কলকাতা: বলিউড থেকে টলিউড, বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁর গান বরাবরই জনপ্রিয়। 'বোঝেনা সে বোঝেনা' হোক অথবা 'মুশকুরানে কি ওয়াজা তুম হো', তাঁর সুর বার বার মন ছুঁয়েছে দর্শকদের। কিন্তু এবার পরিচিত ধারা থেকে সরে শ্রোতাদের নতুন ধারার গান উপহার দিলেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শ্যামাসঙ্গীত।


ছোট থেকেই শ্যামাসঙ্গীত শিখেছেন তিনি, তাহলে একদিন পর এই গান রেকর্ড করার পরিকল্পনা নিলেন কেন? এবিপি লাইভকে জিৎ বলছেন, 'আমার মায়ের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও শ্যামাসঙ্গীত শিখেছি আমি। উনি আমার প্রথম গুরু। আমার বাবার নাম কালী গঙ্গোপাধ্যায়। মা ও বাবা দুজনেই কালীভক্ত। এবার বাড়ি ফিরতে মা আমায় হঠাৎ আমায় বললেন, তোকে একটা শ্যামাসঙ্গীত গাইতে হবে। চন্দ্রাণী (জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী) গান লিখবে আর তুই গাইবি। সেই কথা মতো এক ঘণ্টার মধ্যে গান লেখা হল, তৈরি হল। এসভিএফ থেকে গান রেকর্ড করার কথা হল। মুক্তি পেল তারা তুই। মা বলেছিলেন, কেবল আমায় নয়, এই গানটা তুই কেবল আমায় নয়, সব মায়েদের জন্যই তৈরি কর।'


একেবারে ছোটবেলা থেকেই সুরের জগতে বিচরণ জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। তাঁর বাবা-মা-ও মঞ্চে অনুষ্ঠান করতেন। সঙ্গে অনুষ্ঠান করতেন জিৎ-ও। সেই স্মৃতিচারণ করে সঙ্গীতশিল্পী বললেন, ' আমার প্রথম অনুষ্ঠান স্কুলে। সেসময়ে ভালো ফুটবল খেলতাম। মা জোর করে মাঠ থেকে ধরে এনে গানের চর্চায় বসাতেন। প্রথমবার স্কুলের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলাম, 'দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে..'। প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম।' ছোটবেলার কথা বললেই ভিড় করে আসে কত স্মৃতি। আবেগে ভর করে জিৎ বলে চললেন, 'আমি তখন ক্লাস ৬-৭-এ পড়ি। মা-বাবার সঙ্গে একটা কনসার্টে গান গাইকে গিয়েছি। অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎ এক ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। নিজের ঘড়িতে হাত থেকে খুলে দিয়ে বললেন, 'তোমার গান আমার খুব ভালো লেগেছে। বড় হয়ে এই ঘড়িটা পরো।' সেইদিনটা আমার স্পষ্ট মনে আছে। একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিল। মনে হয়েছিল, আমার গান যদি মানুষকে আনন্দ দিতে পারে, তবেই আমি জীবনে এগিয়ে যেতে পারব।'


কেবল ছোটবেলায় নয়, অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনেক ছোট ছোট ঘটনাই মন ছুঁয়ে গিয়েছে জিতের। বলছেন, কয়েক বছর আগে পিঠে-পুলি উৎসবে এসেছিলাম। ওখানে গ্রাম বাংলার মহিলারা আসেন তাঁদের তৈরী বিভিন্ন রকম পিঠে বিক্রি করতে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চে উঠে দেখি সমস্ত মহিলারা নিজেদের বানানো পিঠে নিয়ে প্রত্যেকটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সব আয়োজন আমার জন্য! চোখে জল চলে এসেছিল


শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে রবীন্দ্রসঙ্গীত, ভজন সবকিছুরই প্রশিক্ষণ আছে তাঁর। জিৎ বলছেন, 'আমি ছবির জন্য গান বানানো ছাড়ব না। কিন্তু এতদিন সঙ্গীতের যে যে দিকগুলো নিয়ে কাজ করিনি, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। সমাজকে উপহার দিতে চাই এমন এক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি সুরের জগতে আরও বৈচিত্রময়। যদি এভাবেই সবার ভালোবাসা পাই, আশীর্বাদ পাই, তাহলে অনেক বড় উপহার, পুরস্কারও তুচ্ছ বলে মনে হয়।'