দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার
প্রশ্ন: আগামীকাল মহালয়া। বাঙালির কাছে এই দিনটা শুধু পূণ্যতিথি নয়, নস্ট্যালজিয়াও। মহালয়ার স্মৃতি বলতে আপনার কী মনে পড়ে?
মিমি চক্রবর্তী: ছোটবেলার অনেকটা কেটেছে অসমে। ওখানে টিভিতে মহালয়া দেখতে পেতাম না। আর তখন এতটাই ছোট ছিলাম যে, এই দিনটা সম্পর্কে সঠিক ধারণাই ছিল না। খালি বুঝতাম, ওখানকার বাঙালিরা ভোরবেলা উঠে রেডিওতে কিছু একটা শোনে। যখন উত্তরবঙ্গে আসি, ততদিনে একটু বড় হয়েছি। জলপাইগুড়িতে মহালয়ায় একটা বিশেষ রীতি ছিল। ভোর থেকে শুরু করে যতক্ষণ মহালয়া চলত, ততক্ষণ বাজি পুড়ত। আমার বাড়ির সবাইও বাজি পোড়াত। মহালয়ার ভোরে সেই আওয়াজেই ঘুম ভাঙত। বাড়ির সকলে টিভিতে মহালয়া দেখার চেয়ে, রেডিওতে শুনতে বেশি পছন্দ করত। আমার মামার ব্যবসা ছিল। মনে আছে, মামা ভোর ৪টেয় দোকান খুলে দিত। মাইক লাগিয়ে মহালয়া চালানো হতো। আর পাড়ার সবাই জড়ো হতো সেখানে।
প্রশ্ন: টেলিভিশনে যখন মহিষাসুরমর্দিনী দেখতেন, তখন কখনও দুর্গার অভিনয় করার ইচ্ছা হয়েছে?
মিমি: সত্যি বলতে আমি ভাবিনি এই অভিনয়টা করা যেতে পারে। স্কুলে পড়ার সময় মনে হতো, এই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ভগবান হয়ত স্বপ্ন দেখান। কোনও বিশেষ ক্ষমতা থাকতে হয়। পরে বড় হয়ে যখন সহকর্মীদের অভিনয় করতে দেখতাম, মনে হত ব্যাপারটা ভীষণ শক্ত। প্রত্যেকটা মানুষের একটা নিজস্ব বিশ্বাস, কল্পনা থাকে মা দুর্গাকে নিয়ে। সেই প্রত্যাশার একটা চাপ থাকে।
প্রশ্ন: আগামীকাল দর্শক প্রথমবার আপনাকে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দেখবে। কী প্রত্যাশা রয়েছে?
মিমি: আমি তো শ্যুটিং-এর শুরু থেকেই ভীষণ এক্সসাইটেড ছিলাম। এবার মহালয়ার অনুষ্ঠানে অনেক নতুন স্টান্ট, নতুন কোরিওগ্রাফি থাকছে। মহালয়ার যে সমস্ত গান শুনে গায়ে কাঁটা দেয়, সেই গানে আমি পারফর্ম করেছি। তারপর থেকে মনে হচ্ছে কবে দেখব টিভিতে। জলপাইগুড়ির বাড়িতে সবাই তো কাল ভোরবেলা উঠে পড়বে। ইতিমধ্যেই ফ্যামিলি গ্রুপে সবাই মেসেজ করে বলছে, পাঁচটা কিন্তু... কালকে পাঁচটা কিন্তু... (হাসি)।
দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার
https://bengali.abplive.com/entertainment/exclusive-interview-no-time-for-love-everybody-should-stand-against-wrong-deed-says-mimi-chakraborty-738653
প্রশ্ন: এই চরিত্রটার জন্য নিজেকে কীভাবে তৈরি করেছিলেন?
মিমি: আমি প্রথমেই ইউটিউবে সমস্ত মহালয়ার ভিডিও দেখেছিলাম। সাম্প্রতিক সময় থেকে দূরদর্শনের মহালয়া, সব। মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি করতে ওটা খুব জরুরি ছিল। যখন থেকে কন্টেম্পোরারি ভাবনা শুরু হয়, প্রতি বছরই নতুন কিছু হত। আর, কমলদার (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে বসে কথা বলতাম চিত্রনাট্য নিয়ে। গোটা দলটা খুব ভালো কাজ করেছে।
প্রশ্ন: প্রথমবার আপনার মহিষাসুরমর্দিনী লুক সামনে আসতে বেশ জল্পনা হয়েছিল আপনার হাতের ট্যাটু নিয়ে। সবার প্রশ্ন ছিল, দুর্গার হাতে কি তবে ট্যাটু দেখা যাবে? এই ধরনের কথাবার্তা কি অস্বস্তিকর?
