কলকাতা: আজ ২৪ ডিসেম্বর। আপাতদৃষ্টিতে এই দিনটা 'বড়দিন'-এর ঠিক আগের দিন। কিন্তু, ভারতবাসীর কাছে বিশেষ করে সঙ্গীতপ্রেমী ভারতীয়দের কাছে এই দিনটার মাহাত্ম্যই আলাদা। কারণ, ২৪ ডিসেম্বর কিংবদন্তি মহম্মদ রফির জন্মদিন (Mohammed Rafi Birthday)। তা সেই মহম্মদ রফির জন্মদিনে আপনাদের শোনাই একটা 'বাঙালি কানেকশনের' গল্প। অথবা ভাল করে বললে, বাঙালির সুরের প্রতিভাকে কতটা স্বীকৃতি দিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম কণ্ঠশিল্পী মহম্মদ রফি, এ গল্প সেটাকেই তুলে ধরে। মহম্মদ রফি অনেক বাংলা গানই গেয়েছেন। সে 'তোমার নীল দোপাটি' থেকে শুরু করে 'ওই দূর দিগন্তের পাড়ে'। অনেক-অনেক গান। 


আরও পড়ুন - Arjun Bijlani Covid Positive: করোনায় আক্রান্ত 'খতরো কে খিলাড়ি' জয়ী অর্জুন বিজলানি


বাংলায় জন্মেছেন কিংবদন্তি সব সুরকার। তাঁদের মধ্যেই নিজের জন্য একটা বড় অধ্যায় নিজের নামে লিখে রেখে গিয়েছেন সুরকার নচিকেতা ঘোষ। সাতের দশকে সুরকার নচিকেতা ঘোষের সুরে মুগ্ধ হয়নি কোন বাঙালি। শুধুই কী বাঙালি! আজ্ঞে না। স্বয়ং মহম্মদ রফিও বড় ভক্ত ছিলেন নচিকেতা ঘোষের সুরের। কিন্তু নচিকেতা ঘোষের সুরে কোনও গান গাওয়া হচ্ছিল না তাঁর। সুযোগ হয় 'ইন্দ্রানী' ছবিতে। ১৯৫৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির পরিচালক ছিলেন নীরেন লাহিড়ি। উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেন অভিনীত এই ছবির সবকটি গানই অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবু, তার মধ্যে একটি গান নচিকেতা ঘোষ সুর করেছিলেন মহম্মদ রফিকে ভেবেই। গানটি ছিল, 'সভি কুছ লুটাকর...'। এই গানটির সুর যখন মহম্মদ রফি শোনেন, তাঁর এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে, গানটি তিনি বিনা পারিশ্রমিকে গেয়েছিলেন। গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের কথায় এবং নচিকেতা ঘোষের সুরে মহম্মদ রফি যখন কণ্ঠ দেন। আর সেই গানে পর্দায় লিপ দেন স্বয়ং উত্তম কুমার। সে গান কালজয়ী হবে না তো কোন গান হবে! 



'ইন্দ্রানী'-র গানটা তো শুনবেনই। পাশাপাশি, ভাবার চেষ্টা করবেন, যদি নচিকেতা ঘোষ মুম্বইতে গিয়ে হিন্দি গানের সুর দিতেন। আর মহম্মদ রফি তাঁর আরও বেশি সংখ্যক গানে কণ্ঠ দিতেন, তাহলে এই জুটি ভারতীয় সঙ্গীতে কী জাদু সৃষ্টি করতে পারতো। যাক, যেটা হয়নি ভেবে আর লাভ নেই। অন্তত, মহম্মদ রফির জন্মদিনে এটুকু ভেবে গর্ব অনুভব করুন যে, এক বাঙালি সুরকার নচিকেতা ঘোষের সুরে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং মহম্মদ রফি বিনা পারিশ্রমিকে বাংলা গান গেয়েছিলেন। কেনই বা করবেন না! নচিকেতা ঘোষ এমনই দোর্দণ্ডপ্রতাপ সুরকার ছিলেন যে, ব্যতিক্রমীভাবে তাঁর একটা গানের প্রথম অংশ লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য অংশটি লিখেছিলেন গৌরিপ্রসন্ন মজুমদার। আসলে ব্যক্তিগত জীবনে পেশায় ডাক্তার ছিলেন নচিকেতা ঘোষ। পরে সুরকার হন। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে বেশ ভাল বুঝতেন গানপ্রিয় মানুষের হৃদস্পন্দন।