নয়াদিল্লি: মুক্তির অপেক্ষায় মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) অভিনীত 'কাবুলিওয়ালা' (Kabuliwala)। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তারকা অভিনেতা জানান যে এই চরিত্রে অভিনয় করার আগে খানিক দোটানায় ছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কালজয়ী ছোটগল্পের 'কাবুলিওয়ালা'র প্রতি তিনি সুবিচার আদৌ কতটা করতে পারবেন সেই চিন্তা করেছিলেন মিঠুন। যেখানে সেই চরিত্রে অভিনয় করে ইতিমধ্যে বলরাজ সাহানি বা ছবি বিশ্বাসের মতো অভিনেতারা অমর করে দিয়েছেন। 


'কাবুলিওয়ালা' চরিত্রের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন কি না নিশ্চিত ছিলেন না মিঠুন, মত বদলাল কীভাবে?


মিঠুন চক্রবর্তী এই চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হন প্রযোজকের নাম শুনে, কিন্তু তার সঙ্গেও রাখেন একটাই মাত্র শর্ত। কী সেই শর্ত? প্রযোজনা সংস্থার তরফে এই চরিত্রের জন্য মিঠুনের অডিশন নিতে হবে, এই ছিল তাঁর শর্ত। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, 'এটা অত্যন্ত বড় চ্যালেঞ্জ কারণ এর আগে যে দু'জন অভিনেতা দুই ভিন্ন ছবিতে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁরা অমর - বলরাজ সাহানি জি ও ছবি বিশ্বাস। আমি শুরুতে এই ছবির প্রস্তাব খারিজ করেছিলাম এই বলে যে, 'এটা প্রচণ্ড কঠিন কাজ'। পরে, যখন আমি প্রযোজকের নাম শুনলাম, আমি 'হ্যাঁ' বলি। আমি চেয়েছিলাম পরিচালক ও প্রযোজক যে 'কাবুলিওয়ালা'র এই চরিত্রের জন্য আমার অডিশন নেন।'


১৮৯২ সালে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ছোটগল্প, মূলত এক আফগানি ফলবিক্রেতা, রহমতকে ঘিরে তৈরি। কলকাতায় এসে মিনি নামের এক পাঁচ বছরের মেয়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা তার বন্ধনের গল্প। মিনিকে দেখে তার বাড়িতে রেখে আসা নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে। কিন্তু বাড়ি ফেরার আগেই তার হাজতবাস হয়। বহু বছর পর যখন সে ছাড়া পায়, মিনির সঙ্গে দেখা করতে এসে সে আবিষ্কার করে যে মিনি সেদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছে এবং রহমতের সঙ্গে কাটানো সময়ের কোনও স্মৃতিই তার মনে আর নেই। 


এই ছোটগল্প থেকে একাধিক সিনেমা এর আগেও হয়েছে। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় ছবি বিশ্বাস অভিনীত 'কাবুলিওয়ালা', ১৯৬১ সালে মুক্তি পায় বলরাজ সাহানি অভিনীত ছবি। এই দুটিই সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করে। রবি ঠাকুরের এই গল্পের ওপরই খানিক ভিত্তি করে তৈরি 'বায়োস্কোপওয়ালা'য় দেখা গিয়েছিল ড্যানি ডেনজোংপাকে। 


মিঠুন চক্রবর্তী জানান যে তিনি চেয়েছিলেন আগের সমস্ত সংস্করণের থেকে তাঁর অভিনীত ছবির দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা হোক। ৭৩ বছর বয়সী অভিনেতা বলেন, 'আমি কাউকে নকল করিনি, এর আগেও কোনওদিন সেটা করিনি, ভবিষ্যতেও করব না কখনও। আমি এখনও পুরো সিনেমাটা দেখিনি। আমি কিছু ঝলক দেখেছি এবং স্মৃতিতে সেটুকুই রয়েছে।'


রহমতের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে মিঠুনকে। অন্যদিকে জনপ্রিয় ধারাবাহিক 'মিঠাই' খ্যাত শিশুশিল্পী অনুমেঘা কাহালিকে দেখা যাবে মিনির চরিত্রে। পরিচালনায় সুমন ঘোষ। মিঠুন চক্রবর্তী জানান যে তিনি রহমত আলিকে কল্পনা করেছন, তাঁর আফগানিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জামালুদ্দিন খানের কথা মাথায় রেখে। তিনি বলেন, 'আমার খুব কাছের এক বন্ধু ছিল, জামালউদ্দিন খান, আফগানি পাঠান, রাঁধুনি ছিল এবং আমাকে রান্না শিখিয়েছিল। আমার ওঁকে মানুষ হিসেবে বেশ আকর্ষণীয় লাগত। তাই আমি নির্মাতাদের বলি যে জামালউদ্দিন খান কাবুলিওয়ালার মতো, আমি ওঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত। ওঁরা বলেন আমরা ঠিক এমনটাই চাই, আর কিছু না। তো এই ছবির মাধ্যমে আমি জামাল খানকে সম্মান জানাচ্ছি।' মিঠুন চক্রবর্তী তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি জানান যে তিনি জীবনের এমন এক সময়ে রয়েছেন যখন তিনি এমন চরিত্রে অভিনয় করতে চান যেগুলো তাঁকে উত্তেজিত করবে। 


মিঠুন চক্রবর্তীর মতে সিনেমার দুনিয়ায় সাফল্য পাওয়ার একমাত্র চাবিকাঠি প্রতিভা। তিনি বলেন, 'আমি আমার প্রতিভার জোরে বেঁচে আছি, আমি আমার সততার জোরে টিকে আছি, সেই কারণে আপনারা সাক্ষাৎকার নিতে চান, আমি ভুয়ো বা মিথ্যা কথা বলি না, আমি ওরকম কাজ করি না। আপনারা জানেন যে মিঠুন দা সর্বদা সত্যি কথা বলবেন এবং তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছেন তাঁর প্রতিভার জোরে।'


আরও পড়ুন: Movie-Series Announcement: নতুন বছরে একগুচ্ছ নয়া সিনেমা-সিরিজ ঘোষণা 'হিপ্পিক্স'-এর, অনুষ্ঠানে হাজির ঋতুপর্ণা-পায়েল


জিও স্টুডিওজ ও এসভিএফ এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত 'কাবুলিওয়ালা' প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ২২ ডিসেম্বর। মিনির মা ও বাবার চরিত্রে দেখা যাবে সোহিনী সরকার ও আবির চট্টোপাধ্যায়কে। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।