কলকাতা: গ্রামের বাড়ির দুর্গামণ্ডপে প্রতিবার সরস্বতী পুজো হত। ৭ দিন আগে থেকে ভাই-বোন, বন্ধুরা মিলে জড়ো হতেন কুমোর বাড়িতে। ‘আমাদের ঠাকুর কতদূর হল?’ চলত এই তাগাদা। একবার তো ঠাকুর নিয়ে আসার সময় ভুলেই গিয়েছিলেন বাহনকে আনতে! কলকাতার বাড়িতে বসে আজ ছোটবেলার সরস্বতী পুজোর স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে খরাজ মুখোপাধ্যায়ের।


গ্রামের বাড়ি ছিল বীরভূমে। পুজোর দিনে বাড়ির ছোটরা মিলে ভোরবেলা ফুল চুরি করতে যেতেন। এবিপি আনন্দকে খরাজ বলছেন, ‘সরস্বতী পুজোর সময় গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনেরা সবাই জড়ো হতেন। তখন বেশ ঠান্ডার রেশ থাকত। ভোরবেলা ফুল তুলতে যাওয়া থেকে শুরু করে লেপের তলায় সবাই একসঙ্গে হয় গল্প করা, খুব মনে পড়ে সেই দিনগুলো। পুজোর দিন সকালবেলা উঠে ফুল চুরি করতে যাওয়ার মজাটাই ছিল আলাদা।’


কুমোরবাড়িতে নিয়মিত ঠাকুর তৈরি দেখতে যেতেন সবাই। তাঁদের আসতে দেখে ঠাকুর রঙ করা শুরু করতেন শিল্পী। ঠাকুর তৈরি থেকে শুরু করে বাড়িতে নিয়ে আসা পর্যন্ত ছিল এক অধ্যায়। অভিনেতা বলছেন, ‘কুমোর সাধারণত ব্যস্ত থাকতেন বড় ঠাকুর বানাতে। আমরা গিয়ে তাড়া দিতাম বাড়ির ঠাকুরের জন্য। তখন কুমোর তার সহকারীকে বলতেন রঙ শুরু করতে। আমাদের ঠাকুরে সাদা রঙ হল, সেটাই তখন কি আনন্দের। একবার আমরা ঠাকুর নিয়ে চলে এসেছি, প্রায় পুজো শুরু হবে। তখন মনে পড়ল, দেবীর বাহন হাঁসই আসেনি। আর একবার আমাদের ছোট্ট দেবী মূর্তির জন্য আনা হল বিশাল এক হাঁস। মা দেখে বললেন, এইটুকু ঠাকুরের এতবড় হাঁস! কোনও সামঞ্জস্য বোধ নেই!’  


সেইসময় সবকিছুর জোগান থাকত না। খরাজ বলছেন, ‘আমাদের বাড়ির একটা রীতি ছিল। সরস্বতীকে কুলের মালা পরানো হত। গাছ থেকে জোড়া কুল পেড়ে আনতাম আমরা। আর থাকত পলাশ ফুল। নদীর ধার থেকে মাটি এনে দোয়াত কলম বানাতাম আমরা। বিসর্জনের সময় প্রতিবার আবদার করতাম ব্যান্ড পার্টি আনার। বাবা কিছুতেই রাজি হতেন না। কাঁসর-ঢোল দিয়েই বিসর্জনে পাঠাতেন।’


সরস্বতী পুজো মানেই প্রেম। স্কুল জীবন থেকে শুরু করে কলেজ, ইউনিভার্সিটি, বাঙালির কাছে আজকের দিনটাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে। গ্রামের বাড়িতে এমন কোনও প্রেমের স্মৃতি রয়েছে?  হাসতে হাসতে খরাজ বললেন, ‘মেয়ে মানে তখন অন্য গ্রহের মানুষ। বাড়িতে জানলে পিঠের চামড়া আর পিঠে থাকত না। তবু সরস্বতী পুজোর দিনে মেয়েরা শাড়ি পড়লে হ্যাংলার মত তাকিয়ে থাকতাম। নদীর ধারে হয়ত কখনও দেখা হত ভালোলাগার মানুষের সঙ্গে। কখনও জলে পা ডুবিয়ে খেলা, কখনও আখের ক্ষেতে ঘুরে বেড়ানো। সেইসময়ের প্রেমটা অন্যরকম ছিল। এখনকার মত খোলামেলা প্রেম করার সাহস ছিল না কারোও।’


এখন কলকাতার বাড়িতেই পুজো হয় খরাজের। অভিনেতা বলছেন, ‘কিছু বছর আগে পর্যন্তও পাড়ার পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। বড় করে অনুষ্ঠান হত। অনেক নামিদামি শিল্পীরা আসতেন। এখন আমার ব্যস্ততার জন্য আর সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব হয় না।’