নয়াদিল্লি : বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক ম্যাজিশিয়ান তিনি। তাঁর অনন্য সৃষ্টি পাঁচালি,  বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইল স্টোন৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অপু-দুর্গাকে সেলুলয়েডের পর্দায় তুলে ধরেছিলেন সত্যজিৎ রায় ৷ ২৬ অগাস্ট, ১৯৫৫ সালে কলকাতার দুটি প্রেক্ষাগৃহে প্রথম প্রদর্শিত হয় সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালি৷  আজ সেই কিংবদন্তী স্রষ্টার জন্মদিন। 


রায়ের সিনেমাটোগ্রাফির প্রযুক্তিতে অপ্রাসঙ্গিক বা এলোমেলো কিছু নেই: কুরোসাওয়া


   ১৯৫৫ র ৩ মে নিউ ইয়র্কের মিউজিয়ম অব মডার্ন আর্টে প্রথম প্রদর্শিত হয় 'পথের পাঁচালী'।


১১টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্ত এই ছবি প্রশংসা কুড়িয়ে নেয় আন্তর্জাতিক স্তরেও। 'পথের পাঁচালী'তে মুগ্ধ ছিলেন কিংবদন্তী জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়া । বুঁদ হয়েছিলেন সত্যজিতের এই কালজয়ী সৃষ্টিতে।


কিংবদন্তী পরিচালক বলেছিলেন, “মানবজীবনের প্রতি গভীর পর্যবেক্ষণ ছিল তাঁর। ছিল উপলব্ধি , ভালবাসা, যা তাঁর সমস্ত চলচ্চিত্রের বৈশিষ্ট্য, যা আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। … আমি অনুভব করি, তিনি চলচ্চিত্র শিল্পের একজন "মহীরুহ" (জায়ান্ট) ... সত্যজিৎ-এর সিনেমা না দেখার অর্থ হল সূর্য বা চাঁদ না দেখে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা" । satyajitray.org - এ এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। 


কুরোসাওয়া আরও বলেছিলেন ( Ekshan magazine in 1987 - এর রিপোর্ট অনুসারে),  “এই ছবি (পথের পাঁচালী) দেখার পর আমি যা উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম, তা কখনওই ভুলব না।  এটি এমন ধরনের এক সিনেমা, যা একটি  নদীর মতোই নির্মল, যার বহমানতায় আভিজাত্য রয়েছে” । 


তিনি আরও বলেছিলেন, সত্যজিৎ রায়ের সিনেমাটোগ্রাফিতেকখনও "অপ্রাসঙ্গিক বা এলোমেলো" কিছু ছিল না ।bসেটাই তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য। 


কুরোসাওয়ার কথায় “মানুষ জন্মায়, জীবন কাটায় এবং তারপর


মৃত্যুকে মেনে নেয়। ন্যূনতম প্রচেষ্টা ছাড়াই এবং কোনোও আকস্মিক ধাক্কা ছাড়াই, সত্যজিৎ  ছবি আঁকেন, দর্শকদের মধ্যে গভীর আবেগ জাগিয়ে তোলে। কীভাবে তিনি এটা করেন? তার সিনেমাটোগ্রাফিক কৌশলে অপ্রাসঙ্গিক বা এলোমেলো কিছু নেই। এটাই ওঁর শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য” । 


বাংলা  তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের গতিপথ বদলে গিয়েছিল তাঁর হাত ধরে। সত্যজিত ছিলেন শতাব্দীর সেরা চলচ্চিত্রকার যিনি ভারতকে অস্কার এনে দিয়েছিলেন। তাঁর দেখানো পথে এখনও এগিয়ে চলেছে বাংলা ছবি ।১৯৯২ সালে, অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস সত্যজিৎ রায়কে সাম্মানিক অস্কারে সম্মানিত ( Honorary Oscar Award) করে, যা তিনি অসুস্থতার কারণে ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করতে যেতে পারেননি।