কলকাতা: এ যেন বাস্তবের 'বৌদি ক্যান্টিন'-এর (Boudi Canteen) পৌলমী। চাকরি ছেড়ে রান্নায় মন, আর সেখানেই খুঁজে পাওয়া খুশি। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (Parambrata Chatterjee) পরিচালিত ছবিতে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় (Subhasree ganguly) ফুটিয়ে তুলিয়েছিলেন এমন একটি চরিত্রকেই। আর বাস্তবে, তিনি প্রিয়ঙ্কা কুণ্ডু বিশ্বাস (Priyanka Kundu Biswas)। রান্না করতে ভালবাসতেন, পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন সেটাকেই। কিন্তু গতে বাঁধা নিয়মে প্রথমে পড়াশোনা আর তারপর চাকরি। কিন্তু সেই চাকরি ছেড়ে রান্নাঘরকেই নেশা ও পেশা বানানোর সিদ্ধান্ত থেকেই তৈরি হয় প্রিয়ঙ্কার গল্প। 


সোনি টিভির (Sony Entertainment Television) মাস্টারসেফ (Masterchef) অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন পৌলমী। অন্যান্য সমস্ত খাবারের মধ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় কেক বেকিং ও মিষ্টির বিভিন্ন পদ। হাতের যাদুতেই বিচারকদের মন জয় করে ফেলেছেন তিনি। এবিপি লাইভকে মাস্টারসেফ সফরের গল্প শোনালেন বঙ্গকন্যা প্রিয়ঙ্কা। 


দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে, নিজের তৈরি মিষ্টি নিয়ে প্রথম মাস্টারসেফে পা রেখেছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তিনি বলছেন, 'আমার মিষ্টি পদ তৈরি করতে ভাল লাগে বেশি। কিন্তু গরমে, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি বা কেককে সঠিকভাবে রাখাটা একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। মিষ্টি গলে যেতে পারে, সাজানোটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমার ভয় ছিল। কিন্তু যখন আমার বানানো মিষ্টি পদ খেয়ে বিচারকেরা প্রশংসা করলেন, আমার মনে হল- সবচেয়ে বড় বাধাটাই যেন পেরিয়ে এলাম। '


আরও পড়ুন: Salman Khan: শাহরুখের ছবি মুক্তির দিনই প্রকাশ্যে সলমনের নতুন ছবির ঝলক


বাড়িতে শাশুড়ি আর স্বামী রয়েছে প্রিয়ঙ্কার। এখানেও যেন সেই 'বৌদি ক্যান্টিন'-এরই পুনরাবৃত্তি। প্রিয়ঙ্কা বলছেন, 'আমায় বাড়ির সবাই ভীষণ সাহায্য করেন রান্নাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য। আমার শ্বশুর প্রয়াত হয়েছেন সদ্য। উনিও ভীষণ সাহায্য করতেন আমায়।  আমার বাড়িতে কেউ কখনও মাশরুমও খাননি। তাঁরাই যখন লজানিয়া থেকে শুরু করে আমার হাতে তৈরি বিভিন্ন রান্না চেখে দেখছেন, তখন বড় ভাল লাগে। মনে হয় ওঁরা আমায় এভাবে আপন করে নিয়েছেন।'


রান্নাকেই নেশা ও পেশা করতে চান প্রিয়ঙ্কা, খুলতে চান ক্যাফেও। বর্তমানে তিনি কেক সাজানো শেখান ছাত্রছাত্রীদের। তাঁর কথায়, 'আমি যখন চাকরি করতাম, মাঝে মাঝে অবসাদ গ্রাস করত, টেনশনে থাকতাম। তখন বুঝতে পারতাম, রান্নাটা আমার মন ভাল করে। একটা সময় সিদ্ধান্ত নিলাম চাকরি ছেড়ে রান্নাটাই করব। আমি কখনও ভাবিনি রান্না করে ভালবাসি করে ঘরের মানুষদের কেবল খাওয়াব। আমার মনে হয়, স্বপ্নটা বড় হওয়া উচিত। যখন রান্না করেছি, শিখেছি, স্বপ্ন দেখেছি ভারতের অন্যতম সেরা একজন সেফ হব। সেই স্বপ্ন পূরণ করতেই মাস্টারসেফে আসা।'


ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীদের রান্না শেখাতে চান প্রিয়ঙ্কা, আর খুলতে চান একটা ছোট্ট ক্যাফে। যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁর শ্বশুরমশাই। তার নামেই হবে প্রিয়ঙ্কার প্রথম ক্যাফে। আপাতত মাস্টারসেফে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত প্রিয়ঙ্কা। বলছেন, 'প্রতিদিন মনে হয় নতুন কী বানাব, কী রান্না করে চমকে দেব সবাইকে। আর অনেক কিছু শিখছি। অজান্তেই অনেকটা উন্নতি হচ্ছে আমাদের।'


প্রিয়ঙ্কার সফরও শেষ হোক সাফল্যে, পরিণত পাক স্বপ্ন। শুধু গৃহবধূ নন, প্রিয়ঙ্কা হয়ে উঠুক অনুপ্রেরণা।