মিমি: এই ধরনের ট্রোল যখন প্রথম শুনি, ততদিনে বিষয়টা একটু থিতিয়ে গিয়েছে। আমায় সাধারণত এইসব কথাবার্তা খুব একটা বিব্রত করে না। তবে একটা জিনিস খারাপ লেগেছে। যাঁর ট্যাটু হাতে রয়েছে, তিনি আমার আরাধ্য দেবতা। নটরাজ। ডান হাতের এই ট্যাটুটা আমায় শক্তি দেয়, অনুপ্রেরণা দেয়। একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমি মা দুর্গা নই। আমি একজন অভিনেত্রী, একজন মানুষ। সারা জীবন অভিনয় করে এসেছি। শুধুমাত্র আজ তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছি বলে আমায় নিয়ে ট্রোল করতে হবে তার কোনও মানে নেই। গতবছরও দুর্গা সাজে আমার ফটোশ্যুটের হোর্ডিং গিয়েছিল। তখন কেউ কিছু বলেনি। এটা কেবল ট্রোল করতে হবে বলে করা। আমার এই শিক্ষাটা আছে কোথায় কী পরতে হয়, কোথায় কী দেখাতে হয়। আর, মা দুর্গার সৃষ্টি হয়েছে নটরাজ থেকে, সৃষ্টিকর্তা শিবের থেকে। যাঁরা আমায় অপমান করছেন, তাঁরা ভগবানকে অপমান করছেন, নারী জাতির অবমাননা করছেন। আমায় নিয়ে ট্রোল করলে সেটা বিক্রি হবে, তাই কিছু মানুষ এটা করছেন।
প্রশ্ন: একদিকে অভিনেত্রী, অন্যদিকে সাংসদ, গায়িকা.. এতকিছু সামলান কী করে?
মিমি: সবাই বলে আমি ওয়ার্কোহোলিক। আমিও এটা জানি। যদি কিছু না করার থাকে আমি বাড়ি পরিষ্কারও করব। এই কাজের মধ্যে থাকার ভাবনা থেকেই ইউটিউব চ্যানেল করা। ব্যালেন্স করা একটা আর্ট। আর আমরা মহিলারা খুব ভালো করেই সেটা পারি। লাইমলাইটে থাকার সুবিধা অসুবিধা দুইই রয়েছে।
প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতির জন্য এবারের পুজো একটু আলাদা। কী পরিকল্পনা রয়েছে?
মিমি: এবারের পুজোটা আমার একটু অন্যভাবে কাটানোর ইচ্ছা রয়েছে। তবে এখনও কোনও পরিকল্পনা নেই। এই মাসের শেষে 'বাজি' ছবির শ্যুটিং-এর জন্য আমায় লন্ডন যেতে হবে। ওখান থেকে ফিরব যখন, পুজো তখন দোরগোড়ায়। তবে মায়ের কাছে এটাই কামনা, মা যেমন মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, তেমন করেই যেন এই ভাইরাসটাকেও দশমীতে নিয়ে চলে যান। চারিদিকে মানুষের এত কষ্ট, দুর্দশা যেন মুছে যায়। আর এবার পুজোয় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। নিজে নতুন জামা না কিনে যদি চারজনকে নতুন পোশাক কিনে দিতে পারি সেটা অনেক বড় পাওনা।
প্রশ্ন: মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রসঙ্গে একটা সাম্প্রতিক ঘটনার কথা মনে পড়ছে। আনন্দপুরকাণ্ড। একজন মহিলার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতিবাদী নীলাঞ্জনা। ঠিক ২ বছর আগে আপনিও এমনভাবেই একজন দুষ্কৃতীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন...
