কলকাতা: থামল ছন্দ, তাল কাটল তবলার। প্রয়াত উস্তাদ জাকির হোসেন, জানানো হল শিল্পীর পরিবারের তরফে। আমেরিকার হাসপাতালে আইসিইউ-তে ভর্তি ছিলেন কিংবদন্তী তবলা-শিল্পী। ৭৩ বছরে প্রয়াত কিংবদন্তী তবলা-শিল্পী জাকির হোসেন। হার্টের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত জাকির হোসেন, পেয়েছিলেন ৪টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড।গভীর শোকপ্রকাশ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী, রাজস্থানের মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌরের। কিংবদন্তী তবলা-বাদক আল্লা রাখার সন্তান উস্তাদ জাকির হোসেন।


আজ, কিংবদন্তি শিল্পীর প্রয়াণে সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লা বলছেন, 'খবরটা আমার কাছে বজ্রপাতের মতোই মনে হল। ওঁর গুণ নিয়ে আমার বিশেষ কিছু বলার অধিকার নেই। আমার ব্যক্তিগত জীবনেও ওঁর অনেক প্রভাব ছিল। সঙ্গীত মহলে ও যে কী ছিল... আমার মনে হয় জাকিরের কথা বলতে যাওয়াটাই আমার ধৃষ্টতা। ব্যক্তিগতভাবে ও আমায় ভীষণ ভালবাসতো। ওঁর বাবাও আমায় ভীষণ ভালবাসতেন। কিছুদিন আমি ওঁর বাবার কাছে গান শিখেছিলাম। সেই সুবাদে কলকাতায় এলেই ও আমায় খুঁজত। দিদি তো দিদিই। একবার ও তবলা নিয়ে তৈরি.. বাজাতে আরম্ভ করবে। হঠাৎ যেই আমায় দেখল, উঠে এসে একটা প্রণাম করে গেল। ছোট ছোট অনেক ঘটনা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে জীবনের একটা ক্ষতি হয়ে গেল। আমার ছোট ভাই সিদ্ধার্থ, ওও মারা গেল। সেই কষ্ট সহ্য করতে না করতেই আবার এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল। জাকির নেই আমি ভাবতেই পারছি না। আমার ওর সঙ্গে সম্পর্কটা বড্ড পারিবারিক। জাকির তবলায় হাত দিলে আর কারও তবলা আমার শুনতে ভাল লাগত না। ওর গুণপনা আমার বলার অধিকার আছে বলেই মনে করতে পারছি না। মানুষটা যে কত ভাল ছিল, সেটা যখন ও আমাদের সঙ্গে কথা বলত, বুঝতে পারতাম।'


উস্তাদের মৃত্যু নিয়ে বাংলার তবলাবাদক শিল্পী বিক্রম ঘোষ (Bickram Ghosh) বলছেন, 'বলার কিছুই নেই। জাকির হোসেনের  (zakir hussain) চলে যাওয়া একটা যুগবসান। তবলা যারা বাজায় তাদের জন্য তো বটেই, পৃথিবীর যত মিউজিশিয়ান রয়েছেন, ওঁর মতো গ্লোবাল আইকন ছিলেন না। উনি চলে যাওয়ার ফলে ভারতীয় মিউজিকের যা ক্ষতি হল সেটা অপূরণীয়। নিজের কথা বলতে পারি, আমার সঙ্গে তো ভাই-দাদার সম্পর্ক ছিল। আমেরিকায় একসময় একই বাড়িতে থাকতাম। সেখান থেকেই সারা জীবনের মতো ভাব-ভালবাসা হয়েছিল। মঞ্চে উনি আমায় বিভিন্ন জিনিস শিখিয়েছেন। এমনকি আমার ফিউশন মিউজিকে যাওয়ার পিছনেও ওঁর অবদান রয়েছে। উনি বলেছিলেন, 'তোমায় সবার থেকে আলাদা হতে হবে।' কত শিক্ষা, কত অনুপ্রেরণা। আমি এখন গোয়ায় রয়েছি। গতবছর ঠিক এই সময়ে গোয়ায় সন্ধেটা একসঙ্গে কাটিয়েছিলাম। ওঁর আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। অন্তত আরও ১৫ বছর। সেই শিল্পী ৭৩ বছর বয়সে এভাবে চলে গেলেন আর কিছুই বলার নেই। এটা বিশাল ক্ষতি। ভারতবর্ষে এমন শিল্পী কল্পনা করা যায় না। তবলাকে উনি যেখানে পৌঁছে গিয়েছেন সেটা অকল্পনীয়। এটা ব্যক্তিগত ক্ষতি। এটা গোটা পৃথিবীর ক্ষতি।'


আরও পড়ুন: Bickram Ghosh on Zakir Hussain: 'আমার সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল', জাকির হোসেনের প্রয়াণের খবর পেয়ে বললেন বিক্রম ঘোষ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।