কলকাতা : ' বাবার কাঁধে উঠে ঠাকুর দেখতাম। হাওড়ার মেয়ে আমি। ছোটবেলার সব থেকে প্রিয় ঠাকুর দেখা ছিল অন্নপূর্ণা ব্যায়াম সমিতি আর জাতীয় সেবাদল। অন্নপূর্ণার মণ্ডপে গিয়ে মা দুর্গার চকচকে মুখটা হাঁ করে তাকিয়ে দেখতাম। অবাক হয়ে। আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম ঝাড়লণ্ঠনটার দিকে। এখনও ওই ঝাড়টাই লাগানো হয় মণ্ডপে। কিন্তু সময়টা অনেক বদলে গেছে। ' ছোট্টবেলার ঠাকুর দেখার স্মৃতি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য (Aparajita Auddy)।


রাত ৯ টায় বাড়ি ফিরতেই হবে :
ছোট্ট বেলা পেরিয়ে যখন একটু উঁচু ক্লাসে উঠলাম, তখন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঠাকুর দেখার অনুমতি মিলল। কিন্তু সময় বেঁধে দেওয়া। সন্ধে ৬টা থেকে ৯ টা। আমার বাড়ির নিয়ম খুব কড়া বরাবর ! যাই হোক না কেন ৯টায় বাড়ি ঢোকা মাস্ট ! তাই আমি যখন বাড়ি ফিরে আসতাম, তখন তো সবাই ঠাকুর দেখতে বের হচ্ছে। আরেকটা কথা না বললেন নয় ! নতুন জুতো পরে ফোস্কা পড়া। সেই জুতো হাতে করে নিয়ে ফিরতাম। জুতো ছিঁড়ল তো কী হয়েছে ! খালি পায়েই ঠাকুর দেখে ফেলতাম !

বন্ধুদের সঙ্গে জামাকাপড় ভাগাভাগি : 
আমাদের ছোটবেলায় তো প্রচুর জামাকাপড় হত না পুজোয়। কারও দুটো, কারও তিনটে। তাই বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে এক্সচেঞ্জ করে জামা পরতাম। যে জামা আমি অষ্টমীতে পরলাম, মালা পরল নবমীতে। আর আমি পরলাম মালার অষ্টমীর জামাটা। এখনও আমি কোনও ভাল শাড়ি কিনলে একবার আমি পরার পর বন্ধুরা সেটা নেয় ও পরে। আমার স্কুলের বন্ধুরাই একমাত্র বন্ধুদের দল। 

পুজোয় প্রেম : 
আমি পড়তাম হাওড়ার তারাসুন্দরী গার্লস স্কুলে। আমাদের স্কুলের মেয়েদের প্রতি ছেলেদের একটা আকর্ষণ ছিল।  সেটা বুঝতে পেরে মজাই লাগত। একসঙ্গে ঘুরতে গেলে কোথায় বাবা - দাদাদের বন্ধুদের চোখে ধরা পড়ে যাব, তাই মেয়েদের দলের পিছু পিছু আলাদাই ঘুরত ছেলেদের দল। তাদের নিয়ে নানারকম কথাবার্তা হত, সেটাই মজা লাগত। একবার এমন করেই দল বেঁধে ঘুরছিলাম। কেউ বাবাকে জানিয়ে দেয়। বাবা যখন জিগ্যেস করলেন, আমি তো স্মার্টলি উত্তর দিলাম ...ওটা লোকাল প্রেম, দশমীতেই বিসর্জন হয়ে গেছে। 

পুজোয় এগরোল, ফুচকা : 
তখন তো বেশি হোটেল, রেস্টুরেন্ট ছিল না, কিন্তু ঝাঁঝাল কোল্ডড্রিঙ্ক রিমঝিম, গোল্ডস্পট আর ফুচকা-এগরোলই ছিল স্বর্গ !


বিয়ের পর দেদার মজা !
ক্লাস টেনে উঠলাম যখন বাবা মারা গেলেন। জীবনটা এক্কেবারে বদলে গেল। উচ্চমাধ্যমিকের পরই আমার বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পরই আমার প্রথম কলকাতার ঠাকুর দেখা। শ্বশুরবাড়িতে সময়ের তেমন কোনও রেস্ট্রিকশন ছিল না। রাতভর ঠাকুর দেখা হত। হুল্লোড় ছিল। 

তারপর অভিনয়ের সৌজন্যে জীবনটা কখন যেন পাল্টে গেল। তখন পুজো মানেই ফিতে কাটা এল, বিচারকের ভূমিকায় মণ্ডপে মণ্ডপে যাওয়া শুরু হল। সেটার অন্যরকম থ্রিল আছে ঠিকই, কিন্তু ছোটবেলার পুজোর নিষ্পাপ, নির্ভেজাল আনন্দের কোনও তুলনা হয় না। এখনও পুজোয় বাড়িতে অনেক আত্মীয় স্বজন আসেন, খাওয়া দাওয়া আড্ডা হয়। তবে করোনার পর তো সবটাই বলে গেল ! গতবছর তো ষষ্ঠীর দিন করোনা হল। এইবছর হারালাম শ্বশুরমশাইকে। তাই পুজোর আড়ম্বরটা একদম মিসিং।