কলকাতা: আজ তাঁর জন্মদিন। তাও আবার জোড়া জন্মদিন! একটা বয়স অনুযায়ী, আরেকটা বিধায়ক পদের। দিনটা তিনি শুরু করবেন মন্দিরে পুজো দিয়ে, কাটাবেন এলাকার মানুষদের সঙ্গেই। রূপোলি পর্দা, লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশনের দুনিয়া থেকে পথে, মানুষদের মধ্যে। কখনও ব্যক্তিগত জীবনে উথালপাথাল, কখনও শ্যুটিং আর অভিনয় সামলে বিধায়কের দায়িত্ব... জন্মদিনে এবিপি লাইভের সঙ্গে ফিরে দেখলেন কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mallick)। 


২ বছরে বিধায়ক হিসেবে কতটা পরিণত হলেন কাঞ্চন? অভিনেতা বললেন, '২০২১-এ যখন শপথ নিয়েছিলাম, মনে হয়েছিল অথৈ জলে এসে পড়েছি। রাজনীতির কিছুই বুঝিনি। ধীরে ধীরে কাজের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে শুরু করলাম। এলাকার মানুষেরা যেভাবে আমার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন তা কখনও ভুলব না। যিনি আমার পোস্টার তৈরি করেছিলেন, বুথ কর্মী, এলাকার সাধারণ মানুষ.. সবাই আমায় কেমন আপন করে নিলেন। কোথা দিয়ে যেন দুটো বছর চলে গেল। উত্তরপাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন কাজ হল। কিছু স্কুলে সিসিটিভি থেকে শুরু করে শৌচলয়ের কাজ চলছে। উত্তরপাড়া, কোন্নগর, রঘুনাথপুরে রাস্তায় আলোর কাজ হল, এই সমস্ত কাজের মধ্যে দিয়ে কখন যেন উত্তরপাড়ার মানুষদের কাছের হয়ে গেলাম।'


বিধায়কের কাজের সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়ও করে গিয়েছেন কাঞ্চন। থিয়েটার থেকে শুরু করে সিনেমার পর্দা, দু বছরে একাধিক কাজ করেছেন তিনি। কীভাবে সামলালেন অভিনেতা আর বিধায়কের দায়িত্ব? কাঞ্চন বলছেন, 'অভিনয়টা আমার অক্সিজেন। আমি যাতে কাজের সঙ্গে সঙ্গে অভিনয়টাও চালিয়ে যেতে পারি, সেজন্য দলের নেতৃত্বও আমায় ভীষণ সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয়, এমনও হয়েছে, আমায় শ্যুটিং করতে যেতে হবে শুনে অন্যনা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ সামলাতে এগিয়ে এসেছেন। আমি ফোনে যোগাযোগ রেখেছি মাত্র। অন্যদিকে আমিও শ্যুটিংয়ের সময় বলেছি, আমার এলাকায় কাজ রয়েছে। যখন যে পরিচালক, প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁরাও সবসময় সাহায্য করেছেন, বুঝেছেন আমার পরিস্থিতি। এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি দুটো দিক।'


বছর অনেক কিছু শিখিয়ে যায়, অভিজ্ঞতাও। এই জোড়া জন্মদিন কী শেখাল কাঞ্চনকে? বিধায়ক একটু হেসে বললেন, 'শিখেছি, কখনও, কোনও কাজ করেই কাউকে সম্পূর্ণ তুষ্ট করা যাবে না। আর যাই কাজ করি না কেন, কুৎসা হবেই। মানুষ খারাপ বলবেন, ভর্ৎসনা করবেন... কিন্তু নিজেকেই বেছে নিতে হবে এত কথার মধ্যে কোনটা সত্যিই গায়ে মাখার মতো। আমি মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই কেবল। ২ বছরে বুঝেছি, এর মত তৃপ্তি আর কিছুতে নেই।'


২ বছরে ঝড় উঠেছে কাঞ্চনের ব্যক্তিগত জীবনেও। শিরোনামে এসেছে তাঁর বৈবাহিক সম্পর্ক, তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে শুরু করে একাধিক অভিযোগ। অভিনেতা, জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেই সমস্ত কিছু পেরিয়ে কাঞ্চনের কাছে ফের মানুষের সামনে দাঁড়ানোটা কতটা কঠিন ছিল? এক মুহূর্ত চুপ থেকে কাঞ্চন বললেন, 'আমার ওপর দিয়ে যে ঝাড়ঝাপটা গিয়েছে, তা যেন আমার কোনও শত্রুর ওপরেও না যায়। সেই পরিস্থিতি যে এখনও স্বাভাবিক হয়েছে একথাও বলব না। সেসময়ে অনেকে ভেবেছিলেন, কাঞ্চনের পাশে প্রচুর মানুষ রয়েছে। কেবল আমি জানি, একা ঘরে কীভাবে সামলেছি নিজেকে। বাবা-মাকে হারিয়েছি বহুদিন হল। সেই সময়টা খুব মনে পড়ত ওঁদের। মনে হত, এত কুৎসা, নিন্দা পেরিয়ে আবার মানুষের সামনে দাঁড়াব কী করে? কথা বলব কী করে? কিন্তু এলাকার মানুষেরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সেসময়ে। আমায় ভরসা দিয়ে বলেছিলেন, 'মানুষ আপনাকে নির্বাচিত করেছে, আপনাকে সবাই চায়। আপনি চলুন... আমরা আছি।' আমি সেই ভরসায় আবার মানুষের সামনে ফিরেছি, বক্তৃতা দিয়েছি। সে সময়ে রাজের (Raj Chakraborty) পাশে থাকাটা ভুলব না কখনও। একজন প্রকৃত বন্ধুর মতোই মানসিক সমর্থন করে গিয়েছে ও। পাশে ছিল পরমও (Parambrata Chatterjee)। মনের মধ্যে যখন তোলপাড় চলছে, তখন সেই উথালপাথাল চেপে ক্যামেরার সামনে মানুষকে হাসানো বড্ড কঠিন। আর সেটাই আমার কাজ। জীবনে ঝড় তো কম আসেনি। এই কঠিন কাজটাই করে গিয়েছি বছরের পর বছর। আমি কেবল মানুষের মুখে হাসি ফোটানোরই চেষ্টা করেছি। সে ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের মাধ্যমেই হোক বা ক্যামেরার পিছনে, মানুষের কাজ করে।'


২ বছরের বিধায়ক জীবনের সেরা উপহার? একটু হেসে কাঞ্চন বললেন, 'উপহার অগণিত, তবে একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে। দিদির সুরক্ষাকবচের প্রকল্প হচ্ছিল উত্তরপাড়ায়। গরমে, রোদে হেঁটে এলাকায় ঘুরছি। হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে এসে আমার হাতে একটা কাপ আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বলল, কাকু খাও। সেই আইসক্রিম দেওয়ার মধ্যে যে কী ভালবাসা আর সারল্য লুকিয়ে ছিল... যেন ওরই ঘরের লোককে কিছু দিচ্ছে। মনে হল, এর থেকে নির্মল, সরল উপহার আর কিছু হতে পারে না।'


আরও পড়ুন: Rudranil Ghosh: সৃজিতের ওয়েব সিরিজে বিশেষ চরিত্র, শার্লক ও ওয়াটসনের সঙ্গে ফ্রেমবন্দি রুদ্রনীল


আরও পড়ুন: Summer Drinks: গরমে কোন সরবতগুলি না খেলেই নয় ? কোনগুলি খুবই স্বাস্থ্যকর ?