কলকাতা: এখনও সঙ্কট কাটেনি। রয়েছেন ভেন্টিলেশনেই (Ventilation)। অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, কোমায় রয়েছেন অভিনেত্রী। চিকিৎসার ভাষায় গ্লাসগো কোমা স্কেলে ৫-র নিচে মাত্রা। অর্থাৎ অতিসঙ্কটজনক। মস্তিষ্ক সেভাবে কর্মক্ষম নয় এই মুহূর্তে। কিন্তু হাল ছাড়েননি সব্যসাচী চৌধুরী (Sabyasachi Chowdhury)। পাশে রয়েছেন যেমনটা ছিলেন। সেই সঙ্গে হাজার হাজার সাধারণ মানুষের নিরন্তর প্রার্থনা। তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লম্বা পোস্ট করেন অভিনেতা। জানান ঐন্দ্রিলা কোন অবস্থা থেকে লড়াই করে এসেছেন। 


'অসম' লড়াইয়ের কাহিনি


শুক্রবার রাতের দিকে ফেসবুকে একটি লম্বা পোস্ট করেন অভিনেতা। দিন তিন আগেই সকালের দিকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় অভিনেত্রীর। খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে বিদ্যুৎ বেগে। সব্যসাচী লিখছেন, 'চোখের সামনে দেখলাম ওর হার্টরেট ড্রপ করে চল্লিশের নিচে নেমে তলিয়ে গেলো, মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন, কান্নার আওয়াজ, তার মাঝে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন ফের ফিরে এলো বিভিন্ন সাপোর্টে, হার্টবিট ১২০। তারপরই কে যেন একটা অদৃশ্য বালিঘড়ি উল্টো করে ঝুলিয়ে দিলো, ঝুরো বালির মতন সময় ঝরে পড়ছে, সাথে স্থিরভাবে একটা একটা করে হার্টবিট কমছে, কমছে রক্তচাপ, কমছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস।'


ঐন্দ্রিলার স্বাস্থ্যের এহেন অবস্থায় ডাক্তারেরাও জবাব দিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান সব্যসাচী। হাসপাতালের নিচে ব্যবস্থা করা হয় পুলিশি নিরাপত্তার। ভিড় জমতে থাকে 'উত্তেজিত ইউটিউবার ও মিডিয়ার লোকজনের'। তবে হাল ছাড়তে কে চায়? প্রিয় মানুষটিকে ফিরিয়ে আনার 'শেষ চেষ্টার জন্য অন্য হাসপাতালের এক নামকরা নিউরোসার্জনকে ডেকে আনা হলো, তিনি খানিক নাড়াচাড়া করে জানালেন যে “ও চলে গেছে অনেক আগেই, শুধুশুধু এইভাবে আটকে রাখছেন কেন? এমনিতেও কালকের মধ্যে সব থেমেই যাবে। লেট্ হার গো পিসফুলি”!'


রাত বাড়তে থাকে, আশা কমতে থাকে। দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকে, বিশ্বাস ভাঙতে থাকে। কিন্তু তখনও প্রেমিকার 'ছোট্ট অসাড় হাত ধরে বসে' সব্যসাচী। এই পরিস্থিতেই মধ্যরাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়ায় 'ঐন্দ্রিলা আর নেই'। ফলে ফোনের বন্যা। ক্লান্ত-বিধ্বস্ত-চিন্তা মগ্ন শরীর-মন, সেই অবস্থায় এত ফোন সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সব্যসাচী ও তাঁদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দিব্যকে। তবে সেই খবর ধামাচাপা পড়ে সব্যসাচীর বাধ্য হয়ে করা পোস্টে। 


পরদিন সকাল। আরও ভয়াবহ যেন। অভিনেতার পোস্টের ছত্রে ছত্রে তাঁর মানসিক পরিস্থিতি যেন ফুটে উঠেছে। অভিনেতা লিখছেন, 'সকাল থেকে রক্তচাপ কমতে শুরু করলো, ওর বাবা-মা কে ডাকলাম, বাকিদের খবর দিলাম। আর বাধা দিইনি কাউকে, সারাদিন ধরে কাছের মানুষরা এসেছে, ওকে ছুঁয়েছে, ডুকরে কেঁদেছে। কত স্মৃতিচারণ, কত গল্প। বিকেলের পর দেখলাম হাত, পা, মুখ ফুলছে ঐন্দ্রিলার, শরীর ঠান্ডা। হার্ট রেট কমতে কমতে ৪৬, বিপি ৬০/৩০। আগের দিনের ডাক্তারের কথাটা কেবলই আমার মাথায় ঘুরছিলো, ওর শরীরটাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে, থাকতে না পেরে ওর মাকে বললামও যে এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না, কি দরকার ছিল এত কিছু করার, শান্তিতে যেত। মুখে বলছি বটে, কিন্তু ছাড়তে কি আর পারি, মায়ার টান বড় কঠিন।'


তারপরই হঠাৎ চমৎকার। নড়ে উঠল ঝিমিয়ে পড়া শরীরটা। সব্যসাচী লিখছেন, 'ঠিক রাত আটটায় যখন আমি বিমর্ষমুখে নিচে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ হাত নড়ে ওঠে ঐন্দ্রিলার। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখি হার্টরেট এক লাফে ৯১, রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০, শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গেছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এলো মেয়েটা। গেছে বললেই ও যাবে না কি, যেতে দিলে তো যাবে।' অভিনেতা লেখেন, 'ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে' ঐন্দ্রিলা। এরপর যেন পরিস্থিতির কেবল উন্নতিই হয়, প্রার্থনা সকলের।


 



অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা ফের প্রমাণ করুন তিনি ফিনিক্স। ফিরে আসুন তিনি। এই কামনাই করছেন সকলে।


আরও পড়ুন: Aindrila Sharma: 'মা অসুস্থ হলে, বাবা যেমন দৌড়াদৌড়ি করেন', তেমনই তো ঐন্দ্রিলার পাশে সব্যসাচী, তাঁদের 'গ্লোরিফাই' করা বন্ধের আর্জি অভিনেতার