কলকাতা: রাজস্থান থেকে কাশী... তিনি ছিলেন বাবার ছায়াসঙ্গী। রেইকি থেকে শুরু করে এডিটিং... বাবার থেকে শিখতেন, পড়তেন, জানতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, মানিকের ছোঁয়া পেয়ে তিনিও যে কখন আরও এক রত্ন হয়ে উঠেছেন, সে কথা বুঝতে পারেননি তিনি নিজেই। সন্দীপ রায় (Sandip Roy) সত্যজিৎ রায়ের পুত্র (Satyajit Roy)। যে কিংবদন্তি নিজে রুপোলি পর্দায় সৃষ্টি করেছেন একের পর এক ইতিহাস, ছেলের প্রথম ছবি মনে ধরেনি তাঁর!


সন্দীপ রায়ের তৈরি প্রথম ছবি ছিল 'ফটিকচাঁদ'। এবিপি লাইভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিংবদন্তি পুত্র ভাগ করে নিয়েছিলেন বাবাকে তাঁর প্রথম ছবি দেখানোর অভিজ্ঞতা। সন্দীপ রায় বলছেন, 'আমি 'ফটিকচাঁদ' নিয়ে বাবার থেকে প্রশংসা পাইনি। প্রথমে এডিটিং করে ছবিটা ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটে দাঁড়ায়। বাবা ফার্স্ট কাট দেখে আমায় বলেন, 'আমার চিত্রনাট্য অনুযায়ী এই ছবি পৌনে ২ ঘণ্টার বেশি হওয়া উচিত নয়। তোমার ছবি ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট হয়ে গিয়েছে। আমি বলব না কোথায় কী কাটতে হবে। তুমি কাজ করো, তারপরে আমি আবার দেখব।' আমরা আবার এডিটিং শুরু করলাম। তারপরে একটা অদ্ভুত বিস্ময়কর ব্যাপার হল। এডিট করে আমরা যখন সময় দেখছি, দেখলাম ঠিক পৌনে ২ ঘণ্টাই ছবিটা হয়েছে। বাবা দেখলেন, তারপর বললেন, আমায় মিউজিকের সময়গুলো দাও আমি কম্পোজ করব। বাবার প্রশংসা পেতে আমায় অপেক্ষা করতে হয়েছিল আগামী ছবিটার জন্য।'


আগামী ছবি 'গুপী বাঘা ফিরে এল'। সেই ছবি প্রাণ ঢেলে বানিয়েছিলেন সন্দীপ রায়। তারপরে বাবাকে দেখানোর পালা। পরিচালক বলছেন, 'গুপী বাঘা ফিরে এল' ছবির শ্যুটিং, ফুটেজ কিছুই বাবা দেখেননি। আমার কাছে এই ছবিটা বেশ কঠিনই ছিল। প্রথম ২টো জবরদস্ত ছবি বাবা করে ফেলেছেন ততদিনে। গুপী গাইন বাঘা বাইন তো ঐতিহাসিক ছবি। ছবি তৈরি, এডিটিং সবটা করে আমি বাবাকে বললাম, 'ছবিটা তুমি দেখো'। বাবাকে ছবি দেখানোর মাঝখানে আমি একটা ইন্টারভ্যালের পরিকল্পনা করেছিলাম। মনে হয়েছিল, সেইসময় ছবি থামিয়ে বাবাকে প্রশ্ন করব যে বাকিটা কি তুমি দেখবে নাকি.... সেই মতো সিনেমা চালু হল। আমরা পিছনের সিটে বসে টেনশনে নখ খাচ্ছি কার্যত। থামল অর্ধেক পথে। আলো জ্বলে উঠল। বাবা বললেন... 'কী হল.. থামালে কেন?' আমি প্রশ্ন করাতেই বাবা বাধা দিয়ে বললেন.. 'না না বাকিটা এখনই চালাও।' তখনই বুঝেছিলাম, ছবিটা ওঁর মনে ধরেছে। ছবিটা শেষ হওয়ার পরে বাবা বললেন.. 'লেঙথ দাও, মিউজিক করব'। আর কিচ্ছু বললেন না। এতদিন বাবার সঙ্গে কাজ করছি। অনেক জিনি, না বলাই থেকে যায়। ওঁর কিছু না বলা দেখে বুঝেছিলাম, ছবিটা হয়তো উৎরে গিয়েছে। সেই কিছু না বলাটাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রশংসা। পরে শুনেছি, উনি অনেককে বলেছেন, ছবিটা ভাল হয়েছে।'


আরও পড়ুন: Aloe Vera: গরমের মরসুমে ত্বকের কী কী সমস্যা দূর করে অ্যালোভেরা? কীভাবে কাজে লাগাবেন?