কলকাতা: তাঁর আলোয় আসা অন্ধকার এক জগতের থেকে। সংশোধনাগারের অন্ধকার থেকে। আর সেই কারণেই তিনি অন্যের জীবনের অন্ধকার দূর করতে চান। নিজে জ্বলে উঠতে চান, আলো হয়ে। এই প্রথম নয়, নিজে খ্যাতি পাওয়ার পর থেকে তিনি বারে বারেই কাজ করতে চেয়েছেন এমন মানুষের সঙ্গে, যাঁরা জীবনের দৌড়ে হয়তো একটু পিছিয়ে পড়েছেন। যাঁদের জীবনে খুব বেশি করে দরকার একটা আশার আলোর। একটা ম্যাজিকের। একটা 'যাদু'-র। তাঁদের নিয়েই নতুন গল্প শোনাতে প্রস্তুত নাইজেল আকারা (Nigel Akkara)।
কারাগারের অন্ধকার থেকে নাইজেল আলোর দিকে এক যাত্রা শুরু করেছিলেন। আর এখন, তাঁর জীবনের লক্ষ্য হল, সেই আলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। সেই কারণেই নাইজেল নতুন একটি নাটকের দল গঠন করেছেন বেশ কয়েক বছর হল। নাটকের দলের নাম 'কোলাহল'। সেই দলে অটিজেম আক্রান্ত শিশু, কিশোর কিশোরী থেকে শুরু করে রয়েছেন বিশেষভাবে সক্ষম বিভিন্ন শিশু ও কিশোর কিশোরী। এছাড়াও রয়েছেন অ্যাসিড আক্রান্তেরা। তাঁরাই হাতে হাত মিলিয়ে গড়ে তুলেছেন এই দল। এই দলের কলাকুশলীরা এর আগেও মঞ্চে অনুষ্ঠান করে দর্শকদের মন জয় করেছেন। আর এবার, নিজের এই দল নিয়ে নতুন গল্প বলছেন নাইজেল।
গল্পের নাম, 'কালা যাদু'। এই গল্পের গল্প, চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে পরিচালনা, সব দায়িত্বই একার কাঁধে তুলে নিয়েছেন নাইজেল আকারা। নাটকের মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করছেন স্বরন্যা বসু। রাজস্থানে একটি পেশা রয়েছে, যে পেশার নাম 'রুদালি'। প্রায় বিলুপ্তপ্রায় এই পেশা সাধারণত মহিলারা পালন করেন। কারও বাড়িতে কোনও দুঃখের ঘটনা ঘটলে বা প্রিয়জন বিয়োগ করে, একটা সময়ে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হত এই রুদালির দলকে। তাঁরা দল বেঁধে, সুর করে বাড়ির সামনে বসে বসে কাঁদতেন। এটাই ছিল শোক প্রকাশের ধরণ। বর্তমানে রুদালি পেশা প্রায় লুপ্তপ্রায়। এখন আর প্রিয়জনের বিয়োগে রুদালি ভাড়া করে নিয়ে যাওয়ার প্রচলন নেই। সেই রুদালিদের জীবনকেই তুলে ধরছে এই নাটক- 'কালা যাদু'। একজন মেয়ে হিসেবে সমাজে ঠিক কী পরিস্থিতি রুদালিদের, আয় করেও কি তাঁরা প্রাপ্য সন্মান পাচ্ছেন, সেই প্রশ্নই তুলে ধরবে এই নাটক।
আজ নিরঞ্জন সদনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এই নাটক। ফের একবার দর্শকদের মন জয় করলেন নাইজেল আকারা আর তাঁর 'কোলাহল'।
এই নাটক সম্পর্কে নাইজেল বলছেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই আমার ইচ্ছে ছিল একটা নারীকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে কাজ করব। অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করার কথা আমি অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম। এই কাজটায় যে মূল ইউএসপি, সেটা হল.. এই গল্পে মহিলারা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করার দায়িত্ব নিচ্ছেন। প্রত্যেকটা নারীর মধ্যে একজন দুর্গা আর একজন কালী রয়েছেন। সেই কালী আর দুর্গাকে বাইরে বের করতে হবে। সমাজে সঠিকভাবে থাকার জন্য আর যে সম্মান, যে ভালবাসা, যে অধিকার একজন নারীর প্রাপ্য, তা যেন প্রত্যেকটা নারী পায়। সমাজের থেকে ছিনিয়ে নিতে শেখে যেন।'