প্রশ্ন: দিল্লির নির্ভয়া গণধর্ষণকাণ্ডের অবলম্বনে তৈরি হয়েছে 'দিল্লি ক্রাইম'। এমন স্পর্শকাতর একটা বিষয়ের ওপর নির্মিত ছবিতে চরিত্রায়ন (কাস্টিং) করা কতটা কঠিন ছিল?
মুকেশ ছাবড়া: খুব কঠিন একটা কাজ। নির্ভয়াকাণ্ড এমন একটা ঘটনা যেটা পুরো দেশকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। সেটা পুননির্মাণ করা খুব কঠিন। বারবার সেই ঘটনার কথা ভাবতে হয়, আলোচনা করতে হয়। ওই পরিবারের মানসিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়েছিল। মানসিকভাবে খুব বিব্রত লেগেছিল কাজটা করতে। আমার কেরিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং আর কঠিন কাজ দিল্লি ক্রাইম।
[insta]
প্রশ্ন: ‘দিল্লি ক্রাইম’ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে কখনও সমালোচনার ভয় হয়েছিল?
মুকেশ: ঘটনার স্পর্শকাতরতা সবসময় মাথায় ছিল। পরিচালক রিচি মেহতা চিত্রনাট্য এমনভাবেই লিখেছিলেন যাতে কোনওভাবেই ঘটনা বিকৃত না হয় বা কারও অনুভূতি আঘাত না পায়। আমিও সেইভাবে কাজ করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর যথাযথ সম্মান বজায় রেখে ছবিতে সেটাকে তুলে ধরা সহজ কাজ নয়। এই সাফল্যের কৃতিত্ব অবশ্যই পরিচালকের।
প্রশ্ন: ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটিতে সামাজিক একটি বার্তা ছিল। ২০২০ সালে নির্ভয়াকাণ্ডের দোষীদের সাজা হয়। কিন্তু এখনও খবরের কাগজের পাতায় উঠে আসে একাধিক ধর্ষণের খবর। রুপোলি পর্দার বার্তা কি সমাজ বদলাতে পারে?
মুকেশ: আমাদের সমাজ সিনেমা ও ওয়েব সিরিজের চিন্তাভাবনায় অবশ্যই প্রভাবিত হয়। তবে সম্পূর্ণ পরিবর্তন এত সহজ নয়। এমন অনেক কাজ সমাজে হয় যেগুলো অনুচিত। ধীরে ধীরে হলেও মানুষের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অডিও-ভিস্যুয়াল একটা খুব শক্তিশালী মাধ্যম।
প্রশ্ন: ‘দিল্লি ক্রাইম’ আন্তর্জাতিক এমি পুরস্কার পেয়েছে। প্রথম ভারতীয় ওয়েব সিরিজের এই সাফল্য নিয়ে কী বলবেন?
মুকেশ: আমি খুব খুশি। ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর এই আন্তর্জাতিক খ্যাতি গোটা টিমের সাফল্য। প্রচুর ফোন আসছে। বলিউডের সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছেন। প্রচুর কাজের অফারও আসছে। নিজের কোনও কাজ এমন আন্তর্জাতিক সাফল্য পেলে কার না ভালো লাগে!(হাসি)
প্রশ্ন: ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ থেকে শুরু করে ‘দঙ্গল’, ভিন্ন ধারা থেকে শুরু করে একেবারে কমার্শিয়াল ছবিতে কাস্টিং-এর কাজ করেছেন আপনি। ‘দিল্লি ক্রাইম’-এর কাস্টিং করার পিছনে কী কী ভাবনা কাজ করেছিল?
মুকেশ: ওই ঘটনা ও তার পরবর্তী পরিবেশটাকে তুলে ধরার জন্য বেশ কিছুটা পড়াশোনা করতে হয়েছিল। নির্যাতিতার পরিবার, তাঁদের ভাবনাচিন্তা, একজন পুলিশ অফিসারের দৃষ্টিকোণ, সমস্ত কিছুই মাথায় রাখতে হয়েছিল। অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীকেই পরখ করতে হয়েছে। সবকিছু অবিকল হলে তবেই সেটা দর্শকদের ছুঁতে পারে।
প্রশ্ন: সুশান্তের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’-র পরিচালক ছিলেন আপনি। কেবল কাজের সূত্রে নয়, সুশান্ত আপনার ভালো বন্ধুও। কীভাবে মনে রাখতে চান আপনার ‘ম্যানি’-কে?
মুকেশ: সুশান্তের কথা রোজ মনে পড়ে। বিভিন্ন কথাতে ওর স্মৃতি বারে বারে উঠে আসে। পরিচালক হিসাবে আমার জীবনের প্রথম কাজই সুশান্তের সঙ্গে। সবসময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখি। যে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে গেলেই ওর ছবি, গান..বিভিন্ন মুহূর্ত..। সবসময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখি, যাতে সুশান্তের কথা বেশি মনে না পড়ে।
প্রশ্ন: বলিউড ইন্ডাস্ট্রির কতটা ক্ষতি হল সুশান্তের মৃত্যুতে?
মুকেশ: যে কোনও অভিনেতার মৃত্যুই ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি। সেই দুঃখ আমাদের সবার থাকে। ঋষি স্যার, ইরফান ভাই, আসিফ.. ২০২০ সালে বলিউড অনেক অভিনেতাকে হারাল। পৃথিবী ছেড়ে কারও চলে যাওয়া সবসময়ই একরাশ খারাপ লাগা রেখে যায়।
প্রশ্ন: আপনার ছবি ‘দিল বেচারা’-তে বাংলার দুজন অভিনেতা অভিনেত্রী কাজ করছেন..
মুকেশ: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়.. ভীইইষণ প্রতিভাবান অভিনেত্রী। ঠিক ওইরকম অভিনয়ই আমার দরকার ছিল ছবিটার জন্য। বলিউডে ঠিক ওইরকম মা-বাবার অভিনয় পেতাম কি না জানি না। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় আর স্বস্তিকা ২ জনই ভীষণ ভালো অভিনেতা। কিন্তু ওনারা বলিউডে খুব একটা আকর্ষণীয় কাজ করেননি। আমার মনে হয়েছিল একটা বাঙালি বাড়ির পরিবেশকে তুলে ধরার জন্য ওঁদের থেকে ভালো আর কেউ হতেই পারে না।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে বাংলার কোন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে?
মুকেশ: গল্পের প্রয়োজনে যদি আমার বাঙালি পরিবেশ প্রয়োজন হয়, তবে অবশ্যই বাংলার মানুষদের সঙ্গে কাজ করব। যীশু, পরমব্রতর সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। ভীষণ ভালো অভিনয় করেন দুজনেই। স্বস্তিকার সঙ্গে অবশ্যই আবার কাজ করার ইচ্ছা আছে। আর জিৎ-কে নিয়ে বলিউডে কাজ করার ভীষণ সখ আমার।
[insta]
প্রশ্ন: কেবল পরিচালক বা কাস্টিং ডিরেক্টর নয়, মুকেশ ছাবড়া ‘রং দে বসন্তী’, ‘কামিনে’, ‘চিল্লার পার্টি’র মত ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। অভিনেতা হিসাবে আবার রুপোলি পর্দায় কবে ফিরছেন?
মুকেশ: অভিনয় আমার সখ। সেটাকে আমি পেশা হিসাবে নিতে চাই না। আপাতত পরিচালনতেই মন দিতে চাই। তবে কোনও গল্পে পছন্দের চরিত্র পেতে আবার অভিনয় করতে রাজি।