অবশেষে যেন ভাঙল অচলায়তন। বহুদিন সবকিছু বন্ধ থাকার পর অবশেষে খোলা ময়দানে গান-বাজনা, জলসা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমতি দিল রাজ্য সরকার। তারপরই যেন কয়েক হাজার মানুষের বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেল! গান গাইলেন লোপামুদ্রা মিত্র। পুজো পরবর্তী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে দারুণ খুশি শিল্পী। আপলোড করলেন একরাশ ছবি। লিখলেন, ' এতো সুন্দর ব্যাবস্থা । প্রতিটি নিয়ম মেনে অনুষ্ঠান হোলো। প্রতিটি মানুষকে পরীক্ষা করে , স্যানিটাইজার দিয়ে, মাস্ক পরে , তারপর। দুটি চেয়ারে ৬ ফুট দূরত্ব বজায়। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। এটাই চাইছিলাম আমরা। চলো, সবাই মিলে কাজে ফিরি। বাংলাগানের জয় হোক।'
শুধু লোপামুদ্রা নন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে ভীষণ খুশি সঙ্গীত শিল্পী ইমন চক্রবর্তীও। ইতিমধ্যেই গুসকরায় অনুষ্ঠান করেছেন ইমন। সেখানে দূরত্ববিধি ও পরিচ্ছন্নতা মেনেই। এবিপি আনন্দকে ইমন বললেন, দম বন্ধকর পরিবেশ। রোগের আতঙ্ক। তার উপর মাসের পর মাস বন্ধ ছিল পাবলিক পারফর্ম্যান্স। এই পরিস্থিতিতে রীতিমতো সাঙ্ঘাতিক পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছিলেন মিউজিশিয়ান, অ্যাকপ্যানিস্ট, সাউন্ড অ্যারেঞ্জার ও এই পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। আনলকের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক বিষয়ের উপর কড়াকড়ি শিথিল হলেও, বাংলায় পাবলিক পারফর্ম্যান্স বন্ধই ছিল। অবশেষে নিয়ম মেনেই শুরু হল সবকিছু। এতে অনেক মানুষের দুর্দশা তো কাটবেই, মানুষের মনও ভাল হবে।
কিছুদিন আগে সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচি এবিপি আনন্দকে জানান, সঙ্গীতদুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হাজার-হাজার মানুষের জীবনধারণ প্রশ্নের মুখে। বড় শিল্পীদের নয় কিছু সঞ্চয় আছে, কিন্তু মাঝারি ও ছোট শিল্পীদের কী হবে? যাঁরা বিভিন্ন পাড়ায় মঞ্চে অন্যের গান গেয়ে থাকেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ কী? যাঁরা সাউন্ড অ্যারেঞ্জ করেন, যন্ত্রানুসঙ্গ করে থাকেন, তাঁদের চলবে কীভাবে? অনলাইন শো-এ কয়জন শিল্পীই বা ডাক পান? ডিজিট্যাল জলসায় গাঁটের কড়ি খরচা করে টিকিট কাটার সামর্থ্যই বা কতজনের আছে? এভাবে চলতে থাকলে তো একশ্রেণির মানুষ না খেতে পেয়ে মরবে! আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে একটি পোস্টও করেন রূপঙ্কর।
একইরকম উৎকণ্ঠা শোনা যায় রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও। বাস-ট্রাম-সিনেমাহল চালু হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু হতে কী অসুবিধে? প্রশ্ন তোলেন শিল্পী। সেইসঙ্গে তিনি জানান, বহু মিউজিশিয়ান তাঁর যন্ত্র বিক্রি করে দিয়েছেন এই পরিস্থিতিতে। বড় শিল্পীরা নিয়ে গাড়ি ভাড়া খাটাচ্ছেন, কাউকে বলতে পারছেন না!
সঙ্গীতশিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় কঠিন পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েই বলেন, এই অবস্থায় অনলাইন লাইভ কনসার্টে ভালো সাড়া মিলেছে। শুধুমাত্র বিদেশে নয়, বাংলাতেও ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন তাঁরা। মানুষের আগ্রহও বাড়ছে তাল মিলিয়ে।
অবশেষে এই উৎকণ্ঠার দিন সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। আবার খোলা ময়দানে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লক্ষ্মীর আগমন ঘটবে সরস্বতীর সাধকদের ঝাঁপিতেও।