মুম্বই: হরিয়ানার ছেলে মুম্বইয়ে এসেছিলেন স্বপ্নপূরণে। গল্প মনে হলেও, সত্য সতীশ কৌশিকের কাহিনি (Satish Kaushik Demise)। রক্ষণশীলতার জালে বাঁধা পড়া তো দূর, সামাজিক রীতি-নীতির পরোয়াই করেননি কখনও। অভিনেতা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার সতীশ পেশাদার জীবনে কোন উচ্চতা ছুঁয়েছিলেন, তা নিয়ে বিচার-বিবেচনার অবকাশ থাকলেও, মানুষ সতীশ কৌশিককে নিয়ে কোনও ধন্দ থাকে না মনে। মানুষ হিসেবে তিনি কত বড় মনের অধিকারী ছিলেন, সে কথা জানা যায় তাঁর সতীর্থদের কাছ থেকেই (Bollywood Updates)।
অভিনেত্রী নীনা গুপ্ত (Neena Gupta) নিজের আত্মজীবনী ‘সচ কহুঁ তো’-তে বন্ধু সতীশের মহানুভবতার কথা তুলে ধরেছেন। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সমাজের দরজা যখন তাঁর মুখের উপর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় সবকিছু উপেক্ষা করে সতীশ তাঁর হাত ধরতে চেয়েছিলেন বলে জানান নীনা। একেবারে নিঃস্বার্থ ভাবেই সতীশ তাঁর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বলে আত্মজীবনীতে লিখেছেন নীনা।
কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিভ রিচার্ডসের সঙ্গে নীনার সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। বিবাহিত ভিভের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে এমনিতেই তখন নিত্যদিন গসিপ ম্যাগাজিনের খোরাক নীনা। ভিভের সন্তানধারণের পর তাঁকে নিয়ে শুরু হয় আরও কাটাছেঁড়া। নীনার সিদ্ধান্ত নিয়েই শুধুমাত্র প্রশ্ন ওঠেনি সেই সময়, কৃষ্ণাঙ্গ ভিভের সন্তানও কি কৃষ্ণবর্ণ হবে, এই প্রশ্নও উঠতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: Satish Kaushik Death: প্রয়াত পরিচালক সতীশ কৌশিক, প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর খবর জানালেন অনুপম খের
কিন্তু সমালোচনা থেকে বাঁচতে বাড়িতে বসে থাকার উপায় ছিল না নীনার। নিজের পেট তো বটেই, আগত সন্তানের জন্যও রোজগার চালিয়ে যেতে হতো। তাই সব হজম করেই শ্যুটিংয়ে যেতেন। সেই সময় সতীশ তাঁর হাত ধরতে চেয়েছিলেন বলে জানান নীনা। তিনি জানিয়েছেন, একবার শ্যুটিংয়ে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেন সতীশ। সতীশ নীনাকে বলেন, “তোমার সন্তান যদি কৃষ্ণবর্ণের হয়, চিন্তার কিছু নেই। বলে দিও আমার সন্তান। আমরা বিয়ে করে নেব। কারও প্রশ্ন তোলার অবকাশ থাকবে না।”
ভিভের সঙ্গে সম্পর্কের খুঁটিনাটিও নীনা নির্দ্বিধায় সতীশের সঙ্গে আলোচনা করতেন। দীর্ঘদিনের বন্ধু তাঁরা। নীনাকে নিয়ে একবার প্রশ্ন করা হয় সতীশকে। তাঁর উত্তর ছিল, “তখনকার দিনে বিয়ে না করে সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না মোটেই। সাহসের জন্যউ নীনাকে কুর্নিশ জানাতে হয়। বন্ধু হিসেবে ওঁর পাশে ছিলাম। আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলাম ওঁকে। নীনার আত্মজীবনীতে যআ পড়েছেন, তা ওঁর প্রতি আমার স্নেহই। ওঁকে একা বোধ করতে দিতে চাইনি। আমার কথা শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন নীনা। কিন্তু তাতে আমাদের বন্ধুত্ব আরও গাঢ়ই হয়েছে।”
তবে শুধু নীনাই নন, বিপদের সময় বলিউডে এমন বহু শিল্পীর পাশেই থাকতে দেখা গিয়েছে সতীশকে। ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের সঙ্গে বিচ্ছেদ, একের পর এক মামলায় নাম জড়িয়ে যখন বিধ্বস্ত সলমন খান, সেই সময় সতীশই তাঁকে ‘তেরে নাম’ ছবি উপহার দেন। বাকিটা ইতিহাস।