম যে পাড়ার দাদারা আমার দিকে তাকাচ্ছে, দেখছে আমাকে। তাই পুজোয় পাড়ার প্যান্ডলে যেতে খুব ভালবাসতাম। তবে ওইটুকুই। সেই কয়েক মুহূর্তের খানিক ভাল লাগা, ব্যাস!'


মহালয়ার দিনে 'জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী' গানের সঙ্গেই পুজো শুরু হয়ে যায় অদ্রিজা রায়ের। তবে এবছরে তাঁর প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে গোটা পুজোই কলকাতার বাইরে কাটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। অভিনেত্রীর কথায়, 'নতুন ধারাবাহিকের কাজ শুরু হয়েছে। তাই পুজোর পর বেশি ছুটি পাব না। ফলে পুজোর মধ্যেই ঘুরে আসতে হবে।'


আরও পড়ুন: দুর্গাপুজোয় পাঁঠাবলির সময় ভয়ে দোতলার বারান্দায় লুকিয়ে পড়তাম: শুভাশিস