নয়াদিল্লি: বেঁচে থাকলে আজ ৯২ বছরে পদার্পণ করতেন অভিনেতা রাজকুমার। অভিনয় জগতের অন্যতম দিকপালের আজ জন্মদিন। কন্নড় সিনেমার অভিনেতা জীবদ্দশায় হয়ে উঠেছিলেন কার্যত কর্ণাটকের বিবেক। তিনি অভিনেতা বা মহাতারকার থেকে ছিলেন আরও অনেক বেশি কিছু।
প্রাথমিক স্কুলেই পড়াশোনার ইতি ঘটে তাঁর। স্কুল ছুট মুথুরাজই একদিন কন্নড়দের নয়নমনি হয়ে উঠলেন। প্রায় অর্ধশতাব্দী কর্ণাটকের মানুষের হৃদয়জুড়ে ছিলেন তিনি। মৃত্যুর ১৬ বছর পরও তাঁর জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাঁটা পড়েনি।
ব্রিটিশ আমলে ১৯২৯-এর ২৪ এপ্রিল রাজকুমারের জন্ম। তাঁর বাবা সিঙ্গালাল্লুর পুট্টাস্বামাইয়া ছিলেন সুপরিচিত নাট্য অভিনেতা। বাবা মুথুরাজের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিলেন। কিন্তু চরম দারিদ্রের কারণে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন মুথুরাজ। এরপর শিশুশিল্পী হিসেবে নাটকের দলে যোগ দেন তিনি। সেই ছোট্ট ছেলেটাই ১৯৫৪-তে পৌরাণিক কাহিনী ভিত্তিক কন্নড় ব্লকবাস্টার বেদারা কান্নাপ্পা সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হয়ে উঠলেন। জন্ম হল সুপারস্টার রাজকুমারের। তারপর বাকিটা ইতিহাস।
শুধু তারকাই নয়, তাঁর মানবিক গুণাবলী অনুরাগীদের কাছে ছিল বাড়তি পাওনা। সংকটের সময়ে তাঁর পরামর্শ শোনার অপেক্ষায় থাকতেন অনুরাগীরা। মানুষ হিসেবে অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন তিনি। তাঁর মূল্যবোধের সুদৃঢ় ভিত্তি ছিল কর্ণাটকের গ্রামীন জীবন ও সংস্কৃতি।
দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্ব সম্পর্কে তাঁর ছিল শিশুসুলভ অপরিসীম কৌতুহল। প্রথাগত শিক্ষা না থাকার কথা স্বীকার করে নিতে তিনি বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত ছিলেন না।
২০০০ সালে তাঁকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল কুখ্যাত জঙ্গলদস্যু বীরাপ্পনের দল। ১০৮ দিন জঙ্গলে বন্দি থাকতে হয়েছিল তাঁকে। কর্ণাটকের তত্কালীন এসএম কৃষ্ণ সরকারের দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
সারাজীবন রাজনীতি ও প্রচার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ১৯৮০-র দশকের গোড়ায় অন্ধ্রপ্রদেশের এনটিআর ও তামিলনাড়ুর এমজিআরের মতো রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। কিন্তু এ ব্যাপারে সমস্ত চাপ অস্বীকার করেন তিনি এবং সিন্ধান্তের জন্য কোনওদিন আক্ষেপও করেননি।
রাজকুমার বলতেন, লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, আর তা দল ও মত নির্বিশেষে। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে এই অগণিত মানুষকে আঘাত দিতে যাব কেন? আর এসব কিছু বোঝার মতো শিক্ষিতও আমি নই।