কলকাতা: তখনও সরস্বতী পুজোর আমেজ কাটিয়ে উঠতে পারেনি কেউ। হঠাৎ দুঃসংবাদ। সুরের বাঁধন আর অনুরাগীদের ভালোবাসা বাঁধতে পারল না তাঁকে। সুরের জগতকে চিরবিদায় জানালেন লতা মঙ্গেশকর। সুরের সরস্বতীর প্রয়াণে যেন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল সঙ্গীত জগত। সাংবাদিকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন তাঁর অনুজরা।
এখনও আট থেকে আশিকে প্রেমে ভাসায় 'লগ যা গলে', চোখে জল আনে আবেগের গান। থেমে গেল সেই দীর্ঘ সুরের যাত্রা। মাত্র ৫ বছর বয়সে শুরু হয়েছিল যে সুরের যাত্রা, তা থেমে গেল ৯২ বছর বয়সে। কেবল বলিউড নয়, বাংলাতেও গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। মন জয় করেছেন গোটা বিশ্বের। কালজয়ী কোকিলকণ্ঠ যখন থামল, তখনও কাটেনি বসন্ত পঞ্চমী।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্দৌরে জন্ম হয় লতা মঙ্গেশকরের। তাঁর বাবা দীনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন খ্যাতনামা মরাঠী, কোঙ্কনী সঙ্গীতশিল্পী এবং নাট্যশিল্পী। মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবার কাছেই গানের তালিম শুরু হয় ছোট্ট লতার।
এরপর, মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবাকে হারান। তার আগে অবশ্য বাবার হাত ধরেই অভিনয় এবং গান শিখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই প্রথম বার সিনেমায় গান গাওয়া। মরাঠি ছবিতে। মুম্বই যাওয়ার পর ১৯৪৮ সালে প্রথম হিন্দি ছবিতে গান। ‘মজবুর’ ছবিতে।
লতাকে প্রথম হেমা বলে ডাকা হত। আগের নাম হেমা থাকলেও, বাবার ‘ভাব বন্ধন’ নাটকের ‘লতিকা’র চরিত্রে প্রভাবিত হয়ে হেমার নাম বদল করে রাখা হয় লতা। সময়ের সঙ্গে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে সেই নাম, লতা। ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত একমাত্র মানুষ তিনি, জীবিত অবস্থায় যাঁর নামে পুরস্কার দেওয়া হত।
১৯৪১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গায়িকা হিসেবে পথ চলা শুরু হয় লতা মঙ্গেশকরের। ৩৬টিরও বেশি ভাষায় ৩০ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। রেখে গেলেন তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি এবং লক্ষ লক্ষ অনুরাগীকে।
একের পর এক সাফল্যের সোপান তিনি পেরিয়ে গিয়েছেন অবলীলায়। হয়ে উঠেছেন ভারতের নাইটিঙ্গল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বড় হয়েছে তাঁর গান শুনে। আর সঙ্গীত জগতের নক্ষত্রপতনে শোকের ছায়া সুরের জগতে।