কলকাতা: থিয়েটার থেরাপি তাঁর জীবন বদলেছে, খুঁজে এনেছে আলোর উৎস। কয়েদের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আবার যাঁরা হারিয়ে যায় সমাজের অন্ধকারে, তাঁদের তিনি বার্তা দিয়েছেন, মনের জোর থাকলে ফিরে আসা যায় আলোয়, ভালোবাসা যায়, বাঁচা যায় সাধারণ মানুষের মতো করেই। তিনি নাইজেল আকারা (Nigel Akkara)।
রূপোলি পর্দার পাশাপাশি, এখনও নাটকের মঞ্চে বেশ সক্রিয় নাইজেল। এর আগে মাদকাসক্তদের নিয়ে কাজ করেছেন নাইজেল। আর এরপর অটিস্টিক শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের নিয়ে নতুন নাটকের প্রস্তুতি শুরু করেছেন নাইজেল। সব ঠিক থাকলে ডিসেম্বরে মঞ্চস্থ হবে এই নাটক, গোটা কলকাতায় মোট ৬টা শো হবে। নাটকে নিজেও অভিনয় করবেন নাইজেল, তবে নেতিবাচক চরিত্রে।
যে কোনও সাধারণ মানুষকে নিয়ে নাটক পরিচালনা করার চেয়ে বেশ আলাদা অটিস্টিক মানুষদের সঙ্গে কাজ করা। নাইজেলকে সে কথা বলতে অবশ্য হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, 'কঠিন মনে করলেই কঠিন। আমরা হেরে যাওয়ার ভয় পাই। সেই ভয়টাকে কাটিয়ে কাজটা করতে হবে। তবে হ্যাঁ, ওদের সঙ্গে কাজ করার সময় অনেক সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ওরা একটা কল্পনার জগতে বাস করে। প্রথম কাজ হল, ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। সংলাপ বলা তো দূরে থাক, প্রথম প্রথম কথা বলতে বা নড়াচড়াই করতে চায় না অনেকে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, তারপর তাদের গুণগুলো খুঁজে বের করতে সময় লেগেছে।'
ঠিক কেমন ছিল থিয়েটারের প্রস্তুতির শুরুটা? নাইজেল বলছেন, 'আমি আর জহর দাস মিলে এই নাটকটার পরিচালনা করছি। যাদের নিয়ে কাজ করছি, তারা অনেকে ভালো গান গাইতে পারে, অনেকে আবার সহজ হয়ে গেলে সংলাপও বলতে পারবে। যারা গান গাইতে পারে তাদের গান আমরা ব্যবহার করেছি। এই গল্পটা একটা রোম্যান্টিক গল্প, যার ৫০ শতাংশ সংলাপ আর ৫০ শতাংশ শুধু গান। নাটকের সঙ্গে সঙ্গে পিছনের স্ক্রিনে ফুটে উঠবে গ্রাফিক্সের কাজ। নাটকের মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে কথাকলি নাচ এবং ছৌ-এর বিভিন্ন জিনিসকে।'
নতুন এই নাটকের কাজ করতে গিয়ে নাইজেলের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী? নাইজেল বলছেন, 'মুকতালি বলে একজন শিল্পী রয়েছেন। ওর হাড় খুব ভঙ্গুর। সবসময় হুইল চেয়ারে থাকে। ওকে নিয়ে কাজ করতে হয় খুব সাবধানে। আমাদের রিহার্সালের সময় সবসময়েই বিশেষ প্রশিক্ষণযুক্ত মানুষ থাকেন। আমাদের প্রত্যেকটা রিহার্সালের ভিডিও রেকর্ডিং হয়। আমি সেটা নিয়ে একজন মনোবিদের সঙ্গে আলোচনা করি নিয়মিত।'
নাইজেলের বিশ্বাস, যে কোনও মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারে থিয়েটার থেরাপি। অভিনেতার কথায়, 'অনেকে ওদের শারীরিকভাবে অক্ষম বলে, অনেকে বলে পাগল.. আমি চাই, এই সব পেরিয়ে মানুষ ওদের চিনুক শিল্পী বলে।'