কলকাতা: সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) নিও-রিয়ালিস্ট ক্লাসিক, 'পথের পাঁচালী' ('Pather Panchali') হল একমাত্র ভারতীয় সিনেমা যা ১১৭ বছরের পুরনো 'ভ্যারাইটি' ('Variety') ম্যাগাজিনের প্রথম '১০০ সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র'-এর ('100 Greatest Movies Of All Time') তালিকায় স্থান পেয়েছে।


'ভ্যারাইটি'র সর্বকালের সেরা ছবির তালিকায় 'পথের পাঁচালী'


তালিকাটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই তালিকা 'শোবিজ' শব্দটি উদ্ভাবনকারী ম্যাগাজিনের ৩০ জনেরও বেশি সম্পাদক এবং লেখক দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে লন্ডন-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্বাহী সম্পাদক মনোরি রবীন্দ্রন এবং রজনীকান্তের জীবনীকার ও 'ভ্যারাইটি' কনট্রিবিউটর নমন রামচন্দ্রনও রয়েছেন।


আলফ্রেড হিচককের মাস্টারপিস, 'সাইকো' (১৯৬০) তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই তালিকার প্রথম পাঁচটি সিনেমা হল 'দ্য উইজার্ড অফ ওজ' (১৯৩৯), 'দ্য গডফাদার' (১৯৭২), 'সিটিজেন কেন' (১৯৪১) এবং 'পাল্প ফিকশন' (১৯৯৪)। এছাড়াও একাধিক স্মরণীয় ক্লাসিক যা প্রতিটি সম্মানীয় ফিল্ম ইনস্টিটিউটের পাঠ্যসূচিতে রয়েছে যেমন, চার্লি চ্যাপলিনের 'সিটি লাইটস' থেকে 'ক্যাসাব্লাঙ্কা', 'দ্য রুলস অফ দ্য গেম', 'সিঙ্গিং ইন দ্য রেইন', 'অল অ্যাবাউট ইভ', 'ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ' এবং 'সেভেন সামুরাই'ও রয়েছে তালিকায়।


তালিকাটিকে একটি সংগ্রহের বস্তু করে তোলে যা, তা হল এতে প্রত্যেক সিনেমার মুক্তির সময় 'ভ্যারাইটি' দ্বারা হওয়া রিভিউর একটি লিঙ্ক দেওয়া রয়েছে, যাতে অ্যান ব্যানক্রফ্ট-ডাস্টিন হফম্যান ক্লাসিক 'দ্য গ্র্যাজুয়েট' থেকে 'এলিয়েন' (১৯৭৯), স্টিভেন স্পিলবার্গের 'ইটি. দ্য এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল' (১৯৮২) দ্বিতীয় 'স্টার ওয়ার' সিনেমা, 'দ্য এম্পায়ার স্ট্রাইকস ব্যাক' (১৯৮০) এবং স্ট্যানলি কুব্রিকের '২০০১: এ স্পেস ওডিসি' (১৯৬৮), 'গন উইথ দ্য উইন্ড' (১৯৩৯), 'সাইলেন্স অফ দ্য ল্যাম্বস' (১৯৯১), লরেন্স অফ আরাবিয়া (১৯৬২), কিং কং (১৯৩৩), 'মাই বেস্ট ফ্রেন্ডস ওয়েডিং' (১৯৯৭) এবং জেমস বন্ড মুভি 'গোল্ডফিঙ্গার' (১৯৬৪) এর মতো ব্লকবাস্টার রয়েছে।


আরও পড়ুন: Women Performances: আলিয়া-শেফালি-বিদ্যা, ২০২২ সালের শক্তিশালী ও নজরকাড়া নারী চরিত্ররা


কেন তাঁরা 'পথের পাঁচালী' (৫৫ নম্বরে) অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাঁদের তালিকায়? সেই বিষয়ে জুরির তরফে বলা হয়েছে, 'রিচার্ড লিংকলেটারের 'বয়হুড'-এর অনেক আগে, সত্যজিৎ রায়ের দুর্দান্ত গতি এবং কাঠামোর 'অপু ট্রিলজি' আসে, যা আগামী সমস্ত 'কামিং-এজ' গল্পের শুরু। সংযত কিন্তু সকলের সঙ্গে সম্পর্কিত, বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতার আত্মপ্রকাশ এই ট্রিলজির হাত ধরে প্রথম, যা ভারতীয় সিনেমাকে আন্তর্জাতিক শিল্পের মানচিত্রে স্থান করে দেয়। ইতালীয় নিওরিয়ালিজমের একটি আঞ্চলিক সংস্করণের মতো, সহজাত মানবতাবাদী 'পথের পাঁচালী' বিস্ময়-অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বহন করে, যা ছবির তরুণ নায়কের মুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রতিফলিত হয়।' তাঁদের কথায়, রেললাইন ধরে ছুটে চলে যাওয়া ট্রেনকে ধাওয়া করা বা বৃষ্টিকে মন খুলে উপভোগ করা, এই দৃশ্যগুলি সত্যিই হৃদয়কে পুষ্ট করে। 


একই নামে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১৯২৯ সালের উপন্যাস নিয়ে তৈরি এই ছবিতে ছিল না কোনও তারকা, এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজনা করেছিলেন খুব টানটান বাজেটে। ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পায় এটি, ১৯৫৬ সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এটিকে 'বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


সেই সময় ছবিটি সম্পর্কে 'ভ্যারাইটি' বলে, 'ছবিটি, কাব্যিক ও গীতিগত দিক থেকে ভারতের আগামী প্রজন্মের জন্য একটি নরম কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী গল্প বলে। দারিদ্র্যের দেশ কিন্তু আধ্যাত্মিক আশার দেশ। দুই কিশোর, একটি ছেলে এবং তার দিদি এই পরিবেশে বড় হয়। সিনেমাটি ছবি নির্মাণের সমস্ত দিককে একটি চলমান গল্পে পরিণত করে যা প্রথমবারের মতো পশ্চিমি দর্শকদের কাছে ভারতকে উপলব্ধি করায়।'