কলকাতা: তাঁর ছোটবেলার নববর্ষ কাটত এক্কেবারে অন্যভাবে। গ্রামের বাড়ি, চরকের মেলা, সেখানে কতরকমের নিয়ম নীতি। কলকাতার ইট-কাঠ-পাথরের জীবনে নববর্ষ কাটাতে গিয়ে তাঁর মনে হয়.. একবার সেই গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়া যেত যদি। এবিপি লাইভের (ABP Live)-এর সঙ্গে ছোটবেলার সেই নববর্ষের স্মৃতি ভাগ করে নিলেন জি বাংলার 'মুকুট' ধারাবাহিকের মুকুট ওরফে শ্রাবণী ভুঁইয়া। 


ছোটবেলার নববর্ষ কাটত কলকাতার বাইরে, গ্রামের বাড়িতে। শ্রাবণী বলছেন, 'আমাদের বাড়ির কাছে নববর্ষের আগে নীল পূজো উপলক্ষ্যে একটা চরকের মেলা বসত। বাবা-মা অথবা দাদু ঠাকুমার সঙ্গে সেখানে যেতাম। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল গাজন আর তাল পাতার পটকা। এছাড়া তো ছোট ছোট কেনাকাটা, জিলিপি খাওয়া এগুলো ছিলই। আর নববর্ষের সকালে শুকনো পাতা ইত্যাদি জড়ো করে, তাতে আগুন লাগানো হত। তারপরে তাতে তালপটকা ফেলা হত। ওই ধোঁয়া আর তালপটকার আওয়াজ যেন এখনও কানে বাজে। তারপরে ছিল দুুপুরে পরিবারে সবার সঙ্গে খাওয়া দাওয়া। আমি অনেক ছোটবেলার থেকেই নাচ শিখতাম। তাই সন্ধেবেলা অনুষ্ঠান থাকত। আর এখন শ্যুটিং থাকলে ফ্লোরেই কাটে নববর্ষ। আর ছুটি পেলে নববর্ষের দুপুরে মায়ের হাতের রান্না চাইই চাই। সন্ধেবেলা বাবা-মাকে নিয়ে বা স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে একটু বেরোই। তবে এখন আর দেশের বাড়িতে যাওয়া হয় না। কিন্তু প্রত্যেক বছর নববর্ষে মনে হয়, যদি একবার ওখানে যেতে পারতাম।'


নববর্ষে একবছরের কথা খুব মনে পড়ে শ্রাবণীর। বলছেন, 'তখন আমি একা কলকাতায় থাকতাম। বাবা-মা দেশের বাড়িতে। নববর্ষের দিন হঠাৎ ছুটি পেয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। নিজের উপার্জন থেকে বাবা-মা ভাইয়ের জন্য জামা কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভীষণ খুশি হয়েছিলেন বাবা-মা।'


নববর্ষে নিজেকে এক মজার শপথ নাকি করতে চান 'মুকুট'। বলছেন, 'মায়ের ভীষণ অভিযোগ, আমি নাকি ভীষণ অগোছালো। নববর্ষে নিজের কাছে নিজের শপথ, একটু নিজের জিনিস গুছিয়ে রাখতে পারি যেন। আর নিজের কাজটা যেন আরও ভাল করে করতে পারি, বাবা-মাকে ভাল রাখতে পারি।'


নববর্ষের দিনটা ছুটি থাকলে পরিবারের সঙ্গেই কাটাতে ভালবাসেন শ্রাবণী। বলছেন, 'আমি পরিবার অন্ত প্রাণ। ছুটি পেলে বাড়িতেই সময় কাটাতে ভালবাসি। তবে শ্যুটিং ফ্লোরে থাকলে নববর্ষে অবশ্যই একটা খাওয়া দাওয়ার পরিকল্পনা করা হবে সবাই একসঙ্গে। একটা পিকনিকের মতো আর কি। একটাই শর্ত.. সবাই যেন খুশিতে থাকে।'


নববর্ষ বলতে এখনও 'মুকুট'-এর মনে পড়ে, 'বাবার হাতে ইলিশ মাছ, জেঠুর হাতে মিষ্টি আর মায়ের হাতে লক্ষ্মী গণেশের মূর্তি।' এখন ব্যস্ততায় হারিয়ে গিয়েছে নববর্ষের সেই চেনা ছবি। শ্রাবণী বলছেন, 'এখন নববর্ষ উদযাপনের মধ্যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, রেস্তোরাঁ ঢুকে পড়েছে। এখন মানুষ ফটো আপলোড করছে বেশি, কমে যাচ্ছে আন্তরিকতা। তবে আমার যে কোনও বিশেষ দিনের একটাই শর্ত.. সবাই যেন খুশি থাকে। ব্যাস।'


আরও পড়ুন: Poila Baisakh Special: মেক আপ রুমে খাওয়া দাওয়া, বাবা-মায়ের দেওয়া নতুন পোশাকে কাটে 'গৌরী'-র নববর্ষ