কলকাতা: গল্পের শুরু মশাগ্রামের প্রত্যন্ত একটা গ্রাম থেকে। নাম পাঁচড়া। ৩ বছর বয়স থেকে নাচ শিখতে শুরু করেছিলেন একরত্তি সাথী দে (Saathi Dey)। বাবার তেমন আর্থিক সামর্থ ছিল না। সঙ্গে ছিলেন মা আর একরাশ মনের জোর। সেই মনের জোরে ভর করেই আপাতত মুম্বইয়ের আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছেন সাথী। নাহ, ভুল পড়েননি, আক্ষরিক অর্থেই আকাশে উড়তে পারেন তিনি। তবে ডানা নয়, নিজের চুলে ভর করে। 


হেয়ার এরিয়াল অ্যাক্ট (Hair Aerial Act)! ইউটিউব থেকেই প্রথমবার এই শব্দটা জেনেছিলেন সাথী। নাচের শিক্ষকের কাছে গিয়ে আবদার করেছিলেন, চুলে হার্লেস বেঁধে উড়বেন। শিক্ষকেরা বারণ করেছিলেন, বলেছিলেন, 'কষ্টসাধ্য'। কিন্তু সাথীর মনে হয়েছিল, পেরিয়ে আসা কষ্টের চেয়ে অনেক কম কষ্টকর হবে হেয়ার এরিয়াল অ্যাক্ট। ঠিক কী ঘটেছিল? এবিপিল লাইভকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সাথী বলছেন, 'আমার বাড়িতে কখনও আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। বাবা তাই কখনও চাননি আমি নাচকে পেশা করি। চাইতেন আমি পড়াশোনা করি। ৩ বছর বয়স থেকে নাচ শেখা শুরু করেছিলাম। মা স্বপ্ন দেখেছিলেন, সঙ্গে আমিও। ক্লাস ৯-এ আমি প্রথম কলকাতা আসি নাচ শিখতে। গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে আসতাম মা-কে কেরিয়ারে বসিয়ে। আমার বা মায়ের কাছে তখন তেমন টাকা থাকত না। মশাগ্রাম থেকে ট্রেন ধরে শিয়ালদা আসতাম। স্টেশানে কিনে নিতাম একটা করে ঝালমুড়ি। দুপুরের খাবার হত সেটাই। এরপর সালসা শিখতে শুরু করি আমি। প্রথমে কলকাতা, তারপর মুম্বই। কিন্তু ২ বছর পরে ব্যক্তিগত কারণে আমি গ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হই। তখন ভেবেছিলাম, এতদিনের লড়াই বোধ হয় এখানেই শেষ।'


আরও পড়ুন: 'বয়স ১৬ হোক কিম্বা ৬০, প্রেমে পড়তে আপত্তি কোথায়?'


লড়াই শেষ হননি, হেরে যাননি সাথী। ফের শুরু করেন নাচের অনুশীলন। সাথী বলছেন, 'আমি ফের একটি গ্রুপের সঙ্গে নাচ শিখতে শুরু করি। তারপর ইউটিউবে প্রথম দেখি হেয়ার এরিয়াল অ্যাক্ট। ভারতে কেউ এখনও পর্যন্ত এই অ্যাক্ট করে দেখেননি। স্যরেদের গিয়ে ইচ্ছার কথা জানাই। ওনারা প্রথমে ভয় পান। হার্লেসের সঙ্গে কেবলমাত্র চুলটা বেঁধে নিয়ে ঝুলিয়ে দিতে হয় গোটা শরীরটাকে। সেই অবস্থাতেই নাচ করতে হয়। প্রথমে কাপড় তারপর ধীরে ধীরে দড়ি, তারপর হার্লেস। শুরু হয় অনুশীলন। অনেকেই প্রশ্ন করেন, কষ্ট হয় না? আমি বলি, যে কষ্ট পেরিয়ে এসেছি তার কাছে এটা কিছুই নয়।'




সাথীর জেদ তাঁকে নিয়ে এসেছে মুম্বইতে। 'ইন্ডিয়াজ গট ট্যালেন্ট' (India's Got Talent) এর মঞ্চে নিজের শিল্প দেখিয়ে সাথী মুগ্ধ করেছেন শিল্পা শেট্টি (Shilpa Shetty), কিরণ খের (Kiran Kher), বাদশাদের (Badshah), পেয়েছেন প্রথম গোল্ডেন বাজার। কেমন লেগেছিল? ২৫ বছরের সাথী বলছেন, ' মা কেঁদে ফেলেছিলেন, বাবাও। ২০ বছরেরও বেশি সময় লেগে গেল একটা মঞ্চ পেতে। বাবা একসময় সমর্থন করতেন না। এখন মনে হয় বাবার বিরোধিতাই জেদ তৈরি করেছিল আমার মধ্যে। সেইজন্যই বোধ হয় আজ সফল হতে পেরেছি। এখন বাবা ভীষণ খুশি আর সমর্থনও করেন।'


সাথীর বন্ধুরা কতটা উচ্ছসিত তাঁকে নিয়ে? শিল্পী বললেন, 'আমার স্কুল কলেজের বন্ধুরা ভীষণ খুশি। আমায় সবসময় উৎসাহ দেয়। বরও সমর্থন করে।' বিয়ে হয়ে গিয়েছে? লাজুক হেসে সাথী বললেন, 'সাত বছরের সম্পর্কের পর এই দু'বছর হল আমি বিবাহিত। শ্বশুরবাড়ি সিয়ারাবাজারে। বর চাকরিসূত্রে জামসেদপুরে থাকে। আমাদের কাজের জন্য আলাদা থাকতে হয়। তবে ও খুব খেয়াল রাখে। দেখা হতে আমার চুলে তেল মালিশ করে দেয়, ভালো ভালো রান্না করে খাওয়ায়....' মুম্বইতে বসেই জামসেদপুরে হারিয়ে গেলেন সাথী।