কলকাতা : করোনাকালে বিপর্যস্ত মানুষ। রোগের আতঙ্ক। মৃত্যু ভয়। সেই সঙ্গে দারিদ্র্যের খাঁড়া।  কেউ ফেরিওয়ালা, কেউ রাজমিস্ত্রি, কারও আবার দোকানে কাজ। করোনা কালে অনেক কাজকর্মই বন্ধ। তার উপর আবার লকডাউনের থাবা।দু-বেলা পেট ভরে খাওয়া এখন অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো ! এই পরিস্থিতি মনে করায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা এই লাইনগুলি।


'' মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও,
এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও,
মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।''


 অন্তরের এই ডাকেই সাড়া দিয়েছেন অভিনয় জগতের এই ত্রয়ী। সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায়, নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।  পশ্চিমবঙ্গে কার্যত লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই টালিগঞ্জের শুটিং বন্ধ। কিন্তু এই সময় চরম ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন  সৌগত, ভাস্ব‍র,  অভিনেত্রী নয়নারা।  

এবিপি লাইভ এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, গত বছর থেকেই তিনি ও তাঁর স্ত্রী নয়না ব্যক্তিগত উদ্যোগেই প্রতিদিন বেশকিছু মানুষজনকে দু'মুঠো অন্ন দেওয়ার চেষ্টা করেন । শহরের কয়েকটি বস্তি অঞ্চলে গিয়ে তাঁরা  এই কাজ করেন।  প্রতিদিন কোথাও-না-কোথাও সৌগত ও নয়না পৌঁছে যান খাবার নিয়ে। রান্নার দায়িত্বে থাকেন তাঁদেরই পরিচিত কেউ । ভাত ডাল সবজি কখনো বা মিষ্টিও দিয়ে থাকেন তাঁরা। নিজেরা কোনও কারণে উপস্থিত না থাকলেও রান্নার উপকরণ পৌঁছে দিতে দেরি হয় না।  সম্প্রতি সৌগত নয়নার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়েরও। তিনি গতবছরের মতো এ বছরও লকডাউন চলাকালীন কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরেফিরে প্রতিদিন পঞ্চাশের বেশি গরিব মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন। অভিনেতা তাঁর মায়ের স্মরণে "অপর্ণা ফাউন্ডেশন" নামে একটি সংস্থা চালান। সেই সংস্থার ব্যানারেই এই আয়োজন । তিনি জানালেন আগে এই সংস্থার মাধ্যমে গরিব মানুষদের কিছু জামাকাপড় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতেন , কিন্তু এই বছর পাড়ার ছেলেরা এসে আবেদন জানান করোনাকালে গরীব মানুষদের জন্য কিছু করার জন্য । ভাস্বরও হাত বাড়িয়ে দেন সঙ্গে সঙ্গেই। প্রতিদিনই তাঁর সামর্থ‍্য মতো বেশ কয়েকজনকে দুবেলা-দুমুঠো খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন । অভিনেতা জানালেন , শহরে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে খাবার খাওয়ানোর দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে ঠিকই , কিন্তু গরিব মানুষগুলোর কাছে গেলে জানা যায় , দিনের বেলা তবুও বা খাবার জোটে, কিন্তু রাতে খাবার মেলা বড্ড কঠিন। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে একরত্তি, কচিকাঁচা একবেলা খেয়ে দিন কেটে যায়। রাতে অভুক্তই শুয়ে পড়েন তাঁরা। এখন ভাস্বর চেষ্টা করছেন , রাতের বেলাও যদি এই মানুষগুলোর কাছে রুটি তরকারি পৌঁছে দেওয়া যায় । ভাস্বর জানালেন, সম্প্রতি তিনি কাশ্মীরেও একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখানকার মানুষদের কিছু সাহায্যের চেষ্টা করছেন ।

">



অন্যদিকে সৌগত নয়না দুজনেই নিয়ম করে প্রতিদিন ৩0 থেকে ৫0 জন মানুষকে পাত পেড়ে খাওয়াচ্ছেন । নিজে হাতে পরিবেশন করছেন । সৌগত জানালেন, গত বছর থেকে তাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত । তবে প্রচার থেকে কিছুটা দূরে থেকেছেন ।  তিনি চান তাঁদের দেখে অন্যান্য উৎসুক মানুষরাও এগিয়ে আসুন।
 ইতিমধ্যেই ইন্ডাস্ট্রি বন্ধুদের থেকে ভালো সাড়া পেয়েছেন।  তাঁদের সঙ্গে আছেন  ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত বেশ কয়েকজন মুখ। যেমন নীল , তানিয়া। এছাড়াও আরও অনেক অজানা অচেনা মানুষও জড়িয়ে আছেন তাঁদের প্রতিদিনের কাজের সঙ্গে। ভাস্বর, সৌগতরা চান, আগামী দিন এমন হোক যাতে দুবেলা খাবারের জন্য গরীব মানুষগুলোকে আর চিন্তা করতে না হয়। সৌগত জানালেন, এই বছর মা-বাবার অ্যানিভার্সারিটাও তাঁরা উদযাপন করেছেন শহরের বেশ কিছু দরিদ্র মানুষের সঙ্গে। তাঁদের পেট ভরিয়ে বাবা-মায়ের আশীর্বাদ নিয়েছেন সৌগত। আর সঙ্গে পেয়েছেন ভাস্বরের মতো মানুষকে। 

">


সৌগত, নয়না, ভাস্বরের সঙ্গে এখন আসতে আসতে জুড়ে যাচ্ছে অনেক নাম। কেউ কোমর বেঁধে পথে নামছেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় অর্থ  পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কোনও নির্দিষ্ট দল বা রঙ নয়, তাঁরা চান আরও অনেকেই নাম লেখাক কালারলেস ভলান্টিয়ারদের হয়ে। আর তাঁদের এই উদ্যোগে সবাই স্বাগত।