কলকাতা: থামল দীর্ঘদিনের কলম। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল বর্ষীয়ান লেখক ও কবি শঙ্খ ঘোষের। করোনা বিধি মেনেই নিমতলা শ্মশানে আজ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কবির। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাহিত্যিকরাও। শঙ্খ ঘোষের স্মৃতি এবিপি লাইভকে শোনালেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী। 


ক্লাস এইট কি নাইন থেকেই পাঠ্যে থাকত তাঁর লেখা কবিতা। কবির সঙ্গে সেই আলাপ অপর কবির। স্মরণজিৎ বলছেন, শঙ্খ ঘোষের কবিতা থেকে শিক্ষা পেয়েছি অনেক। উনি তো সবার কাছে স্যার ছিলেন। লেখার মধ্যে দিয়ে হালকাভাবেই অনেক গভীর শিক্ষা দিয়ে যেতে পারতেন যেন। আর আমার মনে হয়, একজন লেখক বা কবির সার্থকতা তখনই, যখন তাঁর কবিতা বা লেখা প্রবাদ হিসাবে ব্যবহার হয়। শঙ্খ ঘোষের 'মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে তো যাঁরা কবিতা পড়েননি তাঁরাও ব্যবহার করেন। এখনও।'


কবির কথা বলতে বলতে বারবার কবিতার লাইন মনে আসে লেখকের। শঙ্খ ঘোষের লেখনির মধ্যে অদ্ভুত এক নির্লিপ্ত অনুভূতি খুঁজে পেতেন স্মরণজিৎ। তাঁর কথায়, 'টেনিসনের লেখায় আমি এমন নির্লিপ্ত অনুভূতি খুঁজে পেয়েছি। শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, 'ছিল, নেই/মাত্র এই'। জীবনের প্রতি ওঁর একটা দার্শনিক নির্লিপ্তি ছিল। ওনার লেখার মধ্য দিয়ে উনি শিখিয়ে গিয়েছেন, 'দ্বিধাহীন আনুগত্য' নয়। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করার সাহস যুগিয়েছেন উনি।'


ব্যক্তিগত কাটানো তেমন স্মৃতি মনে পড়ে না স্মরণজিতের। লেখকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মাত্র একবার। একটি অনুষ্ঠানে। স্মরণজিৎ বলছেন, '২০১৯ সালে নববর্ষের দিন আমি প্রথমবার সামনে থেকে দেখি শঙ্খ ঘোষকে। উনি একটু অসুস্থ ছিলেন। আমি গিয়ে প্রণাম করি। এমনই হঠাৎ করে গিয়েছিলাম যে উনি নিজেও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন একটু। কোনওদিন কথা হয়নি সেভাবে। চিরকাল সমীহ করে চলেছি মানুষটাকে।' 


শঙ্খ ঘোষের লেখা অসংখ্য প্রিয় কবিতা, লেখনি রয়েছে লেখকের। স্কুলজীবন থেকে শুরু করে আজও কত কিছু শিখিয়ে যায় শঙ্খ ঘোষের কলম।  'কবিতা মহলে একটি নাম ছিল শঙ্খ ঘোষের। তাঁকে শঙ্খদা না বলে, বলা হত স্বয়ং খোদা।' কথার শেষে যোগ করলেন স্মরণজিৎ।