কলকাতা: দীর্ঘদিন পরে বড়পর্দায় ফিরছেন তিনি। মৈনাক ভৌমিকের নতুন ছবি 'বাৎসরিক'-এর মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাঁকে। শতাব্দী রায় (Satabdi Roy)। একটা সময় তাঁর মনে হয়েছিল, অভিনয় করতে করতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। একটু বিরতি দরকার। আর সেই কারণেই অভিনয় থেকে লম্বা বিরতি। রাজনীতিতে নাম লেখানো। তারপরে পেরিয়ে গিয়েছে অনেকগুলি বছর। তিনি এখন সাংসদ। পুরোদমে রাজনীতি করছেন। তবে তার মধ্যেও ফের সেই শিকড়ের কাছে ফেরার হাতছানি। নতুন ছবি মুক্তির আগে, নিজের সিনেমায় ফেরা নিয়ে কথা বললেন শতাব্দী রায় (Satabdi Roy)। 

কেন এতদিন পরে অভিনয়ে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেন সাংসদ অভিনেত্রী? শতাব্দী বলছেন, 'একটা সময় মনে হয়েছিল, একটু বিরতি দরকার। তাই অভিনয় থেকে সরে গিয়েছিলাম। তবে সরে যাওয়ার পরেও ওই জীবনটা মিস করি খুব। মৈনাক যখন এই চিত্রনাট্যটা নিয়ে এল, দেখলাম আমার সুবিধা মতো ডেট পড়ছে, তখন রাজি হলাম। আসলে এখন আমার সুবিধা মতো ডেট পড়াটা ভীষণ জরুরি। আমার এখন অন্যান্য কাজ ও তো থাকে। এই ছবিটা সবদিক থেকে মিলে গেল। আর চিত্রনাট্য পেয়ে আমি হিসেব করি যে এই ছবিটা করলে, কতজন চিনবে আমায়? ফ্লপ হলে কি হবে... হিট হলে কী হবে? সেই জায়গা থেকে মৈনাক পরিচিত পরিচালক। আর এখন শ্যুটিংয়ের দিনও খুব কমে গিয়েছে। সব মিলিয়ে রাজি হয়ে গেলাম।'

যদি শতাব্দী বিরতি না নিয়ে পেশাগতভাবে অভিনয়টাই করে যেতেন, তাহলে টলিউডের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো আরও ভিন্ন ভিন্ন ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেতেন। আফশোস হয়? অভিনেত্রী বলছেন, 'আফশোস হয়। এখন ছবির ফরম্যাট পাল্টে গিয়েছে। আগে তারকা হত, এখন ছবির বিষয়বস্তুই তারকা। ছবিতা তারকা থাকবে মানেই যে ছবি হিট হবে এমনটা নয়। এখন শুধুই বিষয়বস্তু আর টেকনোলজির ওপরেই সবটা নির্ভর করে। তবে এখন মানুষের ধৈর্য্য এত কমে গিয়েছে যে কোনও শিল্পই খুব কঠিন। মানুষের আর দেখার ধৈর্য্য নেই। তবে বিরতি না নিলে আমি আরও অনেক কাজ করতে পারতাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমায় পাল্টানোর সুযোগ দেওয়া হত। পরিচালকের মতো করে ছবি করতে পারতাম। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তো মানুষের অভিজ্ঞতাও বাড়ে। আমায় যদি আবার গুরুদক্ষিণা করতে বলা হয়, তাহলে বয়সের দিক দিয়ে হয়তো আমায় মানাবে না, কিন্তু অভিনয়টা আরও ভাল হবে। গতকাল আমি যে অভিনয়টা করেছি, সেটা আজ করলে আরও ভাল হবে। এখন তো ৩-৪ জন বাচ্চা হয়ে গেলেও তিনি নায়িকা হতে পারছেন। এখন সমাজ পাল্টে গিয়েছে। কিন্তু আমাদের সময় বিয়ে হয়ে গেলে আর নায়িকা হত না। কিন্তু একটা মেয়ের বিয়ে হলে, বাচ্চা হলে সে সম্পূর্ণ হয়। তার পরিণতিবোধ আসে। সে তখন আরও বেশি ভাল কাজ করতে পারে। সেই সুযোগটা আমাদের কাছে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তখন আমায় বলা হত ক্যামেরায় দাঁড়াও, আমি দাঁড়ালাম। বলল হাসো, আমি হাসলাম। নিজের বুদ্ধি ব্যবহার করার কোনও জায়গা ছিল না। এখন আমায় বললে আমি ভাবব যে এখানে কী হাসি ব্যবহার করা উচিত। আবার সেই বুদ্ধিটা তখন ছিল না বলেই হয়তো ইতিবাচক হয়েছিল কাজটা। এখনকার বুদ্ধি নিয়ে কাজ করলে আমি জিরো হতাম। এই সময়টা যদি আমি নিয়মিতভাবে কাজ করতে পারতাম, তাহলে আরও নানারকম কাজ করতে পারতাম। সেটা আমার জন্য হয়তো ভাল হত। অভিনেত্রী শতাব্দী রায়ের জন্য ভাল হত। কিন্তু আমি মনে করি, জীবন একটা। জীবনে অনেক কিছু করার আছে। অনেক কিছু করলে মনে হবে, একটা জীবনে অনেক কিছু করে নিয়েছি।'