কলকাতা: কিরণ রাওের 'লাপতা লেডিজ' এবং রণদীপ হুডার 'স্বতন্ত্র বীর সাভারকর' এই দুটি ছবিই এবার অস্কারের দৌড়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছে। অ্যাকাডেমি অ্য়াওয়ার্ডের ইতিহাসে
কোন কোন ভারতীয় ছবিগুলি চূড়ান্ত তালিকা পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিল? দেখুন, অস্কারের মঞ্চে ভারতীয় সিনেমার সফর-কাহিনি।
অস্কারের দৌড়ে ভারতীয় সিনেমা header ৯৭ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের সেরা বিদেশি ছবি বিভাগে ভারতের অফিসিয়াল এন্ট্রি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে কিরণ রাও পরিচালিত 'লাপতা লেডিজ'।
ছবিটির মূল কাহিনি লিখেছেন সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তনী, কলকাতার বাসিন্দা বিপ্লব গোস্বামী। ভারতীয় ছবি হিসেবে অস্কারের জন্য অফিসিয়াল এন্ট্রি
পাওয়ার দৌড়ে 'লাপতা লেডিজ'-কে লড়তে হয়েছে ১২টি হিন্দি ছবি, ৬টি তামিল ছবি, চারটি মালয়ালম ছবি, তিনটি মরাঠী এবং একটি ওড়িয়া ছবির সঙ্গে।
এই দীর্ঘ তালিকায় 'অ্যানিমাল', 'কল্কি - টু এইট নাইন এইট এডি', 'থাঙ্গলান', 'শ্রীকান্ত', জাতীয় পুরস্কার জয়ী মালয়ালম ফিল্ম 'অট্টম', কান চলচ্চিত্র উৎসবে গ্র্যাঁ প্রি জয়ী 'অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট'-এর মত ছবিও ছিল। অস্কারের মঞ্চে তিনটি ভারতীয় ছবি সেরা বিদেশি বিভাগের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছে এখনও পর্যন্ত। ১৯৫৭ সালে মেহবুব খান পরিচালিত 'মাদার ইন্ডিয়া', ১৯৮৮ সালে মীরা নায়ার পরিচালিত 'সালাম বম্বে!', এবং ২০০১ সালে আশুতোষ গোয়াড়িকর পরিচালিত 'লগান' অস্কারের মঞ্চে 'সেরা বিদেশি ছবি' বিভাগের চূড়ান্ত তালিকায় মনোনয়ন পেলেও পুরস্কার জিততে পারেনি।
সত্যজিৎ রায় একমাত্র ভারতীয় পরিচালক যাঁর তৈরি ছবি তিনবার ভারতের অফিসিয়াল এন্ট্রি হিসেবে অস্কারের দৌড়ে সামিল হয়েছিল। ১৯৫৯ সালে 'অপুর সংসার', ১৯৬৩ সালে 'মহানগর', ১৯৭৮ সালে 'শতরঞ্জ কে খিলাড়ি' সেরা বিদেশি ছবি বিভাগে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এই ছবিগুলি অস্কার জিততে না পারলেও সিনেমায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে কলকাতায় তাঁর হাতে সাম্মানিক অস্কার তুলে দেওয়া হয় অ্যাকাডেমির তরফে।
২০২৩ সালে এসএস রাজামৌলির ছবি 'আরআরআর' 'সেরা অরিজিনাল সং' বিভাগে অস্কার জিতেছিল। কিন্তু সেরা বিদেশি ছবি বিভাগে 'আরআরআর' ভারতের অফিসিয়াল এন্ট্রি ছিল না। পান নালিন পরিচালিত গুজরাতি সিনেমা 'লাস্ট ফিল্ম শো' ভারতীয় ছবি হিসেবে অস্কারের দৌড়ে শর্টলিস্টেড হলেও ছবিটি চূড়ান্ত তালিকায় পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। ২০২৩ সালে দু'টি ভারতীয় তথ্যচিত্র অ্যাকডেমি অ্যাওয়ার্ডসের চূড়ান্ত তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছিল। শৌনক সেন পরিচালিত 'অল দ্যাট ব্রিদস' সেরা ডকুমেন্টরি ফিচার ফিল্ম বিভাগে এবং কার্তিকী গঞ্জালভেস পরিচালিত
'দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স' সেরা ডকুমেন্টরি শর্ট বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। 'দ্য এলিফ্যান্ট হুইস্পারার্স' সেরা ডকুমেন্টরি শর্ট হিসেবে অস্কারও জিতে নেয়।
'অল দ্যাট ব্রিদস'-এর আগে ২০২১ সালেও ভারতীয় তথ্যচিত্র, সুস্মিত ঘোষ ও রিন্টু থমাস পরিচালিত 'রাইটিং উইথ ফায়ার' অস্কারের সেরা ডকুমেন্টরি ফিচার ফিল্ম বিভাগের চূড়ান্ত তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছিল। এবছর সেরা ডকুমেন্টরি ফিচার ফিল্ম বিভাগে চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল নিশা পাহুজা পরিচালিত তথ্যচিত্র 'টু কিল আ টাইগার'। ১৯৭৮ সালে অস্কারের সেরা অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম বিভাগে চূড়ান্ত তালিকায় মনোনীত হয়েছিল ইশু পটেল পরিচালিত ছবি বিড গেম।
১৯৭৯ সালে কে কে কপিল পরিচালিত তথ্যচিত্র 'অ্যান এনকাউন্টার উইথ ফেসেস' সেরা ডকুমেন্টরি শর্ট বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল। ২০০৫ সালে অশ্বিন কুমার পরিচালিত 'লিটল টেররিস্ট'
ছবিটি 'সেরা লাইভ অ্যাকশন শর্ট' বিভাগে চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল। গীতিকার বম্বে জয়শ্রী 'লাইফ অফ পাই' ছবিটির জন্য সেরা
অরিজিনাল সং বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০২০ সালে স্মৃতি মুন্দ্রা সেরা ডকুমেন্টরি শর্ট বিভাগে মনোনয়ন পান 'সেন্ট লুইস সুপারম্যান' তথ্যচিত্রটির জন্য।
সত্যজিৎ রায় ছাড়া অস্কারজয়ী ভারতীয়দের তালিকায় রয়েছেন ভানু আথাইয়া, এ আর রহমান, গুলজার, রসুল পুকুট্টি, এম এম কিরাভানি, চন্দ্র বোস, কার্তিকী গঞ্জালভেস এবং গুনীত মোঙ্গা। ৯৭ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৪ নভেম্বর। ১৭ ডিসেম্বর অ্যাকাডেমির তরফে সেরা বিদেশি ছবি বিভাগের সিনেমাগুলির শর্টলিস্ট প্রকাশ করা হবে। ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫-এ প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত তালিকা। ২ মার্চ, ২০২৫-এ বিজয়ীদের হাতে অস্কার তুলে দেওয়া হবে।