বাংলার সিনেমাপ্রেমী দর্শক ও বিশ্লেষকদের কাছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় মানেই ইন্ডাস্ট্রি। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর উপস্থিতি, নায়ক হিসেবে। বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বহু উত্থান-পতন, উজান-ভাঁটার সাক্ষী তিনি। শুধু সাক্ষী নন, বহু সময় কাণ্ডারীর মতোই ধরেছেন হাল। তাই ২০২৫ সালে এবিপি লাইভ ইমপ্যাক্ট মেকার কনক্লেভ, ইস্ট এডিশনে তাঁকে বিশেষ সম্মান জানিয়েছে এবিপি লাইভ। তারকাখচিত সন্ধেয় তাঁর উপস্থিতি নিঃসন্দেহে চন্দ্রোদয়ের মতোই। তবে তিনি নিজের আলোতেই আলোকিত। এবিপি লাইভের সঙ্গে মিনিট কুড়ির কথোপকথনে প্রসেনজিৎ যেন ছুঁয়ে এলেন কয়েক দশকে ফেলে আসা বিভিন্ন ঘাটগুলিকে। বহতা নদীর মতো তাঁর ছবি-জীবনের নানা জানা-অজানা কথা ভাগ করে নিলেন মুগ্ধ দর্শকদের সঙ্গে।
বললেন, ভারতীয় সিনেমায় কমার্শিয়াল ছবি তো দাপট দেখাবেই। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বাংলায় গত ১৫ বছরে ছবির ঘরানায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। গল্প নির্বাচন ও গল্প বলায় অনেক বদল এসেছে। এ বাংলার সমৃদ্ধ সাহিত্য পর্দায় রূপ পেয়েছে। এবার হয়ত এমন একটা সময় আসছে, যখন ছবির 'মেন লিড' হবে গল্পই। কন্টেন্ট, স্টোরি-টেলিং এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
সাদা-কালো যুগ থেকে ছবি করে এসেছেন তিনি। তারপর কেটেছে বছরের পর বছর। বদলেছে ইন্ডাস্ট্রি, সেই সঙ্গে টেকনোলজি। টলিগঞ্জে, প্রথম ডিজিট্যালি শুট করা ছবি 'অটোগ্রাফে' তিনিই ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। এভাবেই বিভিন্ন পর্ব পেরিয়ে তিনি সম্প্রতি কাজ করে ফেলেছেন ওটিটি-তেও। প্রসেনজিতের প্রথম ওয়েব সিরিজ় ‘জুবিলি’ও ক্রিটিক্যালি অ্যাক্লেমড। 'OTT একটা দারুণ মাধ্যম। আমাদের মতো অভিনেতাদের এই মাধ্যমটা এক্সপ্লোর করা উচিত। ওটিটি ক্রিয়েটরদের কাছে দারুণ একটা চান্স। সেই সঙ্গে ওটিটিতে কাজ করলে এমন অনেক নতুন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করা যায়, হয়ত তারা বড় নাম নয়, কিন্তু তারা অসাধারণ কাজ করে...নতুন প্রজন্মের সঙ্গে কাজ না করলে তাঁরা কিন্তু আপনাকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারে...তাঁদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে'। ৩০০-রও বেশি মেন স্ট্রিম বাংলা ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। এত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রির নানা অধ্যায়ের সঙ্গে থেকেছেন ওতপ্রোতভাবে। এরপরও কি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মনে কোনও সুপ্ত ইচ্ছে রয়ে গিয়েছে? এখনও পূরণ না-হওয়া কোনও ইচ্ছে? 'শ্বশুরবাড়ির জিন্দাবাদ'-এর মতো মারকাটারি হিট ছবির নায়ককে একেবারে নতুন ভাবে মেলে ধরেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা ছবির দর্শক তাঁকে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'চোখের বালি', 'নৌকোডুবি'র মতো সাহিত্যনির্ভর ছবিতে। এবার পুজোয় তিনি আসছেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দেবী চৌধুরাণী'র ভবানী পাঠকের ভূমিকায়। তিনি পর্দায় সকলের পছন্দের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'কাকাবাবু'ও বটে। কিন্তু এত কিছু পরেও তাঁর একটা ছোট্ট ইচ্ছের কথা ব্যক্ত করলেন এবিপি লাইভের মঞ্চে। 'আমার একটা দুঃখ রয়ে গেছে, যেটা আমি 'কেটার' করতে পারিনি, যখন আমি বাবুদা মানে সন্দীপ রায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলাম... এই পৃথিবীর অন্যতম বড় মাপের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগটা আমি মিস করেছিলাম। সন্দীপ রায় কোনও ছবিতে আমার জন্য ছোট্ট কোনও চরিত্র লিখতেন...আমি যদি তাতে অভিনয় করতে পারতাম...ফেলুদা নয়, কারণ জানি, ফেলুদা আমায় মানায় না। ফেলুদা বললেই এখনও আমার প্রথম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও বেণুদাকে মনে হয়। আমি বলছি যে কোনও চরিত্র.. ওঁর কোনও ছোট ছোট গল্পের কোনও চরিত্রও যদি হয়, যেটা আমায় ফিট ইন করবে, সেটা যদি কোনও ছোট ক্যারেক্টারও হয়, আমি 'অ্যাট এনি কস্ট' সেটা করব। করলে আমার মনে হবে, একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।'