কলকাতা: ২০১৩ সালের এমনই এক সকাল। জীবন থেকে ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। তিনি পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের নক্ষত্র পতনের সেই শোক আজও সামলে নিতে পারেননি অনেকেই। ৮ বছর আগের সেই দিনের কথা স্মরণ করে আবেগঘন পোস্ট করলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
এদিন নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে প্রসেনজিৎ লিখেছেন, “৮ বছর হয়ে গেছে তোর কোনো মেসেজ নেই, বকাঝকা নেই, সাক্ষাৎ হয় না, ঝগড়া হয় না, নতুন নতুন গল্প নিয়ে আলোচনা হয় না। কিন্তু তুই আছিস - আমাদের মনে, আমাদের কথাবার্তায় তুই চির বর্তমান। এই সময়টায় তোর থাকা খুব দরকার ছিল রে। ভালো থাকিস ঋতু।“
কেরিয়ার শুরু হয়েছিল অ্যাড এজেন্সি থেকে। সেখান থেকে হঠাৎই সিনে জগতে প্রবেশ। প্রথম সিনেমা হীরের আংটি। এরপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। তাঁর দূরদর্শিতা, শিল্পী স্বত্বা এবং প্রাসঙ্গিকতা তাঁকে আক্ষরিক অর্থে করে তুলেছিল ঋতুরাজ। যাবতীয় সমালোচনা থেকে বিতর্কের জবাব দিয়েছিলেন সিনেমার পর্দায়। এমনকী তাঁর যৌন অভিমুখীতা নিয়েও হয়েছে সমালোচনা। সেই বিতর্ককে কোনও দিন প্রাধান্য দেননি পরিচালক। বরং অকপটে বলেছেন, শিল্পীর কোনও লিঙ্গ হয় না। তাঁর ছবিতে উঠে এসেছে বাস্তব জীবনের গল্প। বরবারই তৃতীয় লিঙ্গ, সমকামীতা এবং নারী চরিত্র তাঁর ছবিতে প্রাধান্য পেয়েছে। দৈনন্দিন জীবনে বাসনের ঠোকাঠুকিতেও যে শব্দ আছে, সেই শব্দের সঙ্গে শব্দ বুনে ছন্দ তৈরি করেছিলেন তিনি। পুরনো আসবাব থেকে ধুলো পড়া ঘর তাঁর ছোঁয়ায় হয়ে উঠেছিল সুন্দর। প্রতিটি মুহূর্তকে নিঁখুতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন পর্দার প্রত্যেকটি অংশে।
‘১৯ এপ্রিল’ ছবিতে প্রথম ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচালনায় অভিনয় করেন প্রসেনজিৎ। সেই শুরু। তারপর একের পর এক ছবিতে বাংলার ‘বুম্বাদা’- কে বেছে নিয়েছেন পরিচালক। পরিচালকের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তবে সম্পর্কটা শুধু পরিচালক-অভিনেতার ছিল না। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় একাধিকবার জানিয়েছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর কাছে ছিলেন, ফ্রেন্ড, ফিলোজ়ফার, গাইড। ‘উৎসব’, ‘চোখের বালি’, ‘দোসর’, ‘দ্য লাস্ট লিয়ার’, ‘খেলা’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’, ‘নৌকাডুবি’-র মতো ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্য়ায়।