পুরুষোত্তম পণ্ডিত, কলকাতা: ফুলেরা যাবেন? লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক নয়, কাশ্মীর, লাদাখ, কুলু-মানালিও নয়... ফুলেরা। উত্তর প্রদেশের ছোট্ট একটা গ্রাম। রাস্তাঘাট একটু ভাঙা, লোডশেডিংও হয়। থাকার জায়গা একটু কষ্ট করেই খুঁজে নিতে হবে। কোথাও জায়গা না জুটলে গ্রামপ্রধানের বাড়ি তো আছেই। পঞ্চায়েত অফিসে বসে আড্ডা দিয়ে, ফাকৌলি বাজারে সিঙ্গারা খেয়ে, রাতে খেতের ধারে গাছের নীচে সতরঞ্চি পেতে আসর জমিয়ে দিব্যি কেটে যাবে কয়েকটা দিন। আর গ্রামের সবার সঙ্গে এত ভাল ভাবে আলাপ হয়ে যাওয়ার পর আতিথেয়তার কোনও অভাব হবে না, এটা বলাই যায়। হ্যাঁ, আমাজন প্রাইম ভিডিওয় (Amazon Prime Video) ‘পঞ্চায়েত সিজন টু’ (Panchayat Season 2) দেখার পর মনে হতেই পারে, ফুলেরায় গিয়ে ওয়েব সিরিজের চরিত্রগুলোর মুখোমুখি বসে একটু গল্প করি, সূর্যাস্তের সময় ট্যাঙ্কের ছাদে উঠে গ্রামটাকে দেখি, শহুরে কোলাহল থেকে দূরে সাদামাটা জীবনের জটিল অঙ্কগুলো বোঝার চেষ্টা করি। 'পঞ্চায়েত সিজন টু' এভাবেই আপন করে নেয় দর্শকদের।


'পঞ্চায়েত সিজন টু' রিভিউ- (Panchayat Season 2)


পঞ্চায়েত সচিব অভিষেক ত্রিপাঠী, পঞ্চায়েত প্রধান মঞ্জু দেবী, তাঁর স্বামী ব্রিজ ভূষণ দুবে, অফিস অ্যাসিস্টান্ট বিকাশ, উপ-প্রধান প্রহ্লাদ, মঞ্জুদেবীর মেয়ে রিঙ্কি... প্রত্যেকের জীবনের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, যন্ত্রণা কিছুই কৃত্রিম মনে হয় না। অনবদ্য চিত্রনাট্য, কাহিনি, অভিনয়, পরিচালনা। সব মিলিয়ে চিরদিন মনে রাখার মত একটি ওয়েব সিরিজ ‘পঞ্চায়েত সিজন টু’। প্রথম সিজন মুক্তির পর থেকেই দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষায় ছিলেন দর্শকেরা। আর দ্বিতীয় সিজন দেখতে দেখতে মনে হবে, ‘পঞ্চায়েত-টু’ প্রথম সিজনকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সিরিজটির প্রোডাকশন বাজেট তুলনামূলক ভাবে কম। কিন্তু ৫ ঘন্টা ১০ মিনিট ধরে টানা আটটি এপিসোড দেখার পর পরিতৃপ্তি ১০০ শতাংশ। 


আরও পড়ুন - Godhuli Alap: সংসারের প্রথম ধাপে অরিন্দম-নোলক, মহাসপ্তাহে কী হতে চলেছে 'গোধূলি আলাপ'-এ?


জিতেন্দ্র কুমার (Jitendra Kumar), নীনা গুপ্তা (Neena Gupta), রঘুবীর যাদব, চন্দন রায়, সংভিকা, ফয়জল মালিক..প্রত্যেকে নিজের নিজের চরিত্রে অসামান্য অভিনয় করেছেন। আড়ম্বরহীন একটা প্রেক্ষাপটে অভিষেক, বিকাশ, মঞ্জুদেবী, প্রহ্লাদ, দুবেজি - প্রতিটি চরিত্র যেন আক্ষরিক অর্থেই জীবন্ত। সিজন ওয়ানের গল্প শেষ হয়েছিল অভিষেক আর রিঙ্কির প্রথম আলাপে। দ্বিতীয় সিজনে সেই আলাপ অনেকটাই এগিয়েছে। ভালবাসার কোনও সংলাপ নেই। প্রেম প্রস্তাব নেই। কোনও উদ্দামতা নেই। শুধু দু’টি মানুষের চোখ কথা বলে গিয়েছে। সম্পর্কের বুনিয়াদ শুধু কথায় প্রমাণ হয় না, কাজেও করে দেখাতে হয়। ব্রিজভূষণ দুবে আর অভিষেকের সম্পর্ক সেই মাত্রাও পেরিয়ে এসেছে। মঞ্জুদেবী রাজনৈতিক বুদ্ধিতে আগের থেকে অনেক পরিণত। অভিষেক মুখে স্বীকার না করলেও ভালবেসে ফেলেছে ফুলেরাকে। প্রথম সিজনের মতোই পরিচালক দীপক কুমার মিশ্র এক দুর্দান্ত প্লটে এসে শেষ করেছেন দ্বিতীয় সিজনের কাহিনি। এখন প্রশ্ন একটাই। তৃতীয় সিজনের জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে দর্শকদের?