পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা : শূলের ইন্সপেক্টর সমর প্রতাপ সিং থেকে শুরু করে জাগো-র ইন্সপেক্টর কৃপাশঙ্কর ঠাকুর, বা সত্যমেব জয়তের ডিসিপি শ্রীবংশ রাঠৌর, সাইলেন্সের এসিপি অবিনাশ বর্মা অথবা ট্র্যাফিক-এ কনস্টেবল  রামদাস গোডবোলে। পুলিশের উর্দিতে ৮টি ছবিতে অভিনয় করে ফেললেন মনোজ বাজপেয়ী। যার মধ্যে নতুনতম সংযোজন জি ফাইভ অরিজিনাল ফিল্ম ‘ডায়াল হান্ড্রেড’। পুলিশের ভূমিকায় এতগুলি ছবিতে অভিনয় করেও মনোজ কিন্তু প্রতিবারই দর্শকদের নতুন স্বাদ দিয়েছেন তাঁর চরিত্রে। এটাই মনোজের অভিনয়ের মৌলিকতা। যতবারই তিনি খাকি উর্দিতে আসুন না কেন, তাঁকে নতুন করেই আবিষ্কার করেছেন দর্শকেরা। ডায়াল হান্ড্রেডও ব্যতিক্রম নয়। পরিচালক রেনসিল ডি’সিলভার এই ছবিতে মনোজের সঙ্গে অভিনয় করেছেন নীনা গুপ্তা, সাক্ষী তনভর।


‘ডায়াল হান্ড্রেড’-এর কাহিনি শুরু হচ্ছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে। সিনিয়র পুলিশ ইন্সপেক্টর নিখিল সুদের সঙ্গে কথোপকথন শুরু হয় এক মহিলার। তিনি ১০০ ডায়াল করে জানান যে তিনি আত্মহত্যা করতে চলেছেন। কিন্তু কথা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়, যে আত্মহত্যা করা মোটেই সেই মহিলার উদ্দেশ্য নয়। তিনি গভীর এক চক্রান্ত করেছেন এবং যে চক্রান্তের শিকার হয়ে উঠেছেন ইন্সপেক্টর নিখিল সুদ। এই মহিলাই কাহিনির সীমা পল্লব। সীমার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নীনা গুপ্তা। সীমা তাঁর ছেলের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চান। তাঁর ছেলের মৃত্যুর কারণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইন্সপেক্টর নিখিলের ছেলে ধ্রুব। যাঁর বয়স মাত্র ১৮ বছর। ধ্রবর নাগাল পেতে নিখিলের স্ত্রী প্রেরণাকে অপহরণ করে সীমা। প্রকাশ্যে আসে, ধ্রুব মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত। নিখিল আর প্রেরণা দু’জনেই বিষয়টি জানতেন। বছর খানেক আগে পুলিশের হাত থেকে ছেলেকে বাঁচিয়েছিলেন নিখিলই। ধ্রুব কথা দিয়েছিল সে আর এই অপরাধের সঙ্গে নিজেকে জড়াবে না। কিন্তু সে কথা রাখেনি। নিজের পেশা আর পরিবার - এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে নিখিলের মানসিক দ্বন্দ্ব গভীর ভাবে ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। তবে বলতেই হয়, নিখিলের সঙ্গে অবধারিত ভাবে দ্য ফামিলি ম্যানের শ্রীকান্ত তিওয়ারির তুলনা কোথাও না কোথাও চলেই আসবে। কিন্তু শ্রীকান্ত আর নিখিল - এই দুই চরিত্রে মনোজের অভিনয় শৈলী এক্কেবারে আলাদা। এই ছবিতে পেশাদারিত্বের চেয়েও নিখিলের চরিত্রে সন্তানস্নেহের উপরে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন পরিচালক। নিখিলের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সাক্ষী তনবর।মা আর ছেলের সম্পর্কের টানাপোড়েনও উঠে এসেছে এই ছবিতে। সাক্ষীর অভিনয়ও দুর্দান্ত।সাক্ষীর সংলাপে সেই কথাটি বিশেষ ভাবে মনে দাগ কাটে, যখন ছেলের প্রসঙ্গে সাক্ষী টেলিফোনে মনোজকে বলছেন - ‘তুমি ওর কাছে হিরো হতে চাও বলেই আমায় ভিলেন হতে হয়।’ নীনা গুপ্তকে এমন চরিত্রে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। বলতেই হয় নীনার অভিনয়ও এই ছবির অন্যতম প্রাপ্তি। 


ঘটনার নেপথ্যে আরও ঘটনা থাকে। সাদা চোখে সবসময় ঘটনার প্রকৃত সত্য ধরা পড়ে না। সীমার ছেলের মৃত্যুর সুবিচার হয়নি। ক্লাইম্যাক্সে সীমা আক্ষরিক অর্থেই সীমা লঙ্ঘন করে এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। তারপর ইন্সপেক্টর নিখিলও যেন এসে দাঁড়িয়ে পড়ে ঠিক সীমার জায়গাতেই। কাহিনির সিক্যুয়েলের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেই ডায়াল হান্ড্রেড-এর যবনিকা টেনেছেন পরিচালক। 


রেনসিল ডি’সিলভা নিজেই এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন। মাদক, অপরাধ, অপহরণ, পুলিশের পরিবারেই মাদক যোগ -এতগুলি উপাদান থাকা সত্ত্বেও ডায়াল হানড্রেডের কাহিনি কিছুটা নিস্তরঙ্গ। অত্যন্ত ধীর লয়ে এগিয়েছে ছবিটি। সাসপেন্স তেমন দানা বাঁধেনি। উত্তেজনার মুহূর্তগুলো কিছুটা নিষ্প্রভ ভাবেই মিলিয়ে গিয়েছে যেন। অভিনয়ের জোরেই ছবিটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে মনোজ, নীনা, সাক্ষীকে।