মুম্বই: তিনি কোনওদিন ভাবেননি অভিনেতা হবেন। বরং ঝোঁক ছিল খেলাধুলোয়। কিছুটা আকস্মিকভাবেই অভিনয়ের জগতে প্রবেশ। সেই কাহিনি শোনালেন শাহরুখ খান। সেই সঙ্গে জানালেন, কীভাবে সংসারের জন্য তাঁর বাবাকে লড়াই করতে হয়েছিল।



মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারান শাহরুখ। তাঁর ওপর বাবা মীর তাজ মহম্মদ খানের প্রভাব ছিল বিপুল পরিমাণে। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে শাহরুখ নিজেই সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, 'বাবা কোনওদিন বলেননি যে, ভবিষ্যতে আমার কী করা উচিত। বলার সুযোগও পাননি। কারণ আমার যখন ১৫ বছর বয়স, তখনই ওঁর মৃত্যু হয়। তবে কয়েকটা কথা উনি বলতেন, যা আমার আজও মনে আছে। বলতেন, যা ভাল লাগবে তাই করবে। পাশাপাশি বলতেন, কাজ কোরো। তবে কিছু না করলেও অসুবিধা নেই কারণ যারা কিছুই করে না তারা কামাল করে।' শাহরুখ যোগ করেন, 'উনি বলতেন, হকি অবশ্যই খেলো। উনি নিজে হকি খেলতেন। আমিও হকি খেলতাম। ভাল না খেললেও খেলতাম। খেলাধুলোয় ভীষণ উৎসাহ দিতেন।'



শাহরুখকে জিজ্ঞেস করা হয়, তাঁর প্রয়াত বাবা কী করতেন? শাহরুখের সহাস্য জবাব, 'কামাল করতেন। আইনজীবী ছিলেন, কিন্তু প্র্যাক্টিস করেননি কারণ ওঁর মনে হয়েছিল সেটা ঠিক নয়। ভারতের কনিষ্ঠতম স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তাম্রপত্র পেয়েছিলেন। ১৪-১৫ বছর বয়সে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জেল খেটেছিলেন। মৌলানা আব্দুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন। তারপর আসবাবপত্রের বড় ব্যবসা শুরু করেন। সেটা ব্যর্থ হয়েছিল। ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা শুরু করেন। সেটাও মুখ থুবড়ে পড়ে। রেস্তোরাঁ করলেন। সেটাও চলল না। তারপর দিল্লির ওয়েলিংটন হাসপাতালের পিছনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছোট কিয়স্ক দেওয়া হতো। সেইরকম একটা কিয়স্কে উনি চা বিক্রি করতেন।'


আরও পড়ুন: Ballabhpurer Rupkotha Exclusive: 'বল্লভপুরের রূপকথা'-র সেটে ছিল ভূতের ঘর, সরানো যায়নি রহস্যময় সিন্দুক!



শাহরুখ জানিয়েছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামী হলেও কোনও সুবিধা নেননি তাঁর বাবা। কিং খান বলেন, 'বাবা রাজনীতিতে যোগ দেননি। সৎ ছিলেন। শেষ বয়সে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় মেস চালাতেন।' সেখানেই অভিনয়ের জগতের সন্ধান পান ছোট্ট শাহরুখ। তাঁর কথায়, 'অদ্ভুত কারণে আমি অভিনেতা হয়ে গিয়েছিলাম। আমার পরিবারের কেউ অভিনয়ের জগতে নেই। আমিও কখনও ভাবিনি অভিনেতা হব। আমি দিল্লির গোলমার্কেটে কলম্বাস স্কুলে পড়তাম। আর বারাখাম্বা রোডে মর্ডার্ন স্কুলে দিদিকে নিতে যেতাম। সাড়ে তিনটে-চারটে নাগাদ ওর ছুটি হতো। তার আগে একটা থেকে চারটে পর্যন্ত আমি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায় বসে থাকতাম। সেখানে আমাদের দেশের মহান সব অভিনেতারা থাকতেন। রোহিনী হাতাঙ্গিরি, রাজেশ বিবেক, সুরেখা সিক্রি, রাজ বব্বর, অজিত ভাচানি, রঘুবীর যাদব। আমাকে সকলে খুব ভালবাসতেন। স্নেহ করতেন। কোলে বসে 'সূরজ কা সাতবা ঘোড়া দেখেছিলাম'। সব বড় অভিনেতাদের কাছ থেকে দেখেছি। তাঁদের রিহার্সাল দেখেছি। তাঁদের সঙ্গে রিহার্সাল করেছি। সেখান থেকেই অভিনয়ের হাতেখড়ি।'