মিমি: আমি সবসময় বলতে চাই, একজন মেয়েকে আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য কারও ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। যদি আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চান, তাহলে নিজেই যথেষ্ট। তার জন্য সাংসদ বা রাজনীতিবিদ হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। যদি কারও সাহায্য করতে চান, সেটা সবরকম ভাবে করা যায়। ছোট থেকেই দেখেছি পরিবারের সবাই মানুষের যে কোনও সমস্যায় সাহায্য করতে ছুটে যেত। নীলাঞ্জনাদেবীর সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। ওনাকে কুর্নিশ জানাই। এমন করে সবাই এগিয়ে আসলেই তো সমাজের উন্নতি হবে।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনি যখন লন্ডন যাচ্ছেন ওই একই সময়ে নুসরত জাহানও অন্য ছবির শ্যুটিং-এ একই জায়গায় যাচ্ছেন। আর আপনাদের বন্ধুত্ব তো ইন্ডাস্ট্রিতে বহুচর্চিত। বিদেশে দুই বন্ধুর কী কী প্ল্যান রয়েছে?
মিমি: হ্যাঁ। আমরা আলাদা প্রোডাকশানের কাজে গেলেও সময়টা একই। দেখা তো হবেই। প্ল্যান এখনই কিছু নেই কারণ ওখানকার পরিস্থিতি এখনও ঠিক জানি না। আর নুসরত বাইরে গেলে আমার ওপর সমস্ত দায়িত্ব দিয়ে দেয়। কোন রেস্টুরেন্ট ভালো, কোথায় কী পাওয়া যায়, সব আমি ঠিক করি। এর আগে অনেকবার লন্ডনে গেছি। নুসরত তো আমায় বলেই দিয়েছে, প্যাক আপের পর আমায় খালি বলিস কোথায় যেতে হবে। আমি চলে যাব।(হাসি)
প্রশ্ন: কোভিড পরিস্থিতির জন্য আপনার নতুন ছবি 'ড্রাকুলা স্যার'-এর মুক্তি আটকে রয়েছে। ভবিষ্যতে এই ছবিটা কি আমরা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে দেখতে পাব, নাকি সিনেমাহল খোলার জন্য অপেক্ষা করা হবে?
মিমি: এই বিষয়টা নিয়ে ছবির প্রযোজকের অবস্থান খুব স্পষ্ট। এই ছবিটা সিনেমাহলে দেখার জন্যই। ওটিটিতে দেখলে ফ্লেভারটাই চলে যাবে। আর নিয়ম মেনে যেমন সবকিছু খুলে যাচ্ছে তেমন করে সিনেমাহলটাও যদি আমরা খুলতে পারি ভাল হয়।
প্রশ্ন: ইনস্টাগ্রামে একটা ভিডিও পোস্ট করেছেন ঘর পরিস্কার করার। কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়িতে কী কী করছেন? পোষ্যদের সঙ্গে কেমন সময় কাটছে?
মিমি: আমার খুব বাতিক আছে। কোথাও একটু ধুলো দেখলে আমি যতক্ষণ না পরিষ্কার করব... আমি ক্লিনলিনেস ফ্রিক। আর আমার দুই পোষ্য তো বাড়িটা মাতিয়ে রাখে। লকডাউনটা ওদের জন্য ভালো করে কেটে গেল।
প্রশ্ন: এত কিছু সামলাতে গিয়ে কী প্রেম করার জন্য সময় হচ্ছে না?
মিমি: না! জীবন থেকে ওই ব্যাপারটাই বাদ হয়ে গিয়েছে। এতদিন প্রেমের বাইরে যে এখন আর সময়টাই হয় না। সময়টা আমিও খুঁজছি। এখন সারাদিন অফিস যেতে হবে, এই কাগজগুলোয় সই করতে হবে, তার সঙ্গে দেখা করতে হবে, চিকুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে... এই করেই কেটে যায়। আর এখন লকডাউনে মা নেই। বাজার থেকে রান্নার সব জিনিস আমায় আনতে হচ্ছে। রোজ সকালে আমায় জিজ্ঞাসা করা হয় কী রান্না হবে। সত্যিই রাস্তাটা আলাদা হয়ে গেছে। প্রেমের জন্য আর সময় নেই।
প্রশ্ন: লকডাউনে বাজারের জিনিসপত্রের দাম জানলেন নাকি রান্না শিখলেন?
মিমি: রান্নাটা আমি পারি না। বেক করতে পারি। ওটা আমার খুব পছন্দের। রাঁধতে তো পারি না.. খেতে পারি (হাসি)। তবে হ্যাঁ সব জিনিসের কত দাম জেনে গিয়েছি।