মুম্বই: ছবির ঘোষণা থেকে মুক্তি, আগাগোড়া বিতর্কে থেকে 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' (The Kashmir Files)। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্পর্শকাতর বিষয়কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ব্য়বহার করা হয়েছে বলে উঠেছে অভিযোগ। সেই 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' ছবিই এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেল (National Film Awards 2023)। যে সে সম্মান নয়, 'নার্গিস দত্ত অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফিচার ফিল্ম অন ন্যাশনাল ইন্টেগ্রেশন' পুরস্কারের বিজয়ী ঘোষণা করা হল ছবিটিকে, অর্থাৎ 'জাতীয় অখণ্ডতা' রক্ষার জন্য পুরস্কৃত করা হল ছবিটিকে। (Nargis Dutt Award for Best Feature Film on National Integration)


বৃহস্পতিবার সন্ধেয় ৬৯তম জাতীয় পুরস্কারের ঘোষণা হয়। নয়া দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষিত হয় বিজয়ীদের নাম। সেখানেই 'দ্য় কাশ্মীর ফাইলস' ছবির নাম ঘোষণা করা হয়। তবে এদিন শুধু নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছরের শেষ দিকে পুরস্কার তুলে দেবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। (National Awards 2023) যদিও 'দ্য় কাশ্মীর ফাইলস' ছবিকে পুরস্কৃত করা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক মাথাচাড়া দিতে পারে বলে এখন থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে।


'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' ছবির গল্প এবং পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন বিবেক অগ্নিহোত্রী। তাঁর স্ত্রী, পল্লবী জোশী ছবিতে অভিনয় করেছেন। এদিন তাঁকে সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ছিলেন অনুপম খের, মিঠুন চক্রবর্তীরা। 


আরও পড়ুন: National Film Awards 2023: পর্দায় নারীশক্তির উদযাপন, সেরার সম্মান পেলেন আলিয়া-কৃতী


নয়ের দশকে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি যেভাবে অতিসক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অশান্ত কাশ্মীর ছেড়ে পালানোর ঘটনা সামনে আসতে থাকে, সেই প্রেক্ষাপটকে ব্যবহার করেই ছবির গল্প বোনা হয়েছে। কিন্তু এখানে পরিচালক ক্ষমতাসীন সরকারের হয়ে পক্ষপাতিত্ব করতে গিয়ে, বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের মানুষকে কাঠগড়ায় তুলেছেন এবং অন্য একটি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিপীড়িত-শোষিত হিসেবে দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে গোড়া থেকেই। 


ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ, বহুত্ববাদী ধ্যান-ধারণায় গড়ে ওঠা দেশকে ধর্মীয় মেরুকরণের রাস্তায় নিয়ে যেতে 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'-এর মতো ছবিকে বাহবা দেওয়া হচ্ছে, সরকারের তরফে প্রচার চলছে বলেও অভিযোগ ওঠে। ছবির সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির মিল নেই, বরং বিশেষ উদ্দেশ্যসাধনের জন্যই ছবিটি তৈরি করা হয়েছে বলে সরব হন সমাজকর্মী থেকে মানবাধিকার কর্মীরাও। শুধু দেশের অন্দরেই নয়, বিদেশের মাটিতেও সেই নিয়ে সমালোচনা হয় বিস্তর। গতবছর নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়ায় 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস' ছবিটিকে সরাসরি 'জঘন্য প্রোপাগান্ডা' বলে উল্লেখ করেন ইজরায়েলি চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদভ লাপিদ। সেই নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। 


এতকিছুর পরও ছবির ব্যবসা আটকায়নি যদিও। সাম্প্রদায়িকতার প্রচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও, বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে করছাড় দেওয়া হয় ছবিটিকে। প্রকাশ্যে ছবিটির প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে সিঙ্গাপুরের মতো দেশে সাম্প্রদায়িকতায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয় 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'কে।