নতুন পরিচালক, নতুন জুটি আবার হিন্দি ছবি। নতুন বছরে কি নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে চাইছেন? এবিপি আনন্দকে ভিডিও কলে ঋতুপর্ণা বললেন, 'ছবিতে আমার চরিত্রটা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। কাজেই অভিনয়ের জায়গা রয়েছে অনেক। আর এই বিষয়ে আমি ভীষণ লোভী। সবসময় ভাবি নতুন কী করা যায়। পরিচালক বলেছেন, এই চরিত্রটায় দর্শকদের চমকে দিতে হবে। তাই এখনই বেশি কিছু বলতে পারব না।'
‘মায়াকুমারী’-র পর একটা লম্বা ব্রেক নিতে বাধ্য করেছিল কোভিড পরিস্থিতি। সেই সময়কে কাজে লাগিয়ে নতুন কী শিখলেন? ঋতুপর্ণা বলছেন, 'এই প্রথম বাড়িতে অনেকটা সময় কাটাতে পেরেছি। সাইক্লিং করেছি ছেলে মেয়ের সঙ্গে, ঘরের কাজ তো রয়েছেই। আগে তো কাজের ব্যস্ততায় জানতামই না বাড়ির কোথায় কী থাকে। এখন সেটুকু অন্তত জানি। এই তো সেদিন বর প্রশ্ন করল বিছানার চাদরগুলো কোথায় আছে। উত্তরটা এই প্রথম বোধহয় দিতে পারলাম।' হাসি সামলে ঋতুপর্ণা যোগ করলেন, 'করোনা পরিস্থিতির জন্য নিজেদের নিয়ে ভাবার, নিজেদের জন্য ভাবার অনেকটা সময় পেয়েছি আমরা। তবে আমি কিন্তু বাড়ি থেকেই রেকর্ডিং, শ্যুটিং করে গিয়েছি সমানে। বাড়িটাকে একটা মিনি স্টুডিও বানিয়ে ফেলেছিলাম।'
প্রথমবার পর্দায় একসঙ্গে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় আর দেবশ্রী রায়। এই সমীকরণটা সম্ভব হল কী করে? ঋতুপর্ণা বলছেন, 'এই বিষয়টি নিয়ে এখনও কথাবার্তা চলছে। সম্ভাবনার কথা আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না। আমি আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সবসময় চেষ্টা করি বাংলা সিনেমার দর্শককে নতুন কিছু উপহার দিতে। আমাদের অভিনীত প্রাক্তন আর দৃষ্টিকোণ সুপারহিট হয়েছিল। এই রসায়নটা সবাই পছন্দ করেন। সেটা আমাদের গর্বের জায়গা। আমি বলব এটা ম্যাজিকাল। দর্শকদের কেবল নতুন কিছু উপহার দেওয়ার জন্যই আমাদের একসঙ্গে আসা, কারণ এই জুটিকে জনপ্রিয় তো দর্শকরাই করেছেন।' এক কথায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে কী বলবেন? 'চূড়ান্ত পেশাদার', উত্তর দিতে সময় নিলেন না ঋতুপর্ণা।
দেখুন সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার:
অভিনয় পেশা। আবার নেশাও। আবেগ ছাড়া অভিনয় হয় না। ব্যক্তিগত সম্পর্ক কি কখনও কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে? মাথা নেড়ে ঋতুপর্ণা বললেন, ‘না।’ তারপর বললেন, ‘কাজের সময় আমরা চরিত্র হয়ে উঠি। সেখানে ব্যক্তিগত আবেগের জায়গা থাকে না।’
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা। কালজয়ী অভিনেতার চলে যাওয়া কতটা আঘাত দিয়েছিল নায়িকাকে? ঋতুপর্ণা বলছেন, 'সৌমিত্রজ্যেঠু একজন দৃষ্টান্ত। শুধু আমি না, ওঁর সংস্পর্শে যাঁরাই এসেছেন, অনেক কিছু শিখেছেন। সারা জীবনটা উনি ওনার কাজের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। আমি আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে পারমিতার একদিন, বেলাশুরু, বেলাশেষে, বসু পরিবার... কত ছবি করেছি ওঁর সঙ্গে। কত স্মৃতি। তবে আমার মনে হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে আমাদের সেলিব্রেট করা উচিত। উনি বাংলা ছবির মেরুদণ্ড ছিলেন।'
টলিপাড়ায় রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছে অনেকদিনই। প্রয়াত তাপস পাল, দেবশ্রী রায় থেকে শুরু করে নয়না বন্দোপাধ্যায়, দেব, মিমি, নুসরত, সোহম, হিরণ - তালিকা বেড়ে চলেছে দিনদিন। রুপোলি পর্দায় হেভিওয়েট হয়েও রাজনীতি থেকে চিরকাল দূরে ঋতুপর্ণা। তার পিছনে কি রয়েছে কোনও বিশেষ কারণ? ঋতুপর্ণা বলছেন, 'রাজনীতিটা আমি একেবারেই বুঝি না। কর্মজীবনের রাজনীতিটাই কোনওদিন সামলাতে পারলাম না! দেশের রাজনীতির তো কোনও প্রশ্নই নেই। তবে হ্যাঁ আমি আমার আশেপাশের পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকি। কেউ যদি কোনও বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত জানতে চান, সেটা আমি বলতে রাজি। আর যে কোনও ভালো কাজ বা ভালো প্রচারে আমি সবসময় যোগ দিতে চাই। তবে তার একমাত্র শর্ত হল, সেটা যেন মানুষের উপকারের জন্য হয়।'
টলিউড থেকে বলিউড তাঁর বিচরণ অবাধ। কখনও বিদ্ধ হয়েছেন সদ্য পরিচিত শব্দ নেপোটিজমে? ঋতুপর্ণা বলছে, 'নেপোটিজম বলব না, তবে ইন্ডাস্ট্রি আমায় ব্যর্থতা দেখিয়েছে, প্রত্যাখ্যান করেছে অনেকবার। কিন্তু আমি সেগুলো থেকে সবসময় বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। ওগুলোই তো সাফল্যের স্তম্ভ।' কেরিয়ারের আক্ষেপ আর পাওনা? 'পাওনা দর্শকদের ভালোবাসা, আর আক্ষেপ...বেশিরভাগ চরিত্রের ক্ষেত্রেই মনে হয় এই চরিত্রে অভিনয়টা আরও ভালো করে করা যেত হয়তো!' সোজাসাপ্টা জবাব ঋতুপর্ণার।